জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে তিন কারণে
তিন কারণে বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে বলে মনে করেছে জাতিসঙ্ঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন (এসকাপ)। এসকাপ মনে করছে, আগামীতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৈশ্বিক নীতি অস্থিতিশীল হতে পারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি আরো কঠোর হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী বছরের অর্থনীতিতে। আর আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কমার অভ্যন্তরীণ কারণ হিসেবে দেখছে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতন। এসকাপের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল সার্ভে অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক প্রতিবেদনে এ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগাগাঁওয়ের আইডিবি ভবন সম্মেলন কক্ষে এ প্রতিবেদন উন্মোচন করা হয়। এ সময় জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স, ইউএন এসকাপের ব্যাংকক কার্যালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক কর্মকর্তা সুদীপ রঞ্জন বসু এবং বিআইডিএস মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, সরকার বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে হবে। আর এসকাপ তা প্রক্ষেপণ করেছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনটির উপস্থাপনায় সুদীপ রঞ্জন বসু বলেন, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৫৩টি দেশ এসকাপের সদস্য। প্রতি বছরই এসকাপ দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যে দেশে সুশাসনের মাত্রা যত বেশি সে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ততই ভালো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবদ্ধি করতে পারে। আমাদের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী কয়েকটি কারণে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যদিও সামগ্রিকভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরে এ অঞ্চলের সব দেশের সমন্বিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধরে রাখার জন্য কয়েকটি পরামর্শ রেখেছে। সেগুলো হচ্ছেÑ মানসম্মত চাকরির সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়া। শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে শিল্পবান্ধব নীতি গ্রহণ। মানবসম্পদের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা চিহ্নিত করে তা সরিয়ে ফেলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা। এক প্রশ্নের জবাবে বিআইডিএস মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ আগামী অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, মাত্র ৩২ হাজার রেজিস্ট্রার্ড ভ্যাটদাতা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলে এটা দেশের অর্থনীতিতে বা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিআইডিএস মহাপরিচালক বলেন, দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার অভাবে বিনিয়োগ বাড়ছে না। একই কারণে বিদেশে অর্থপাচার হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
No comments