শীতের দুর্লভ ফুল
খ্রিষ্টীয়
নববর্ষের এই শীতসময়ে আমাদের প্রকৃতি অনেকটাই নিষ্প্রাণ ও বর্ণহীন হয়ে ওঠে।
তখন কিছু বর্ষজীবী মৌসুমি ফুল আমাদের প্রকৃতির আঙিনা সাজিয়ে দেয়। দূরের
বনে আমাদের অজান্তে ফোটে বনজাম, বনকলমি, কুচাই, তুন, লতাকাঞ্চনসহ আরও
কিছু ফুল। তবে আমাদের নগর উদ্যানগুলোতে শীতের দৈন্য ঘোচাতে ইতিমধ্যেই এসে
থিতু হয়েছে কিছু বিদেশি ফুল। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণ অশোক, রাজ অশোক ও
সোনাঝুরিলতা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে স্বর্ণ অশোক শীতের বিরলতম ফুলগুলোর
মধ্যে অন্যতম। জানামতে ঢাকায় স্বর্ণ অশোকের (sarace thaipingensis) একটিই
পরিণত গাছ আছে বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশে। তবে কখন বা কোথা থেকে গাছটি
এখানে লাগানো হয়েছিল তা জানা যায় না। আরেকটি পরিণত গাছ আছে ময়মনসিংহে
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। পৌষের প্রথম ভাগেই এ
গাছের কাণ্ড ও ডালপালাজুড়ে সুগন্ধি ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। আমাদের দেশে
যে কয়েক ধরনের অশোক পাওয়া যায় তার মধ্যে স্বর্ণ অশোক বেশ আকর্ষণীয়।
অন্যান্য অশোকের সঙ্গে প্রস্ফুটনকালের কিছুটা ভিন্নতাও রয়েছে। ফুল উজ্জ্বল
সোনালি রঙের বলেই নাম স্বর্ণ অশোক। গাছ মাঝারি আকৃতির। কাণ্ড কালচে
রঙের, ডালপালা ঊর্ধ্বমুখী ও শক্তপোক্ত ধরনের।
অন্যান্য অশোকের তুলনায়
স্বর্ণ অশোকের পাতা খানিকটা বড়। গাছজুড়ে হলুদ-সোনালি রঙের অসংখ্য
গুচ্ছবদ্ধ ফুল ফোটে। তখন ডালপালা পুষ্পভারে কিছুটা আনত থাকে। গুচ্ছবদ্ধ
ফুলগুলো উজ্জ্বল রঙের হওয়ায় অনেক দূর থেকেই নজর কাড়ে। স্বর্ণ অশোক
চিরসবুজ ছায়াঘন বৃক্ষ। সাধারণত ১০ থেকে ২৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
পত্র পক্ষল যৌগিক, পত্রাক্ষ ২০ থেকে ৫৬ সেন্টিমিটার লম্বা ও রোমহীন।
পুষ্পবিন্যাস পর্যায়ক্রমিক, ১৭ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার প্রশস্ত, প্রধান
শাখাসমূহ ৭ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার। পুষ্পদলহীন, সোনালি-হলুদ থেকে ফিকে কমলা,
নলাকার, মঞ্জরিপত্র ডিম্বাকার, মঞ্জরিপত্রিকা ২টি, ২ থেকে ৫ মিলিমিটার
লম্বা, বৃন্ত ১০ মিলিমিটার লম্বা, পুষ্পাধার ১ থেকে আড়াই সেন্টিমিটার
লম্বা। বৃত্যংশ ৪টি, ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার, হলুদ। পুংকেশর ৩ থেকে ৬টি,
পরাগধানী উপবৃত্তাকার, ১ থেকে ২ মিলিমিটার লম্বা। ফল পড আকৃতির। চিরসবুজ
অরণ্য এবং উষ্ণ অঞ্চল পছন্দ। আদি আবাস মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও
শ্রীলঙ্কা।
No comments