তরমুজের বিষাক্ত রঙ শনাক্তে সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন
তরমুজের বিষাক্ত রং শনাক্তে অত্যন্ত সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল। এ পদ্ধতিতে কোনো ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াই মাত্র পাঁচ মিনিটে তরমুজে ক্ষতিকর রং থাকলে সেটি শনাক্ত করা সম্ভব। ফলে তরমুজে ক্ষতিকর রং মেশানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে এখন আর বেগ পেতে হবে না। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষক দল যুগান্তরকে এ তথ্য জানায়। রসায়ন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নীলুফার নাহারের তত্ত্বাবধানে দুই তরুণ গবেষক তানহাউল ইসলাম এবং আহসান হাবীব খন্দকার এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব এবং প্রভাষক মো. কামরুল হাসাান। সামগ্রিক গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. নীলুফার নাহার যুগান্তরকে বলেন, তরমুজে ক্ষতিকর রং মেশানো হচ্ছে এবং তা খেয়ে অনেকে মারা গেছেন এমন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা গবেষণা শুরু করি। শুরুতে আমরা ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখি। যাতে তরমুজের ভেতরে সিরিঞ্জ দিয়ে ‘রেড-৩’ নামের একটি রঙ ঢোকাতে দেখা যায়। এই রঙ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তাই এই রঙের সূত্র ধরেই আমরা একটি দলকে নাটোরে পাঠাই এবং সেখানকার তরমুজ ক্ষেত থেকে সাদা ও সবুজ রঙের মোট ১৩টি তরমুজ আনা হয়। সেগুলো নিয়েই শুরু হয় গবেষণা। তিনি আরও বলেন, তরমুজের রঙের সঙ্গে ‘রেড-৩’ এবং ‘রেড-৪০’ রঙের মিল রয়েছে। আমরা তরমুজের রসের সঙ্গে এ রঙ মিলিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চালাতে থাকি। গবেষণার একপর্যায়ে দেখা যায়, ‘রেড-৩’ এবং ‘রেড-৪০’ পানিতে দ্রবণীয় এবং তরমুজের রং (লাইকোপিন) পানিতে দ্রবণীয় নয়। তরমুজের আসল রস স্যান্ট্রিফিউজ মেশিনের (প্রতি মিনিটে ৪ হাজার বার ঘোরে) মাধ্যমে ঘুরাতে থাকলে রংটা নিচে চলে যায় এবং ওপরে সাদা পানি থাকে। কিন্তু যখন ওই দুটি রং মেশানো হয়, তখন তরমুজের রং নিচে গেলেও ওপরের পানিটা রঙিন হয়ে যায়। আর তখনই প্রমাণ হয় এতে ক্ষতিকর রং রয়েছে। এ গবেষণা অত্যন্ত সহজ ও সুলভমূল্যে করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, বাজারে যেসব তরমুজ পাওয়া যায়, তাতে ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা জানতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পঞ্চাশেরও অধিক তরমুজ আনা হয়। সেসব তরমুজে আমরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্ষতিকর রঙের অস্তিত্ব পাইনি। তিনি জানান, নাটোর থেকে যে তরমুজগুলো আনা হয়েছিল তাতে ইঞ্জেকশন দিয়ে রং ঢোকানের চেষ্টা করা হয়। তখন সেই রং বেড়িয়ে আসছিল। ফলে তরমুজে রং মেশানোর ঢালাওভাবে যে অভিযোগ তার সত্যতা আমরা পাইনি।
No comments