নতুন নির্বাচন কমিশন-গুরুদায়িত্ব, কঠিন কাজ
নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বৃহস্পতিবার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বলেছেন, 'সংবিধান রক্ষার শপথ নিলাম, এটা কঠিন কাজ এবং গুরুদায়িত্ব। তবে আমরা প্রস্তুত।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই দিন বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকাকালে এত উদারভাবে নির্বাচন কমিশন আগে গঠিত হয়নি।
রাষ্ট্রপতি সংলাপ আয়োজন করেছেন এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশের আলোকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আরও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে একই দিনে বিএনপি চেয়ারপারসন এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার মন্তব্যও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেছেন, 'নতুন নির্বাচন কমিশন মহাজোট সরকারের আজ্ঞাবহ এবং বিএনপি এ কমিশন মানে না। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে।' বিএনপি একটি জনসমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে ফয়সালা দাবি করেছিল। সম্ভবত বিএনপি এবং চারদলীয় জোটের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা থেকেই নতুন সিইসি 'গুরুদায়িত্ব ও কঠিন কাজের' কথা বলেছেন। দেশবাসীর জন্য গভীর সন্তোষের বিষয় যে, ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তনের ধারা চালু হয়েছে। স্বচ্ছতার ইস্যুতে প্রতিটি নির্বাচনে পরাজিত পক্ষের কিছু অভিযোগ থাকলেও দেশ-বিদেশে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর কৃতিত্ব একদিকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এবং একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনগুলোর। কিন্তু মহাজোট সরকারের আমলে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রদ হয়েছে। নতুন কোনো সংশোধনীর মাধ্যমে এর পরিবর্তন সাধিত না হলে ২০১৩ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনেই হওয়ার কথা। এ অবস্থায় সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এটা মোকাবেলায় সর্বাগ্রে প্রয়োজন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো। কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার পূর্ণ কর্তৃত্ব চাওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার বন্ধে জনগণের ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু তার প্রতি সম্মান জানানোর দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। কমিশন যতই তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করুক না কেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন না করা এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাই মুখ্য থাকে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা থাকলে এ লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়ে যায়। দুর্ভাগ্য যে, এ বিষয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবের মিল সামান্যই। নির্বাচন কমিশন যতই আন্তরিক হোক না কেন, দলগুলো সহযোগিতা না করলে তাদের অনেক ক্ষেত্রে অসহায় দর্শক হয়ে থাকতে হয়। তবে এটাও ঠিক যে, ইচ্ছা থাকলে উপায় বের করা সম্ভব হয়। বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা এবং তার যোগ্য সহকর্মী নির্বাচন কমিশনাররা এর দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ছাড়াও গত তিন বছরে রাজনৈতিক সরকারের আমলে তারা বিপুলসংখ্যক ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনোটিরই নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। নতুন নির্বাচন কমিশন পূর্বসূরিদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে পথ চলবে এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলভাবে সম্পন্ন করবে, এটাই কাম্য।
No comments