পরাজয়ে ডরে না বীর
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মধ্যপন্থী প্রার্থী এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে ব্যাপক ব্যবধানে ধরাশয়ী হওয়ার পরও এ নির্বাচনকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করেছেন মেরিন লি পেন। কট্টর ডানপন্থী এ প্রার্থী রোববার ফলাফল ঘোষণার পর পরাজয়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ঐতিহাসিক, বিশাল ফলাফল’। তিনি আরও বলেন, আমার দল ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এফএন) ফ্রান্সে ‘নতুন রাজনৈতিক শক্তি’ হিসেবে উত্থানের পথে বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। রোববার ফ্রান্সের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন ম্যাক্রোঁ। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ ভোট পান লি পেন। ফ্রান্সের ইতিহাসে মূলধারার রাজনৈতিক দলের বাইরের কোনো প্রার্থীর এমন ফলাফল সত্যিই ঐতিহাসিক। লি পেন তার বক্তব্যে ম্যাক্রোঁর সফলতা কামনা করেন। প্যারিসের নিকটবর্তী শহর ভিনেসেসে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশে লি পেন বলেন, এ নির্বাচনে জয়ে আমি ম্যাক্রোঁকে অভিনন্দন জানাই। ফ্রান্সের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ম্যাক্রোঁর সফলতাও কামনা করেন তিনি। তাকে ভোটদানকারী প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ নাগরিককে ধন্যবাদ জানান লি পেন। ৪৮ বছর বয়সী এ নেতা বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার এ ফলাফলে এফএন পার্টি দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি ঘোষণা করেন, জুনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবে তার দল। লি পেন বলেন, “এবারের নির্বাচন ‘দেশপ্রেম ও বিশ্বায়নের’ মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে এবং এটি একটি ‘নতুন রাজনৈতিক শক্তির’ আবির্ভাব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর ফলে নতুন করে এফএনকে সংস্কার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। নতুন আন্দোলনের পথে পা বাড়ানোর শক্তি সঞ্চার হয়েছে।’ ফ্রান্সের সব দেশপ্রেমিককে তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে,
লি পেন ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ভোটারদের প্রায় ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাক্রোঁ পেয়েছেন ৫৬ শতাংশ তরুণের ভোট। লি পেনের প্রচারণা শিবির আগেই ধারণা করেছিল, এফএন পার্টি পুরুষদের চেয়ে নারী ভোট বেশি পাবে এবং দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের ভোট পাবেন। তবে তরুণদের ভোট এফএন দলকে আরও শক্তি জুগিয়েছে। এসব তরুণ ভোটারের সমর্থন পেয়ে আগামী ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছেন লি পেন। তবে লি পেনের পরাজয়ে এই বাস্তবতা সামনে এসেছে যে, ইউরোপ থেকে কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক নেতাদের পতন ঘটছে। পশ্চিমা বিশ্বে অভিবাসীবিরোধী জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সে উগ্র ডানপন্থী প্রার্থীর পতন ঘটল। আগামী সেপ্টেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্প্রতি জার্মানির আঞ্চলিক নির্বাচনেও ইউরোপবিরোধী প্রার্থী ধরাশয়ী হয়েছেন। আদতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য লি পেনের এ পরাজয় হল। মার্কিন নাগরিকদের কাছে অভিবাসী বিতাড়ন করার স্বপ্ন দেখিয়ে গত নভেম্বরে জয় পান ট্রাম্প। একই পথে হাঁটছিলেন লি পেন। ট্রাম্পের জয়ে নির্বাচনের দিন রাতেই তাকে অভিনন্দন জানানো প্রথম রাজনৈতিক নেতাও তিনি। এর একদিন পর নেদারল্যান্ডের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী নেতা গার্ট ওয়াইল্ডার উল্লাস প্রকাশ করেন। মার্চের নির্বাচনে তিনিও ছিটকে পড়েন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় লি পেন ট্রাম্পের নীতি গ্রহণ করে ঘোষণা দেন, ফ্রান্স থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করবেন তিনি। ট্রাম্পের এ নীতিই এখন তার জন্য কাল হল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
No comments