ট্রাম্পের সৌদি সফরে মুসলিম বিশ্বের প্রত্যাশা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম বিদেশ সফরে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশ সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এ সফরে সৌদি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন ট্রাম্প। সফরকে কেন্দ্র করে আরও ৫৬টি মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে রিয়াদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি বাদশা সালমান। তাদের সামনেও বক্তব্য দেবেন ট্রাম্প। তাই বলা যায়, এক সফরে পুরো মুসলিম বিশ্বের নেতাদের পাশে পাচ্ছেন ট্রাম্প। সুযোগ পাচ্ছেন তাদের মন জয়ের। আর এ চেষ্টায় তিনি কোনো কমতি রাখবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হল- ট্রাম্পের কাছে কী চাইবেন মুসলিম নেতারা? বেশিরভাগ বিশ্লেষকই বলছেন, ট্রাম্পের সৌদি সফরে প্রত্যাশা যুক্তিসঙ্গতভাবেই খুব বেশি নয়। বিশ্লেষকদের মতে- বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু এ সফরের মূল আলোচ্য হিসেবে দেখা দেবে। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের প্রতি থাকবে ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান। সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধ নিরসন ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানানো হবে। সফরকালে সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। এ সময় অন্তত ১০টি মার্কিন তেল পরিষেবা কোম্পানির সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সৌদি আরামকোর। সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তির খবর আসতে পারে এ সফর থেকেই। ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ডেভিড মিলার জানান, আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের রাজনীতিতে ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে আরও বেশি পরিমাণে সহায়তা করবে ট্রাম্প প্রশাসন, এমনটাই আশা করছে দেশটি। ট্রাম্পের সফরকালে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইবে সৌদি সরকার। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প এমন একজন ব্যক্তি যিনি একসময় সৌদি আরবের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। অথচ এখন দেশটিকে অন্যতম মিত্র স্বীকার করে সফরে যাচ্ছেন। তাই এ সফর দু’পক্ষেরই অবস্থান যাচাইয়ে ভূমিকা রাখবে।
ট্রাম্প গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) সদস্য দেশ বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকে মিলিত হবেন। এ সময় সিরিয়া ইস্যুতে তাদের মধ্যে কথা হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বেসামরিক মানুষের জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে আলোচনা করবেন তারা। মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিস্তার রোধের উপায় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন ট্রাম্প। এসব গোষ্ঠীর অবৈধ অর্থায়নের উৎস বন্ধে আলোচনা করবেন। এ আলোচনায় একসঙ্গে সব মুসলিম দেশের নেতাদের পাশে পাচ্ছেন ট্রাম্প। আর এটাই হবে মুসলিম বিশ্বের মন জয়ের কার্যকর সময়। ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের অধ্যাপক শিবলি তেলহামি বলেন, ‘ওবামা প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতারা মেনে নিতে পারেননি। তাদের মনে মার্কিন প্রশাসনের বিষয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখন ট্রাম্প এ নীতিতে একটু ভিন্নতা আনলে তারা তা সাদরে গ্রহণ করবেন। আর সফরকালে এ চেষ্টাই করবেন ট্রাম্প।’ ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের বিদেশ নীতিবিষয়ক সিনিয়র ফেলো মিশেল ও’হ্যানন বলেন, ‘ট্রাম্পের এ সফরে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আর তা হবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বাস্তব প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে। এতে ভূমিকা রাখবে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি।’ যদিও ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এখনই বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না এ বিশ্লেষক। সৌদি সফর শেষে সোজা ইসরাইল যাবেন ট্রাম্প। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। এরপর ভ্যাটিকান সফরে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। রোম থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সবশেষ সিসিলিতে জি-৭ দেশগুলোর বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তার। আলজাজিরা।
No comments