পিত্তথলিতে পাথর হলে

পিত্তথলিতে পাথর সবার কাছেই খুব পরিচিত একটি রোগ। পেটের ডান দিকে যকৃতের পেছনে ও তলার দিকে পিত্তথলি থাকে। পিত্তরস তৈরি করাই এর কাজ। খাবার হজমে পিত্তরস দরকার পড়ে, বিশেষ করে চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে পিত্তরস বেশি প্রয়োজন।
পিত্তথলিতে পাথর: কোলেস্টেরল, বিলুরুবিন বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি এই পাথরগুলো পিত্তরসের সঙ্গে মেশানো অবস্থায় থাকে। পাথরগুলো ছোট ছোট বালুর মতো আবার মটরের দানা বা তার চেয়েও বড় শক্ত পাথর হয় পিত্তথলিতে। এই পাথরগুলো বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। সাধারণত পাথরগুলো হালকা বাদামি, ময়লাটে সাদা বা কুচকুচে কালো রঙের হয়ে থাকে। তবে এটা নির্ভর করে কী পদার্থ দিয়ে পাথর তৈরি হয় তার ওপর।
লক্ষণসমূহ
* পিত্তথলিতে পাথর হলে এতে প্রদাহ হয়, যাকে কোলেসিস্টাইটিস বলা হয়। তখন পেটের ডান দিকে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। এই ব্যথা মিনিট খানেক থেকে ঘণ্টা খানেক স্থায়ী হয়ে থাকে।
* পেটের পেছন দিকে, কাঁধে, পেটের মাঝ বরাবর এমনকি বুকের ভেতরও ধীরে ধীরে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে ও অসহ্য যন্ত্রণা হয়।
* পেট ব্যথার সঙ্গে বমিভাব বা বমি, হালকা জ্বর দেখা দিতে পারে।
* অনেক সময় পাথর পিত্তথলি থেকে বেরোতে গিয়ে পিত্তনালিতে আটকে যায় এবং তখন বিলুরুবিনের বিপাক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জন্ডিসও হতে পারে।
পরীক্ষা
এ রোগ নির্ণয়ে পেটের আলট্রাসনোগ্রাম করলেই চলে। পাথরের অবস্থান জানতে বা প্রয়োজনে বের করতে ইআরসিপি জাতীয় পরীক্ষা করা যেতে পারে। অনেক সময় পেটের আলসার, যকৃতের কোনো সমস্যা বা হৃদরোগ থেকেও ব্যথা হয় তাই পরীক্ষা করাটা জরুরি।
চিকিৎসা
পিত্তথলিতে তীব্র ব্যথা হলে এ অবস্থায় সাধারণত কয়েক দিনের জন্য খাদ্যগ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। কারণ প্রদাহ ও তীব্র ব্যথার সময় কোনো অস্ত্রোপচার করা হয় না। পেট কেটে বা ফুটো করে- দু’ভাবেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। তবে পিত্তনালিতে পাথর আটকে গিয়ে থাকলে ইআরসিপি যন্ত্রের সাহায্যে তা বের করা যায়। তবে এ অস্ত্রোপচার তাৎক্ষণিক করাতে হবে তা নয়, এটা রোগীকে পরীক্ষা করে গুরুতর না হলে সপ্তাহ দুয়েক পর বা এক-দুই মাস পরও করা যেতে পারে।
ড. সন্তু, সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা নগর, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.