জনপ্রশাসন মাথাভারী ও ভারসাম্যহীন by অরুণ কর্মকার ও মোশতাক আহমেদ
জনপ্রশাসন মাথাভারী ও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না মানা, পদোন্নতির বিধিমালা লঙ্ঘন এবং অনুগত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়াতে পদের চেয়ে পদোন্নতি বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি করছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন সময় একাধিক নীতিমালা প্রণীত হলেও জনপ্রশাসনে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তার বাস্তবায়ন নেই। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সবকিছুই হয় তার মর্জিমাফিক। পদোন্নতির যে বিধিমালাটি (২০০২ সালে সংশোধিত) রয়েছে, সেটিও সব ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না। বুধবার যে ৬৪৯ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হলো, সে ক্ষেত্রেও বিধিমালা লঙ্ঘিত হওয়ার অনেক নজির রয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে জট সৃষ্টি হলে এভাবে পদের চেয়ে অনেক বেশি পদোন্নতির ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থা প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
সাবেক সংস্থাপনসচিব মো. মোসলেহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মেধা ও কাজের মান বিবেচনার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি হয়ে উঠেছে আনুগত্যের পুরস্কার। তারই পরিণতি বর্তমান অবস্থা। এর ফলে প্রশাসনে কর্মবিহীন কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়বে। প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে।
পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের পদ আছে ১০০-এর কিছু বেশি। কিন্তু গত বুধবারের পদোন্নতির পর এই পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েছেন ২৬৭ জন। যুগ্ম সচিবের পদ আছে প্রায় ৪০০। কিন্তু এখন যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এর প্রায় তিন গুণ।
উপসচিবের ৮৬০টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা ছিলেন প্রায় এক হাজার। নতুন আরও ২৫৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।
এই তিনটি স্তরেই পদ কম থাকায় অনেক কর্মকর্তাকে কর্মবিহীন থাকতে হবে। অনেককে থাকতে হবে নিচের স্তরের পদে। জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব আবদুস সোবহান শিকদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তিরা যে জায়গায় ছিলেন, সে পদেই দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে আদেশ জারি হয়েছে। তবে তা সম্পূর্ণ সাময়িক। তাঁদের পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে পদায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, তাঁদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া কিছু নতুন পদও সৃষ্টি করা হবে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের।
জনপ্রশাসনে ওপরের তিনটি স্তরের ওই অবস্থার পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের প্রায় এক হাজার ৮০০ পদের মধ্যে প্রায় ২০০ পদ শূন্য আছে। সহকারী কমিশনার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৭১ জন। এই পদে প্রায় অর্ধেক জনবল কম আছে। ফলে সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে প্রত্যাশিত কাজ হচ্ছে না।
বয়স বাড়ানোয় বিড়ম্বনা: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করায় পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ার সমস্যা প্রকট হয়েছে। আগামী দুই বছর ওপরের পদগুলো খালি হবে না বলে এ সমস্যা আরও বাড়বে। ফলে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অনেক দিন থাকতে হবে নিচের পদে। প্রশাসনের ওপরের স্তরে এত বেশি পদ সৃষ্টি করা সম্ভবও হবে না।
সচিব পর্যায়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রশাসনে নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, একটি সরকার ক্ষমতায় এসে বলে যে, আগের সরকার অনেক ভুল করেছে। তারা সেগুলো সংশোধন করবে। আবার পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে পূর্ববর্তী সরকারের ভুলের কথা বলে নিজেদের মতো সংশোধনের পদক্ষেপ নেয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ‘ভুল সংশোধন’ করে চলায় এখন প্রশাসন প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের শাসনামলেই পদোন্নতির নীতিমালা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নীতিমালা কোনো সরকারই মানেনি।
‘বিধিমালা প্লাস’: বর্তমানে ২০০২ সালের সংশোধিত যে বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা তার নাম দিয়েছেন ‘বিধিমালা প্লাস’। কারণ, ওই বিধিমালার বাইরেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয়, যা করার কথা নয়।
এসব বিবেচনার কারণেই বিগত জোট সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেলা প্রশাসক থাকা অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। আবার সরকারের আস্থাভাজন অনেককে একটু আগেভাগেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কোটায় পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগ সব সময়ের। পঞ্চদশ বিসিএসে কর ক্যাডারে প্রথম হওয়া কর্মকর্তাকে না দিয়ে মেধাতালিকায় তাঁর চেয়ে পরে থাকা একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তথ্য ক্যাডারের নবম ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকা ১৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির বিবেচনায়ই আনা হয়নি। এটা বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের ডিঙিয়ে পরের তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গতকাল অনেকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরও পাঁচ শতাধিক: বর্তমান সরকারের আমলে চতুর্থবারের মতো এবং সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতির পরও আরও পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন যাঁদের পদোন্নতির সময় হয়েছে। যোগ্যতাও আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাচের সব কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে যাঁরা পদোন্নতি পাননি, তাঁরা আর কখনোই তা পাবেন না। পরবর্তী পদোন্নতির সময় নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা বাদ (লেফট আউট) হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে জট সৃষ্টি হলে এভাবে পদের চেয়ে অনেক বেশি পদোন্নতির ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থা প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
সাবেক সংস্থাপনসচিব মো. মোসলেহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মেধা ও কাজের মান বিবেচনার পরিবর্তে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি হয়ে উঠেছে আনুগত্যের পুরস্কার। তারই পরিণতি বর্তমান অবস্থা। এর ফলে প্রশাসনে কর্মবিহীন কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়বে। প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হবে।
পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের পদ আছে ১০০-এর কিছু বেশি। কিন্তু গত বুধবারের পদোন্নতির পর এই পদমর্যাদার কর্মকর্তা হয়েছেন ২৬৭ জন। যুগ্ম সচিবের পদ আছে প্রায় ৪০০। কিন্তু এখন যুগ্ম সচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এর প্রায় তিন গুণ।
উপসচিবের ৮৬০টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা ছিলেন প্রায় এক হাজার। নতুন আরও ২৫৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন।
এই তিনটি স্তরেই পদ কম থাকায় অনেক কর্মকর্তাকে কর্মবিহীন থাকতে হবে। অনেককে থাকতে হবে নিচের স্তরের পদে। জানতে চাইলে জনপ্রশাসনসচিব আবদুস সোবহান শিকদার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ব্যক্তিরা যে জায়গায় ছিলেন, সে পদেই দায়িত্ব পালন করবেন। এ বিষয়ে আদেশ জারি হয়েছে। তবে তা সম্পূর্ণ সাময়িক। তাঁদের পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে পদায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, তাঁদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া কিছু নতুন পদও সৃষ্টি করা হবে, বিশেষ করে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের।
জনপ্রশাসনে ওপরের তিনটি স্তরের ওই অবস্থার পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের প্রায় এক হাজার ৮০০ পদের মধ্যে প্রায় ২০০ পদ শূন্য আছে। সহকারী কমিশনার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৭৭১ জন। এই পদে প্রায় অর্ধেক জনবল কম আছে। ফলে সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে প্রত্যাশিত কাজ হচ্ছে না।
বয়স বাড়ানোয় বিড়ম্বনা: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করায় পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি হওয়ার সমস্যা প্রকট হয়েছে। আগামী দুই বছর ওপরের পদগুলো খালি হবে না বলে এ সমস্যা আরও বাড়বে। ফলে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের অনেক দিন থাকতে হবে নিচের পদে। প্রশাসনের ওপরের স্তরে এত বেশি পদ সৃষ্টি করা সম্ভবও হবে না।
সচিব পর্যায়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জনপ্রশাসনে নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, একটি সরকার ক্ষমতায় এসে বলে যে, আগের সরকার অনেক ভুল করেছে। তারা সেগুলো সংশোধন করবে। আবার পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে পূর্ববর্তী সরকারের ভুলের কথা বলে নিজেদের মতো সংশোধনের পদক্ষেপ নেয়। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ‘ভুল সংশোধন’ করে চলায় এখন প্রশাসন প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের শাসনামলেই পদোন্নতির নীতিমালা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নীতিমালা কোনো সরকারই মানেনি।
‘বিধিমালা প্লাস’: বর্তমানে ২০০২ সালের সংশোধিত যে বিধিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা তার নাম দিয়েছেন ‘বিধিমালা প্লাস’। কারণ, ওই বিধিমালার বাইরেও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন কিছু বিষয় বিবেচনা করা হয়, যা করার কথা নয়।
এসব বিবেচনার কারণেই বিগত জোট সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেলা প্রশাসক থাকা অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। আবার সরকারের আস্থাভাজন অনেককে একটু আগেভাগেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কোটায় পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগ সব সময়ের। পঞ্চদশ বিসিএসে কর ক্যাডারে প্রথম হওয়া কর্মকর্তাকে না দিয়ে মেধাতালিকায় তাঁর চেয়ে পরে থাকা একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তথ্য ক্যাডারের নবম ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকা ১৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতির বিবেচনায়ই আনা হয়নি। এটা বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে তাঁদের অভিযোগ। তাঁদের ডিঙিয়ে পরের তিনজনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে গতকাল অনেকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরও পাঁচ শতাধিক: বর্তমান সরকারের আমলে চতুর্থবারের মতো এবং সর্বোচ্চসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতির পরও আরও পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন যাঁদের পদোন্নতির সময় হয়েছে। যোগ্যতাও আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাচের সব কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে যাঁরা পদোন্নতি পাননি, তাঁরা আর কখনোই তা পাবেন না। পরবর্তী পদোন্নতির সময় নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা বাদ (লেফট আউট) হিসেবে বিবেচিত হবেন।
No comments