চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়-ক্যাম্পাসে সহিংসতা কাম্য নয়

আবারও অশান্ত হয়ে উঠল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের দুই কর্মীর মধ্যকার সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে বেড়ে ওঠা সংঘাতে নিহত হলেন দুই শিক্ষার্থী। নিহত দু'ছাত্রই ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত।


আর এ আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন নয়, বরং অস্ত্রবাজি ও দখলদারিত্ব। সেখানে ছাত্রশিবিরের আধিপত্য এমনই অসহনীয় পর্যায়ের যে মুক্তচিন্তার কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করাই কষ্টকর। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিবিরের অস্ত্রবাজির কারণে একে শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। শিবিরের আধিপত্যের এমন একটি অসহনীয় পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংগঠনটিকে অপছন্দ করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক ধরনের নীরব প্রতিবাদও সেখানে আছে। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতার বদল হলেও ছাত্রশিবিরের এ আধিপত্যের রাশ টেনে ধরতে কেউই সক্ষম হয়নি। ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজি ও শক্তি প্রয়োগের এ প্রবণতা বন্ধ করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি ছিল। কিন্তু তা কোনোকালেই ঘটেনি। কেন ঘটেনি এ প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া দরকার। ছাত্রশিবিরই শুধু নয়, ছাত্রলীগসহ মূলধারার দলগুলোও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টায় সক্রিয়। এমন একটি পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হলেন দু'জন ছাত্র। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ অবশ্যই বাহবা পেতে পারে না, বরং তীব্র নিন্দাই তাদের প্রাপ্য। ক্যাম্পাসে হত্যা ও রক্তপাত কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। শিবিরের অস্ত্র ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইলে কখনোই তা অস্ত্রের সাহায্যে হতে পারে না। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন নিয়ে ছাত্রলীগসহ অন্য সংগঠনগুলো যদি প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে পারত তবে সেটিই হতো গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগের কর্মীরা যেভাবে বেপরোয়া অস্ত্রের ব্যবহার করছে তা উদ্বেগজনক। শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি ছাত্রলীগের কারণে বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে। এর অস্ত্রবাজির রাশ টেনে ধরা দরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের পাশাপাশি ছাত্রশিবিরও অস্ত্রসজ্জিত মারমুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে উভয় সংগঠনকে নিরস্ত্র করা দরকার। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সংগঠনেরই ক্যান্টনমেন্ট গড়ে উঠতে পারে না। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থাকলে তা তদন্ত হওয়া দরকার। অবিলম্বে ক্যাম্পাসকে অস্ত্র ও দখলমুক্ত করার উদ্যোগ আসা দরকার। শিক্ষার্থীদের মতাদর্শ থাকতেই পারে, তারা সে মতাদর্শের চর্চাও করতে পারেন। কিন্তু মতাদর্শ কায়েমের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হতে পারে না। তাই আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষগুলো সক্রিয় হবে। হত্যার যে দুঃখজনক উদাহরণ তৈরি হলো তার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তি দেওয়াও জরুরি পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.