ইটভাটা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ জরুরি by সাঈদ চৌধুরী
দেশে
প্রতিদিনই নতুন নতুন অবকাঠামোর কাজ শুরু হচ্ছে। বিশেষ করে শহরগুলোয় বড় বড়
ইমারত গড়ে তোলা হচ্ছে, যার প্রধান উপাদান ইট। অস্বীকার করার উপায় নেই, ইট
আমাদের অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আধুনিক যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইটের
বিবিধ ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে
পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে কৃষিজমি ও কাঠের ব্যবহার এবং এর
ফলে উৎপাদিত কালো ধোঁয়া সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ। এ জন্য ইটভাটা স্থাপনে
২০১৩ সালের একটি যথেষ্ট শক্ত আইনও রয়েছে। এতে স্পষ্ট করে যে শর্তগুলো দেয়া
আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কৃষিজমি, বনভূমি, রাস্তার পাশে এবং
বিদ্যালয়ের পাশে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। প্রশ্ন হল, এ আইন কতটা
কার্যকর? ইটভাটা নিয়ে প্রায়ই প্রতিবেদন হচ্ছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইটভাটা
বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কিছুদিন পর সদর্পে
চলতে থাকে ওই ইটভাটাগুলো। তারপর আর তদারকি নেই। এভাবে চলতে পারে না। একটি
সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া কোনোভাবেই ইটভাটার দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়।
কারণ ইটের প্রয়োজনীয়তা যেমন থাকবে, তেমনি যারা ইট তৈরি করছে তারা যে
কোনোভাবে ইটভাটা চালাতে চাইবে। ইটভাটা আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, আধুনিক
প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থ এমন কোনো ইটভাটা যা জ্বালানিসাশ্রয়ী, যেমন-
হাইব্রিড হফম্যান কিল্ন, জিগজ্যাক কিল্ন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিক কিল্ন
বা টানেল কিল্ন অথবা অনুরূপ কোনো ভাটা।
কিন্তু এ পদ্ধতির ইটভাটা তৈরি করতে
অনেক খরচের প্রয়োজন হয়। এ অর্থায়ন করবে কারা? ইটভাটা কর্তৃপক্ষ এত টাকা
লগ্নি করে ইটভাটা না চালিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এতে করে একদিকে দুর্নীতি
বাড়ছে, ইটভাটাও বাড়ছে অবৈধভাবে এবং কিছু টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কেউ কেউ। এ
বিষয়ে এখনই একটি সুষ্ঠ পরিকল্পনা প্রয়োজন। ইটভাটাগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতেই
হবে আমাদের পরিবেশ বাঁচানোর জন্য। এ জন্য সরকার একটি পদ্ধতি নির্ধারণ করে
দিতে পারে। প্রতিটি ইটভাটাকে নির্দিষ্ট ঋণদানের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব করে
গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে। এমনও করা যেতে পারে- যারা ইটের বড় বড় ক্রেতা
তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জামানত হিসেবে দিয়ে ইট ক্রয়ের চুক্তি করে
তারপর ইট নেয়া শুরু করল এবং ইটভাটাগুলো সে টাকা থেকে তাদের প্রসেসের উন্নয়ন
ঘটাল। এতে করে যারা ক্রেতা তারাও সঠিক ইট বাছাই করে কিনতে পারবে এবং
ইটভাটাগুলোও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করবে। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি
কাজেও ইটের ব্যবহার কম নয়। রাস্তা নির্মাণে অনেক ইট প্রয়োজন হয়। বর্তমানে
আবার ভাঙা রাস্তা মেরামত করতে ইটের ছলিং করে দেয়া হচ্ছে। এই ইটগুলো কি
সরকার সবসময় পরিবেশবান্ধব ইটভাটা থেকে সংগ্রহ করতে পারছে? এখানেই সমস্যা।
অনিবন্ধিত ইটভাটা থেকেও ইট কিনতে হচ্ছে কখনও কখনও এবং এতে করে উপেক্ষিত
হচ্ছে শর্ত। ইট যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন পরিবেশ বাঁচানো। সুতরাং এ
ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের চর্চা বাড়াতেই হবে। যে প্রক্রিয়ায় অল্প খরচে
পরিবেশসম্মতভাবে ইট তৈরি করা যায় সেরকম পরিকল্পনা নিয়ে ইটভাটাগুলো স্থাপনে
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করি পরিবেশ অধিদফতরসহ সবাই
পরিকল্পিত ইট উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর
সাঈদ চৌধুরী : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর
No comments