প্রবাসী আয় ৩৬% বেড়েছে
টাকার
বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। গত জানুয়ারি
মাসে প্রবাসীরা ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের
একই সময়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। ফলে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের
প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রবাসীদের পাঠানো আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে
৮৩১ কোটি ২১ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট চলছে, এতে
মূল্যও বেড়েছে। গত বছরের একই সময়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে ব্যাংকে পাওয়া যেত
সর্বোচ্চ ৮০ টাকা, বর্তমানে তা ৮৩ টাকার বেশি। এ কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে
ডলার আসা বেড়ে গেছে। বিদেশে কর্মরত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারাও ডলার
সংগ্রহের জন্য আগের চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং
সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে অবৈধভাবে যেসব আয় আসছিল, তাও কিছুটা
কমেছে। অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন
পদক্ষেপের কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বেড়ে গেছে। গত সোমবার মুদ্রানীতি ঘোষণা
অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির আশা প্রকাশ করেন, চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ১
হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়াবে। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে
অবৈধ হুন্ডি লেনদেন প্রতিরোধ ও দমনে জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রবাসী আয়-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত
জানুয়ারিতে আয় এসেছে ১৩৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। গত ডিসেম্বরে এসেছিল ১১৬ কোটি
৩৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে আয় বেড়েছে সাড়ে ১৮
শতাংশ। এদিকে গত বছরের জানুয়ারি মাসে আয় এসেছিল মাত্র ১০০ কোটি ৯৪ লাখ
ডলার।
এ হিসাবে আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণ
ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কারিগরি কমিটির
প্রধান আলী হোসেন প্রধানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে যাঁরা ডলার ধরে
রেখেছিলেন, দাম বেশি পাওয়ায় তাঁরা এখন দেশে ডলার পাঠাচ্ছেন। এ ছাড়া
নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে অবৈধ হুন্ডি প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া
হয়েছে। এ কারণে আনুষ্ঠানিক পথে প্রবাসী আয় বেড়ে গেছে। আলী হোসেন প্রধানিয়া
অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরও দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি আরও
বলেন, দেশে ডলারের ভালো চাহিদা রয়েছে। প্রবাসী আয় বাড়াটা অর্থনীতির জন্য
সুখবর। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে ইসলামী
ব্যাংকের মাধ্যমে আয় এসেছে ২৬ কোটি ৬১ কোটি ডলার। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের
মাধ্যমে এসেছে ১২ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১০ কোটি
ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা
ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ২২ লাখ ডলার আর ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে
এসেছে ৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭
অর্থবছরে দেশে মোট প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি মার্কিন ডলার। এ আয়
গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে
১ হাজার ৫৩১ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যা ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।
মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের প্রবাসী আয় বিতরণের অভিযোগে গত বছরের ১৪
সেপ্টেম্বর বিকাশের ২ হাজার ৮৮৭টি এজেন্টের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়
বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ১ হাজার ৮৬৩টি এজেন্ট হিসাব বন্ধের নির্দেশ
দেওয়া হয়। এরপরই প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা শুরু হয়েছে।
No comments