দেশীয় টাইলসের চাহিদা বাড়ছে
কম
মূল্যে উন্নত ডিজাইনের দেশীয় টাইলসের চাহিদা বাড়ছে। আমদানিনির্ভর টাইলস
এখন দেশের বড় সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবছরই দ্রুত বিকশিত
হচ্ছে দেশীয় টাইলস বাজার। বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩
হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর উৎপাদিত হচ্ছে ৭০০ লাখ স্কয়ার মিটার টাইলস।
বর্তমানে চাহিদার ৭৬ শতাংশের বেশি পূরণ হচ্ছে দেশে উৎপাদিত টাইলস থেকে। গত ৫
বছরে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ছিল ২০০ শতাংশ-এমন দাবি করে বাংলাদেশ সিরামিক
ওয়্যারস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডবিইএমএ) ও বাংলাদেশ
স্যানিটারি অ্যান্ড টাইলস মার্চেন্টাইস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছে, দেশীয়
উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক মান, আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন এবং শৈল্পিক ডিজাইন
বজায় রাখছে। যা দ্রুত ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। এ কারণে দ্রুত সম্প্রসারিত
হচ্ছে দেশীয় টাইলসের বাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে বিভিন্ন দাম ও মানের
টাইলস আমদানি করা হতো ফ্রান্স, ইটালি, চীন, ভারত, তাইওয়ানসহ আরও কয়েকটি
দেশ থেকে। এখন চীন এবং ভারত থেকে আনা টাইলসই বিদেশী বাজার দখল করে আছে।
দেশে তৈরি টাইলসের মধ্যে মান ও দামের দিক থেকে শীর্ষস্থান দখল করে আছে
আরএকে সিরামিকস। তারপরই চায়না বাংলা সিরামিকের অবস্থান।
এ তথ্য বাংলামোটরের
টাইলস বিক্রেতাদের। তারা বলছেন, দেশীয় টাইলসের সিংহভাগ চাহিদাই এই দুটি
প্রতিষ্ঠান পূরণ করে থাকে। এরপরেই মীর সিরামিক, সানপাওয়ার, গ্রটওয়াল, ফু
ওয়াং, মধুমতি সিরামিকের অবস্থান। চীনা মাটির টাইলস তৈরি করতে ব্যবহৃত
কাঁচামালের বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামাল ভারত, চীন,
নিউজিল্যান্ড ও জার্মানি থেকে আমদানি করতে হয়। বিসিডবিইএমএ’র তথ্য অনুযায়ী,
দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ২২টি প্রতিষ্ঠান টাইলস উৎপাদন করছে।
বর্তমানে এ খাতে বাজারের আকার প্রায় ২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যার দেশীয়
বাজারে বিক্রির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। বিক্রির হিসাবে দেশীয়
প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে রয়েছে বাজারের ৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং আমদানির পরিমাণ
৫৭৫ কোটি টাকা। যা মোট বাজারের ২৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ স্যানিটারি
অ্যান্ড টাইলস মার্চেন্টাইস অ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি শহিদুল্লাহ বলেন, দেশী
টাইলসের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি, তাছাড়াও নতুন নতুন ডিজাইনের কারণে
দেশীটাই ক্রেতাদের কাছে বেশি পছন্দের। বিদেশী টাইলসের রং, ডিজাইন ও একই মান
এখন দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত টাইলসে পাচ্ছে ক্রেতারা। একই সঙ্গে
আমদানি করা টাইলসের থেকে দেশী টাইলসের দাম কম হওয়ায় বিক্রি বেড়ে যাচ্ছে।
ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকার রাখছে দেশীয় টাইলস কোম্পানিগুলো। এ খাতকে আরও
ব্যাপক আকারে প্রসার ঘটাতে হলে কি করা যেতে পারে জানতে চাইলে
বিসিডবিইএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, নতুন মূল্য সংযোজন কর ও
সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়নে দেশীয় সিরামিক (টাইলস, টেবিলওয়্যার,
স্যানিটারিওয়্যার) খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সিরামিক টাইলস আমদানি পর্যায়ে
বর্তমানে ৬০ শতাংশ ও উৎপাদনে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। জুলাই থেকে
আমদানি পর্যায়ে ৪৫ শতাংশ ও উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ হয়ে যাবে।
উৎপাদন পর্যায়ে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশীয় টাইলস মার খাবে। ফলে আমদানিকারক
একদিকে ৯ শতাংশ শুল্ক হ্রাসের সুবিধা পাবে এবং অপরদিকে আমদানি পণ্যের চেয়ে
দেশীয় পণ্যের মূল্য ৩৬ শতাংশ অতিরিক্ত হবে। এতে করে বিদেশী পণ্যের চেয়ে
অতিরিক্ত মূল্যে দেশীয় পণ্য ক্রেতার নিকট বিক্রয় করা কখনই সম্ভবপর হবে না। এ
খাত রক্ষায় সিরামিক আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার না করে তা
বহাল বা বৃদ্ধি অথবা ভিন্ন নামে শুল্কারোপেরও দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ
তাইওয়ান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান খাজা সাহাদাত উল্লাহ বলেন, আমাদের
দেশীয় বাজার একচেটিয়াভাবে দেশীয় টাইলসের দখলে রয়েছে।
আমাদে এখন চোখ রাখা
উচিত রফতানির দিকে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি যত বেশি রফতানি করতে পারব
আমাদের শিল্প আরও বেশি এগিয়ে যাবে। এ খাতে সরকার যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস
ও বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারে তবে আগামীতে দেশীয় বাজার একশ’ ভাগ দেশীয়
টাইলসের দখলে থাকবে। টাইলসের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্রিনরোডের টাইলস
ব্যবসায়ী গাবিন্দ লাল ঘোষ জানান, টাইলস মূলত ৮ থেকে ১০ ধরনের হয়। এসব
টাইলসের মধ্যে ওয়াল টাইলসের ইউনিট দাম রয়েছে ৩৬ থেকে ৫৭, ফ্লোর টাইলস রয়েছে
৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া ডেকোর অ্যান্ড বর্ডার টাইলসের ইউনিটপ্রতি
মূল্য ৭০ থেকে ২৫০, হোমোজেনিয়াস ফ্লোর টাইলস ৬০ থেকে ৯০, মিরর পলিশ ফ্লোর
টাইলস ৮০ থেকে ১৩০, ফ্লোর টাইলস গোল্ড, হোমোজেনিয়াস পেভমেন্ট টাইলস ৬৫ এবং
ক্লেডিং টাইলস ৫৫ থেকে ৭৫ টাকা। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা সব ধরনের
টাইলসের দাম দেশী টাইলসের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। জানা যায়, বাংলাদেশে
সিরামিক টাইলস এবং স্যানিটারি ওয়্যার শিল্পের পথচলা শুরু হয় ১৯৭৭ সালের
দিকে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআইএসএফ ওই বছর প্রথম উৎপাদন করে টাইলস এবং
স্যানিটারি ওয়্যার। আর বেসরকারিভাবে ১৯৯৩ সালে মধুমতি সিরামিকস প্রথম এ
খাতে বিনিয়োগ করে।
No comments