সীমান্তে গুলি বন্ধ করবে না ভারত!-বাংলাদেশের কঠোর অবস্থান নিতে হবে

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) অবন্ধুসুলভ আচরণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কূটনৈতিক অঙ্গনে হাসিনা-মনমোহন অথবা দীপু মনি-এসএম কৃষ্ণা যতই উষ্ণ সম্পর্কের পরিচয় দিন না কেন, মাঠপর্যায়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত একটি ভয়ানক এলাকায় পরিণত হয়েছে।


সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জীবননগর সীমান্ত থেকে গরু আনার জন্য অবৈধভাবে সীমানা পার হওয়ার চেষ্টার সময় বিএসএফ ছয় বাংলাদেশি কিশোরকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের সীমান্ত বিএসএফের ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। ধৃত এক কিশোর মুমূর্ষু অবস্থায় অতি কৌশলে পালিয়ে এলে তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ এ সম্পাদকীয় শেখার সময় পর্যন্ত মেলেনি। সাম্প্রতিককালে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলি করে হত্যা এবং ধরে নিয়ে যাওয়ার বা নির্যাতন করার ঘটনা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। এমনই পরিস্থিতিতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ইউ কে বনশল বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানো বন্ধ হবে না। সীমান্তে গুলি চালানো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানিয়েছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনোক্রমেই মেনে নেওয়া যায় না। বিএসএফের অস্ত্র প্রয়োগ বন্ধে প্রয়োজনে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে নালিশ জানাব।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যাদের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেহাত পেটের দায়ে গরু চোরাচালান বা পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। সেটা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অজানা নয়। এই চোরাচালান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় চলে আসছে। এ অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে শুধু বাংলাদেশিরাই যে জড়িয়ে আছে, তা নয়- সমান হারে ভারতীয় চোরাকারবারিরাও জড়িত। শুধুু তাই নয়, আমরা এটাও জানি যে, বিএসএফের অনেক সদস্য এ চোরাকারবারের ভাগও পেয়ে থাকেন। এসব অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বা চোরাকারবারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত দুটি দেশেই প্রচলিত আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। যারা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের সম্মুখীন করাই একটি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব, তাদের গুলি করে হত্যা করা নয়- বিশেষ করে রাষ্ট্র দুটির মধ্যে যখন উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে। এ অঞ্চলে যারা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দীর্ঘদিন সক্রিয় ছিল, তাদের বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সমূলে উৎপাটন করে ভারতের নিরাপত্তাকে অনেকটা সুনিশ্চিত করে দিয়েছে। বিএসএফ কি তারই পুরস্কার হিসেবে তুচ্ছ অপরাধীদের ওপর গুলি চালিয়ে বাংলাদেশকে মরদেহ উপহার দিচ্ছে? পৃথিবীর বহু দেশের সীমান্তে চোরাকারবার রয়েছে। একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকার মাদক চোরাকারবারিদের ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশের সীমান্তে এভাবে পণ্য চোরাকারবারিদের গুলি করে হত্যা করা হয় না। বিএসএফের প্রধান গুলি বন্ধ না হওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা শুধু অমানবিক আচরণের অংশই নয়, মধ্যযুগীয় মানসিকতারও প্রতিফলন। আমরা বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ জানাই। সেই সঙ্গে ভারতকে খতিয়ে দেখতে হবে এ ধরনের আচরণের পেছনে কোনো অশুভ নেপথ্য শক্তির হাত রয়েছে কি না, যারা দুই দেশের সম্পর্ক ভালো চোখে দেখে না।

No comments

Powered by Blogger.