শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া
১
ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর দিনে একটি উদ্বেগজনক খবর
প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষাজীবনের মাধ্যমিক স্তরের এই চূড়ান্ত পর্বে এসে
উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী দ্রুতগতিতে ঝরে পড়ছে। আমরা যখন প্রাথমিক
পর্যায়ে শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্য অর্জন করতে চলেছি, তখন লক্ষ
রাখিনি যে এই শিশুদের একটা বড় অংশ মাধ্যমিক পর্যায় পেরোতে পারছে না। এসএসসি
ও এর সমমানের শিক্ষা অর্জন করার আগেই তাদের শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটছে। গত
পাঁচ বছরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। চলতি বছর
প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করার পরও এসএসসি ও সমমানের
পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিচ্ছে না। এভাবে একদিকে এদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অবসান
ঘটছে, অন্যদিকে এদের অর্জিত শিক্ষা তেমন কোনো কাজে লাগছে না। এ দেশে এখন
এসএসসি ও সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতায় তেমন কোনো চাকরি মেলে না। উপরন্তু, এ
পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগেই যারা ঝরে পড়ছে, তাদের কোনো ডিগ্রিই নেওয়া হচ্ছে
না।
এই জনগোষ্ঠী দক্ষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে তাদের অর্জিত
শিক্ষা অচিরেই ভুলে যায় এবং অদক্ষ জনবলের খাতায় যুক্ত হয়। এটা রাষ্ট্রীয়
অর্থের অপচয়ও বটে। এই সমাধান করতে হলে প্রথমে সমস্যার কারণগুলো চিহ্নিত করা
প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন, এ পর্যায়ে এসে কী কী কারণে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে।
কোন অর্থনৈতিক শ্রেণির সন্তানদের মধ্যে ঝরে পড়ার হার বেশি। ধনী বা সচ্ছল
পরিবারের তুলনায় দরিদ্র বা অসচ্ছল পরিবারে, শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এবং
ছেলেদের তুলনায় মেয়েশিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বেশি কি না; অঞ্চলবিশেষে
ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক কারণও রয়েছে কি না। কারণগুলো চিহ্নিত করতে ব্যাপকভিত্তিক
গবেষণা জরিপ প্রয়োজন। এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের; তাদের
পক্ষে কাজটি অপেক্ষাকৃত সহজ। বেসরকারি সংস্থাগুলোও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
সহযোগিতায় এই কাজ করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের
ঝরে পড়ার কারণ অতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ এবং প্রাথমিক স্তর থেকে ওপরের দিকে
শিক্ষার ব্যয় ক্রমেই বেড়ে যাওয়া। এটাও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। এ ক্ষেত্রে
পরীক্ষাপদ্ধতির সংস্কার ও শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে
হবে। বিশেষত, জরুরি শিক্ষা খাতের বাজেট বাড়ানো এবং শিক্ষার বিস্তারে
দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন।
No comments