চিকিৎসকেরা কেন গ্রামে থাকেন না
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ
অনুষ্ঠানে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের
অনুপস্থিতি নিয়ে যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রার্থীদের
মনের কথাই প্রতিফলিত হয়েছে। কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব
পালন করা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরই কর্তব্য। চিকিৎসাসেবায় যুক্ত ব্যক্তিদের
ক্ষেত্রে তা আরও বেশি জরুরি এ জন্য যে এর সঙ্গে মানুষের জীবনরক্ষার প্রশ্ন
যুক্ত। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগেও গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকদের
কর্মস্থলে না থাকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। শাস্তির ভয় দেখিয়েছেন। এবার
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকেরা কর্মস্থলে না থাকলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ
দিয়ে বলেছেন, তাঁদের স্থলে নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। কিন্তু সেই নতুন
লোকেরা যে পুরোনোদের অনুসরণ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী। গ্রামাঞ্চলে
চিকিৎসকদের কর্মস্থলে না থাকার কারণগুলো আগে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সরকারি
হাসপাতালে চিকিৎসক বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেসব অনিয়ম,
দুর্নীতি ও
বিশৃঙ্খলা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। বিএনপি আমলে যেমন স্বাস্থ্য প্রশাসনে
ড্যাব ছড়ি ঘোরাত, তেমনি এখন স্বাচিপও একই কাজ করছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক
পদোন্নতি ও বদলি হয়ে থাকে, এতে দলীয় বৃত্তের বাইরের চিকিৎসকেরা হতাশ ও
ক্ষুব্ধ। যখন গ্রামাঞ্চলে পদায়ন পাওয়া কোনো চিকিৎসক দেখেন, রাজনৈতিক
বিবেচনায় তাঁর চেয়ে কম মেধাবীরা শিক্ষাকালীন ছুটি পেয়ে যাচ্ছেন, তখন পেশার
প্রতি একনিষ্ঠ থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আবার কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে
কাউকে শাস্তি দেওয়া আর কাউকে পুরস্কৃত করার প্রবণতাও পরিহার করা বাঞ্ছনীয়।
জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা যখন পদ না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বিবেচনায় বছরের পর
বছর ঢাকা ও এর আশপাশে পদায়নের ব্যবস্থাটি চিরস্থায়ী করে নেন, তখন
গ্রামাঞ্চলে নবীন সহকর্মীদের সুপরামর্শ নিষ্ফল রোদনে পরিণত হতে বাধ্য। আবার
অনেক সময় জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা ঢাকায় পাঁচ দিন অফিস করে ছুটির দুদিন
গ্রামাঞ্চলে যান রোগী দেখতে। এটিও তরুণ চিকিৎসকদের সেখানে থাকতে নিরুৎসাহিত
করে। অতএব আমরা মনে করি, শুধু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নবীন চিকিৎসকদের
গ্রামমুখী করা যাবে না। সে জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি সব
স্তরে পদোন্নতি ও পদায়নে ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
No comments