পদত্যাগে বাধ্য নওয়াজ শরিফ
পাকিস্তানের
ইতিহাসে কোনো বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এবারও তার
ব্যতিক্রম হয়নি। নওয়াজ শরিফ আর এক বছরের কম সময় পরে পাকিস্তানের ইতিহাসে
মেয়াদ পূর্ণ করা প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পানামা পেপারস
কেলেঙ্কারির জেরে ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে
থাকার অযোগ্য বলে ঘোষিত হওয়ার পর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। নওয়াজ শরিফ
তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনবারই মেয়াদ শেষ করার আগেই
ক্ষমতা হারিয়েছেন। প্রথমবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে পদত্যাগ।
দ্বিতীয়বার সেনাবাহিনী তাঁকে হঠায়, এবার তাঁকে যেতে হলো আদালতের রায়ে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের
সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের তথ্য প্রকাশিত হয়। ওই
অভিযোগ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই নওয়াজকে অযোগ্য ঘোষণা করে রায়
দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। অ্যাটর্নি জেনারেল আসতার আউসাফ বলেন, নওয়াজ
শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি
ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এর পরপরই নওয়াজ
শরিফ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। প্রসঙ্গত, পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক
প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া নথিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাবেক ও
বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে ক্রীড়া ও বিনোদনজগতের তারকা ও
ব্যবসায়ীদের বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য সামনে আসে, যা পানামা পেপারস
কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পায়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজের বিরুদ্ধে
আসা বিষয়গুলো নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির ঘটনা। ২০১৭ সালেও একই রকমের
নথিভান্ডার নিয়ে ফাঁস হয়েছে ‘প্যারাডাইস পেপারস’। তাতে বাংলাদেশেরও একাধিক
ব্যক্তির নাম আছে। নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের পর পাকিস্তানের সংবিধান বিশেষজ্ঞ
ও মানবাধিকার কমিশনের সাবেক আইনজীবী আফ্রাসিয়াব খটক এক নিবন্ধে মন্তব্য
করেন: নওয়াজ শরিফের পরিণতি যেন পাকিস্তানের গণতন্ত্রের প্রতীক। বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার পর ‘নতুন পাকিস্তানের’ রাজনীতি বাঁধা পড়ে আছে ‘প্রচলিত
গণতন্ত্র’ ও ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের’ দ্বন্দ্বের মধ্যে।
No comments