ফুকুশিমা বিপর্যয়ের এক বছর-জাপানের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব by রাহীদ এজাজ
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর বিদ্যুৎ উৎপাদনে জাপানকে নির্ভর করতে হচ্ছে তেল-গ্যাস আমদানির ওপর। পূর্ব জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। দেশের অর্থনীতির এ সংকট কাটাতে বাজার উন্মুক্ত করার পাশাপাশি বেশ কিছু উদারমুখী নীতি গ্রহণ করাটা জরুরি।
ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর জাপানের অর্থনীতির বর্তমান চালচিত্র আর ভবিষ্যৎ ভাবনার কথা জানাতে গিয়ে এ অভিমত দেন টোকিওর ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক শুজিরো উরাতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার অধ্যাপক উরাতা টোকিওর বিদেশি প্রেস সেন্টারে জাপান সফররত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ভূমিকম্প-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি যে ক্ষতি হবে, তার পুরোটার ধকল সইতে হবে অর্থনীতিকে। আগামী গ্রীষ্মে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে জ্বালানির জন্য আরও তেল-গ্যাস আমদানি করতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানে ৫৪টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি সচল আছে, জনগণের বিরোধিতার মুখে সরকারকে সেগুলোও বন্ধ করে দিতে হবে। এমন অবস্থায় ইয়েনের ফের অবমূল্যায়ন ঠেকানো, ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ভারসাম্য আনা—সব মিলিয়ে সরকারকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাপানে উদার অর্থনীতির প্রবক্তাদের অন্যতম শুজিরো উরাতা মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারকে বেশ কিছু উদারমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দাভাব, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হ্রাস, সঞ্চয়ের নিম্নমুখী প্রবণতা ও সরকারের ঋণের হার বাড়তে থাকায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত করের হার বাড়াটা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানের শিল্প ও বাণিজ্যনীতি প্রণয়নে যুক্ত শুজিরো উরাতা মনে করেন, জাপানে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ায় শিল্পোৎপাদনের হার কমেছে। কাজেই উৎপাদন বাড়াতে শ্রমবাজার বিদেশিদের জন্য খুলে দেওয়ার কথা বিবেচনায় নিতে হবে। তবে বহির্গমন নীতিতে কতটা পরিবর্তন আনা হবে, এ নিয়ে তিনি সন্দিহান। সরকার এ ব্যাপারে কতটা উদারতা দেখাবে, তা নিয়ে তাঁর সংশয় আছে।
শুজিরো উরাতার মতে, জাপানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজার উন্মুক্ত করা দরকার। তবে বিষয়টি খুব সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা শেষ করার পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তির ওপর জোর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে কৃষিসহ বিভিন্ন খাত উন্মুক্ত করার বিষয়টি রয়েছে।
No comments