বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা-মেলায় একুশের আবহ by আশীষ-উর-রহমান

বিকেল থেকে মেলার মঞ্চে আলোচনা হলো শহীদ মুনীর চৌধুরী নিয়ে। সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো তাঁর লেখা কবর নাটক। অভিনয়ে-আলোচনায় সৃষ্টি হয়েছিল অমর একুশের আবহ। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে খুব বেশি লোকসমাগম ছিল না মেলায়। ফলে যাঁরা বই কেনার জন্যই এসেছিলেন, তাঁরা স্টলগুলোর সামনে বেশ রয়েসয়ে যাচাই-বাছাই করে পছন্দের বইটি কিনতে পেরেছেন।


মেলা, না বইয়ের দোকান? ‘ভালো বইয়ের প্রচার-প্রসারের জন্য, নাকি যেনতেন রকমের বই বিক্রির জন্য এই মেলা করা হচ্ছে—তা বোঝা যায় না। বাংলা একাডেমী কোনোমতে একটি কাঠামো দাঁড় করায়। তারপর কী বই আসছে না-আসছে, ক্রেতারা স্বস্তিতে বই কিনতে পারছেন কি না—সেসব নিয়ে একাডেমীর কোনো দায় আছে বলে মনে হয় না। অথচ প্রতিবছরই একাডেমীর কাছে নতুন বইয়ের তালিকা যায়। তারা খুব ভালো করেই জানে, কারা প্রকৃত প্রকাশক; কারা কেমন ধরনের বই প্রকাশ করে। সেই কাজেই বইয়ের মান অনুসারে স্টল বরাদ্দ করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। কোনোবারই তা করা হয় না। বলা হয় স্থানের অভাব। তাহলে একাডেমীর মাঠ থেকে মেলাকে সম্প্রসারণ করা বা প্রয়োজন হলে একেবারেই সরিয়ে দেওয়া হোক।’ বলছিলেন কথাসাহিত্যিক ও দিব্যপ্রকাশের প্রকাশক মঈনুল আহসান সাবের। তিনি বলছিলেন, পাঠক বাড়ি থেকে বইয়ের নাম লিখে এনে এখানে এসে কিনবেন—এই যদি ব্যাপার, তাহলে মার্কেটের বইয়ের দোকান আর এই মেলার পার্থক্য কোথায়? তিনি মনে করেন, মেলায় বিক্রির বিষয়টি মুখ্য নয়। স্টলগুলোর পরিসর এমন হওয়া উচিত যে লোকজন এসে বইগুলো ভালো করে দেখতে পারেন। উৎসাহী হলে কিনবেন বা পরেও কিনতে পারেন। বইয়ের মান ও বিষয় সম্পর্কে জানবেন। এটাই তো মেলার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। বহু আলোচনার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে মেলা সম্প্রসারণ করার কথা শোনা যাচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ বলেই তিনি মন্তব্য করেন। এবার মেলায় আসছে তাঁর উপন্যাস মানকি, দিব্যপ্রকাশ থেকেই।
মোড়ক উন্মোচন
নজরুল মঞ্চে প্রতিদিনই এখন নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ভিড় বাড়ছে। গতকাল কুড়ির অধিক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে এখানে। এর মধ্যে ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি মানিক চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে গ্রন্থ মানিক চৌধুরী: স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্মৃত নায়ক। নাসিরুদ্দিন চৌধুরী সম্পাদিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী। বইটি প্রকাশ করেছে হাক্কানী পাবলিশার্স। রবীন্দ্রনাথবিষয়ক আটটি বই প্রকাশ করেছে মূর্ধন্য। মোড়ক উন্মোচন করেছেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। কবি নির্মলেন্দু গুণ মোড়ক উন্মোচন করেছেন দর্পণ কবিরের গল্পগ্রন্থ লাবণ্য ভেজা মেঘ-এর।
নতুন বই
তথ্যকেন্দ্রে গতকাল জমা পড়েছে ১২৯টি বইয়ের নাম। প্রথমা প্রকাশন থেকে এসেছে প্রত্নসম্পদবিষয়ক গ্রন্থ উয়ারী-বটেশ্বর: শেকড়ের সন্ধানে। লিখেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান। এতে উয়ারী-বটেশ্বরের ইতিহাস, আবিষ্কার, প্রত্নখননের বিস্তারিত বিবরণসহ সঙ্গে রয়েছে প্রাপ্ত নিদর্শনের আকর্ষণীয় রঙিন ছবি। এ ছাড়া এসেছে দেবেশ ভট্টাচার্যের আইনবিষয়ক গ্রন্থ সম্প্রদায়গত আইনের সংস্কার ও অন্যান্য।
অন্য বইয়ের মধ্যে মূর্ধন্য থেকে এসেছে রবীন্দ্রবিষয়ক আটটি বই। এগুলো কবির সার্ধশততম জন্মবর্ষের স্মারক গ্রন্থ। প্রতিটি গ্রন্থের প্রধান শিরোনাম রবীন্দ্রনাথ এবং একটি করে বিষয় নিয়ে আলোচনা। কবীর চৌধুরী লিখেছেন আন্তর্জাতিকতাবাদ, আহমদ রফিক দেশপ্রেম, ফারুক চৌধুরীশান্তির দূত, শেখর দত্ত রাজনীতি, মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন বঙ্গভঙ্গ, জুনান নাশিত রোগশয্যায়, কাজী মহম্মদ আশরাফ বৃষ্টির কবিতা এবং সুজন বড়ুয়া লিখেছেন ছড়া। বইগুলো সম্পাদনা করেছেন মনজুরে মওলা। এ ছাড়া আছে আজকাল থেকে অরুণ সেনের প্রবন্ধ দুই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য। সুলেখা থেকে মহাদেব সাহার কবিতা কোন মোহে কেন বা বিরহে। অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে নাসরীন জাহানের উপন্যাস কবচকুণ্ডল। এ ছাড়া আছে অনন্যা থেকে মকবুল হোসেন পাইকের উপন্যাস জীবন বহতা নদীর মতো। প্রকাশ একাত্তর থেকে অরপি আহমেদের উপন্যাস আলোমায়া, মুক্তদেশ থেকে তুষার কবিরের কাব্য কুহক বেহালা। নবরাগ থেকে আসফউদ্দৌলার স্মৃতিকথা ফেলে আসা জন্মভূমি। শোভা থেকে আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত জীবনীগ্রন্থ আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ঐতিহ্য অন্বেষার প্রাজ্ঞপুরুষ। নবযুগ থেকে রামেন্দু মজুমদারের সংস্কৃতিবিষয়ক খুচরো লেখা। শোভা থেকে আলী আহাম্মদ খানের আদিবাসীবিষয়ক গারো পাহাড় অঞ্চলের আদিবাসী। আমার প্রকাশনী থেকে সুদীপ্ত সালামের ফটোগ্রাফি ডিকশনারি।
মেলার মঞ্চে
গতকাল মেলার মঞ্চে ছিল ভাষাসৈনিক অজিত কুমার গুহ, মুনীর চৌধুরী ও মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীর ওপর আলোচনা। প্রবন্ধ পড়েন শান্তনু কায়সার, এ এম মাসুদুজ্জামান ও হারুন-অর-রশীদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। পরে ছিল আকতারুজ্জামানের নির্দেশনায়, সময় নাট্যগোষ্ঠীর নাটক। আজ শুক্রবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। ছুটির দিনের চেনা ভিড় দেখা যাবে মেলা চত্বরে।

No comments

Powered by Blogger.