কংগ্রেসে গোয়েন্দা প্রধানদের জিজ্ঞাসাবাদ
মার্কিন
নির্বাচনে প্রচারণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির ও রাশিয়ার
মধ্যে যোগসাজশের বিষয়ে কংগ্রেসে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন
যুক্তরাষ্ট্রের দুই গোয়েন্দা প্রধান। ট্রাম্পের ফোনে সাবেক প্রেসিডেন্ট
বারাক ওবামা আড়ি পেতেছিলেন বলে তিনি যে অভিযোগ এনেছেন তারা সে বিষয় নিয়েও
কথা বলেছেন। সোমবার মার্কিন কংগ্রেসের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির কাছে বিরল এ
শুনানিতে অংশ নিয়েছেন এফবিআই পরিচালক জেমস কমি এবং এনএসএ প্রধান অ্যাডমিরাল
মাইক রগার্স। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের এ তদন্তকে ‘অলীক’ কিছু খুঁজছে
বলে মন্তব্য করেছেন। জানুয়ারি মাসে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো
জানিয়েছিল, ক্রেমলিনভিত্তিক হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ নেতাদের
ইমেইল হ্যাক করেছিল। ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে
ট্রাম্পকে জেতাতে এ কাজ করেছিল রুশ হ্যাকাররা। সিআইএ, এফবিআই এবং এনএসএ
যৌথভাবে এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে রাশিয়ার
কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশমতো কাজ করেছেন। হিলারি
ক্লিনটনকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করায় পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে
ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে দেখতে চেয়েছিলেন বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এরপর
থেকে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রিপাবলিকান দলের যোগসাজশ ছিল বলে ট্রাম্প
সমালোচিত হয়ে আসছেন। মার্কিন কংগ্রেসের গোয়েন্দা কমিটির প্রধান ডেভিড নানস
এবং ওই প্যানেলের শীর্ষ ডেমোক্রেটিক নেতা অ্যাডাম স্কিফ রুশ সংশ্লিষ্টতার
বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রোববার ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে ডেভিড বলেন,
‘এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত যেসব নথিপত্র পেয়েছি, তাতে নির্বাচনী প্রচারের
সময় ট্রাম্প কিংবা তার প্রচার শিবিরের ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগসাজশের কোনো
প্রমাণ মেলেনি।’ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস
ক্লাপারও বলেছেন, রুশ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে
অ্যাডাম স্কিফ বলেন, নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে
রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন মার্কিন নাগরিকরা।
তিনি আরও বলেন,
সরাসরি প্রমাণ রয়েছে, এর মাধ্যমে তদন্তের সমাপ্তিতে আসা যথাযথ হবে।’ রুশ
সম্পৃক্ততার অভিযোগের জেরে ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা সাবেক জাতীয়
নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এবং অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সকে
খেসারত দিতে হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা নির্বাচিত হওয়ার
আগে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অভিযোগ পাওয়ায় গত মাসে ফ্লিনকে
পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। রুশ রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে সাক্ষাৎ
করেছিলেন ফ্লিন। এছাড়া রুশ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে জানুয়ারিতে শপথ নেয়ার সময় তার
ভূমিকার বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন সেশন্স। তিনি ভুল কিছু করেননি বলে জানান এবং
নিজেকে এফবিআইয়ের তদন্ত কমিটি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে ট্রাম্পের
ফোনে ওবামার আড়ি পাতার বিষয়েও শুনানি হয়েছে কংগ্রেস প্যানেলে। চলতি মাসের
প্রথমদিকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, তিনি নির্বাচিত হওয়ার এক মাস আগে পূর্বসূরি
ওবামা তার টেলিফোনে আড়ি পাতেন। তবে এই অভিযোগের সমর্থনে কোনো তথ্য-প্রমাণ
তুলে ধরেননি ট্রাম্প। কংগ্রেস শুনানিতে ট্রাম্পের এ অভিযোগকে বাতিল করে
দিয়েছেন এফবিআই পরিচালক কমি। ৭০ বছরের মার্কিন ইতিহাসে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা
সর্বনিম্নে : মার্কিন ইতিহাসে ৭০ বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের
জনপ্রিয়তা সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। রোববার প্রকাশিত গ্যালাপের জরিপে এ তথ্য
উঠে এসেছে। এ জরিপে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫০০ মার্কিনি। এতে দেখা গেছে,
ক্ষমতা গ্রহণের দু’মাসের মাথায় তার জনপ্রিয়তা কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ।
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের এই সময়সীমার মধ্যে গত ৭০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের
কোনো প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা এত নিচে নামেনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে
অসমর্থন জানিয়েছেন ৫৮ ভাগ মার্কিনি। ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানায়, মাত্র দু’মাস হল
ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ। ২০ জানুয়ারি শপথ নেন তিনি। ওই সময়ে তার
জনপ্রিয়তা যা ছিল শতকরা ৪৫ ভাগ। তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৭ ভাগে।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদের জনপ্রিয়তা বা
রের্টি কমেছে। কিন্তু এত বেশি কমেনি তাদের জনপ্রিয়তা।
No comments