ট্রাম্প বললেন, জেরুজালেম ইসরায়েলের রাজধানী!
একদিকে
অন্যের ভূমি জবরদখল আর অন্যায্য আবদার ‘সবল’ ইসরায়েলের। অন্যদিকে দশকের পর
দশক শোষণ-বঞ্চনা ভোগ আর স্বাধীন রাষ্ট্রের লড়াই ‘দুর্বল’ ফিলিস্তিনের।
বিপরীতমুখী এ দুই শক্তির প্রথমটিকেই বেছে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ৬ ডিসেম্বর তিনি পবিত্র জেরুজালেম শহরকে ইসরায়েলের
রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা ঘোষণায় আপত্তি
জানায় জাতিসংঘ, রাশিয়া, আরব ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, এমনকি
যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
বলেন, তাঁর সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না। এটি
মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি আলোচনার জন্য সহায়ক নয়। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে
ফ্রান্স ও জার্মানি। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ট্রাম্পের ঘোষণার সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার নিন্দা করেছে সৌদি আরব, ইরান, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান,
মালয়েশিয়া, তুরস্ক।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র
যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেন, এ রকম সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে ‘বিপজ্জনক ফল’
বয়ে আনবে। হামাস ‘দ্বিতীয় ইন্তিফাদা’র ডাক দিয়ে মন্তব্য করে, ট্রাম্পের এই
ঘোষণা ‘নরকের দরজা’ খুলে দিল। ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরে প্রবল
প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়, মানুষ হতাহত হয়। এত দিন মার্কিন নীতি ছিল সমঝোতার
মাধ্যমে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের সুরাহা। কিন্তু ট্রাম্প পূর্বসূরিদের সেই
ধারাবাহিকতা থেকে সরে এলেন। গত ১৮ ডিসেম্বর নিরাপত্তা পরিষদে জেরুজালেম
প্রশ্নে মিসরের উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ১৪টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। শুধু
যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়। ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের
সাধারণ পরিষদে জেরুজালেম বিষয়ে উত্থাপিত প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বীকৃতির বিপক্ষে ভোট দেয় ১২৮টি দেশ। বিপক্ষে মাত্র
৯টি দেশ। যদিও ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে, তবু প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটির আগে তাঁর বিপক্ষে ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে
আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। তারপরও বিশ্বসম্প্রদায়
ট্রাম্পকে যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, ট্রাম্প বললেই জেরুজালেম ইসরায়েলের
রাজধানী হচ্ছে না। শহরটির বর্তমান মর্যাদা অপরিবর্তিতই থাকছে।
No comments