মদিনা সনদ :সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দলিল by আ ফ ম খালিদ হোসেন
এই সনদের ফলে, বহুধা বিভক্ত মদিনাবাসীর গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি নাগরিকের সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কর্তব্যের সীমারেখা নির্ধারিত হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ইহুদিদের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও রাজনৈতিক সমীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার মাধ্যমে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক চুক্তি সম্পাদন করেন,
যা ইতিহাসে 'মদিনা সনদ' নামে পরিচিতি লাভ করে। এটাই ইতিহাসে লিখিত প্রথম সংবিধান। ৪৭টি ধারাসম্পন্ন এ সনদের প্রধান দিকগুলো হলো_
১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২. হজরত মোহাম্মদ (সা.) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকারবলে তিনি মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।
৩. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৪. কেউ কুরাইশদের সঙ্গে কোনো প্রকার সন্ধি স্থাপন করতে পারবে না, কিংবা মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কুরাইশদের সাহায্য করতে পারবে না।
৫. স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করবে।
৬. বহিঃশত্রুর আক্রমণে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলো স্ব-স্ব যুদ্ধ-ব্যয়ভার বহন করবে।
৭. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে; এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দোষী করা চলবে না।
৮. মদিনা শহরকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো এবং রক্তপাত, হত্যা, বলাৎকার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।
৯. অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।
১০. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
১১. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
১২. মহানবীর (সা.) পূর্ব অনুমতি ব্যতীত মদিনাবাসী কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে হজরত (সা.) আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা দেবেন।
এই সনদের ফলে প্রথমত, বহুধা বিভক্ত মদিনাবাসীর গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়ত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি নাগরিকের সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কর্তব্যের সীমারেখা নির্ধারিত হয়। তৃতীয়ত, স্বদেশত্যাগী মুহাজিরিনদের মদিনায় বাসস্থান ও জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থা হয়। চতুর্থত, মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে মৈত্রী, সদ্ভাব ও পরস্পরের সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পঞ্চমত, মদিনায় ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ধর্ম প্রচার ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। স্পষ্টত, এটা গোত্রভিত্তিক আরববাসীকে ধর্ম ও রাজনীতির ভিত্তিতে নতুন আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করে। ষষ্ঠত, এই চুক্তি সম্পাদনকারী সব মানুষের জানমাল-ইজ্জতের নিরাপত্তার গ্যারান্টি প্রদান করা হয়। সপ্তমত, বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী, ভাষা ও আঞ্চলিকতার ঊধর্ে্ব এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃসমাজ, এক উম্মাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তির ফলে মদিনায় নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব হলো এবং রাসূলুল্লাহকে (সা.) মুসলিম ও অমুসলিম উভয় পক্ষ থেকে এই নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান স্বীকার করে নেওয়া হলো। রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ গঠনের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল। অষ্টমত, এই চুক্তির বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) আইন, বিচার, প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো নিজের ও মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত করে দেন। নবমত, এই চুক্তি জুলু্ম, বৈষম্য, অবিচার এবং এই প্রকৃতির অন্যান্য গর্হিত বিষয়ের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়। আরববাসীর ব্যক্তিগতভাবে খুনের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রাচীন পদ্ধতির পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বিষয়টিকে একটি সম্মিলিত কর্তব্যরূপে সাব্যস্ত করা হয়। দশমত, প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম মুরের বক্তব্য অনুসারে এই চুক্তির কল্যাণে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মহান পরিকল্পনাবিদ ও পরিচালকরূপে ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনায় বহুধা বিভক্ত, আদর্শ-বিশ্বাসে বিভিন্নমুখী ও পরস্পর থেকে চরম বিচ্ছিন্ন একটি জনগোষ্ঠীকে সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ করার সুকঠিন কাজটি একজন শ্রেষ্ঠ ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতো পরম দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে সম্পাদন করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন একটি রাষ্ট্র এবং এমন একটি জনসমাজ প্রতিষ্ঠার সাফল্য অর্জন করেন, যা ছিল আন্তর্জাতিক রীতিনীতির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত (ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ, আল-ওয়াছা'ইকুস সিয়াসিয়াহ ফিল আহ্দিন নববী, পৃ. ১৫-২১; ইবন হিশাম, সিরাতুন্নবী, ১খ, পৃ. ৫৫৪-৫৬১)।
ইতিহাস প্রমাণ করে, এই ঐতিহাসিক সনদ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবদমান কলহ ও অন্তর্ঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি, প্রগতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিবেশ সৃষ্টি করে। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ ও অঞ্চলপ্রীতি মানবতার শত্রু ও প্রগতির অন্তরায়। মদিনা সনদ এ দুষ্ট ক্ষতগুলো মুছে ফেলে এবং সামাজিক নিরাপত্তা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। সনদের প্রতিটি ধারা পর্যালোচনা করলে মহানবীর (সা.) মানবাধিকার ঘোষণার প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রতিভাত হয়। ১২১৫ সালের ম্যাগনা কার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইট, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার চৌদ্দশ' বছর আগে মানবতার ঝাণ্ডাবাহী মহানবী (সা.) সর্বপ্রথম মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার ঘোষণা করেন। পরস্পরবিরোধী ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে মহানবী (সা.) কর্তৃক সম্পাদিত এ সনদ সমগ্র মানবমণ্ডলী ও অখণ্ড মানবতার এক চূড়ান্ত উত্তরণ।
১. মদিনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
২. হজরত মোহাম্মদ (সা.) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকারবলে তিনি মদিনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।
৩. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায় বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে; কেউ কারও ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৪. কেউ কুরাইশদের সঙ্গে কোনো প্রকার সন্ধি স্থাপন করতে পারবে না, কিংবা মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কুরাইশদের সাহায্য করতে পারবে না।
৫. স্বাক্ষরকারী কোনো সম্প্রদায়কে বহিঃশত্রু আক্রমণ করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় বহিঃশত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করবে।
৬. বহিঃশত্রুর আক্রমণে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলো স্ব-স্ব যুদ্ধ-ব্যয়ভার বহন করবে।
৭. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হবে; এর জন্য অপরাধীর সম্প্রদায়কে দোষী করা চলবে না।
৮. মদিনা শহরকে পবিত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো এবং রক্তপাত, হত্যা, বলাৎকার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।
৯. অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার পাপী বা অপরাধীকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।
১০. ইহুদিদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
১১. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
১২. মহানবীর (সা.) পূর্ব অনুমতি ব্যতীত মদিনাবাসী কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
১৩. স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে হজরত (সা.) আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফয়সালা দেবেন।
এই সনদের ফলে প্রথমত, বহুধা বিভক্ত মদিনাবাসীর গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়ত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদি নাগরিকের সমান অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কর্তব্যের সীমারেখা নির্ধারিত হয়। তৃতীয়ত, স্বদেশত্যাগী মুহাজিরিনদের মদিনায় বাসস্থান ও জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থা হয়। চতুর্থত, মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে মৈত্রী, সদ্ভাব ও পরস্পরের সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও প্রীতির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পঞ্চমত, মদিনায় ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ধর্ম প্রচার ও প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। স্পষ্টত, এটা গোত্রভিত্তিক আরববাসীকে ধর্ম ও রাজনীতির ভিত্তিতে নতুন আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করে। ষষ্ঠত, এই চুক্তি সম্পাদনকারী সব মানুষের জানমাল-ইজ্জতের নিরাপত্তার গ্যারান্টি প্রদান করা হয়। সপ্তমত, বর্ণ-গোত্র-গোষ্ঠী, ভাষা ও আঞ্চলিকতার ঊধর্ে্ব এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃসমাজ, এক উম্মাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চুক্তির ফলে মদিনায় নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব হলো এবং রাসূলুল্লাহকে (সা.) মুসলিম ও অমুসলিম উভয় পক্ষ থেকে এই নতুন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান স্বীকার করে নেওয়া হলো। রাসূলুল্লাহর (সা.) জন্য আন্তর্জাতিক সমাজ গঠনের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল। অষ্টমত, এই চুক্তির বলে রাসূলুল্লাহ (সা.) আইন, বিচার, প্রতিরক্ষা ও প্রশাসনিক বিষয়গুলো নিজের ও মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত করে দেন। নবমত, এই চুক্তি জুলু্ম, বৈষম্য, অবিচার এবং এই প্রকৃতির অন্যান্য গর্হিত বিষয়ের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়। আরববাসীর ব্যক্তিগতভাবে খুনের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রাচীন পদ্ধতির পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে বিষয়টিকে একটি সম্মিলিত কর্তব্যরূপে সাব্যস্ত করা হয়। দশমত, প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম মুরের বক্তব্য অনুসারে এই চুক্তির কল্যাণে রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মহান পরিকল্পনাবিদ ও পরিচালকরূপে ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনায় বহুধা বিভক্ত, আদর্শ-বিশ্বাসে বিভিন্নমুখী ও পরস্পর থেকে চরম বিচ্ছিন্ন একটি জনগোষ্ঠীকে সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ করার সুকঠিন কাজটি একজন শ্রেষ্ঠ ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের মতো পরম দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে সম্পাদন করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন একটি রাষ্ট্র এবং এমন একটি জনসমাজ প্রতিষ্ঠার সাফল্য অর্জন করেন, যা ছিল আন্তর্জাতিক রীতিনীতির ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত (ড. মুহাম্মদ হামীদুল্লাহ, আল-ওয়াছা'ইকুস সিয়াসিয়াহ ফিল আহ্দিন নববী, পৃ. ১৫-২১; ইবন হিশাম, সিরাতুন্নবী, ১খ, পৃ. ৫৫৪-৫৬১)।
ইতিহাস প্রমাণ করে, এই ঐতিহাসিক সনদ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবদমান কলহ ও অন্তর্ঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সম্প্রীতি, প্রগতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের পরিবেশ সৃষ্টি করে। উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ ও অঞ্চলপ্রীতি মানবতার শত্রু ও প্রগতির অন্তরায়। মদিনা সনদ এ দুষ্ট ক্ষতগুলো মুছে ফেলে এবং সামাজিক নিরাপত্তা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে। সনদের প্রতিটি ধারা পর্যালোচনা করলে মহানবীর (সা.) মানবাধিকার ঘোষণার প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রতিভাত হয়। ১২১৫ সালের ম্যাগনা কার্টা, ১৬২৮ সালের পিটিশন অব রাইট, ১৬৭৯ সালের হেবিয়াস কর্পাস অ্যাক্ট, ১৬৮৯ সালের বিল অব রাইটস এবং ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার চৌদ্দশ' বছর আগে মানবতার ঝাণ্ডাবাহী মহানবী (সা.) সর্বপ্রথম মানুষের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার ঘোষণা করেন। পরস্পরবিরোধী ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে মহানবী (সা.) কর্তৃক সম্পাদিত এ সনদ সমগ্র মানবমণ্ডলী ও অখণ্ড মানবতার এক চূড়ান্ত উত্তরণ।
No comments