সারা বিশ্বে এখনও কতো সিংহ বেঁচে আছে: ৯টি তথ্য যা হয়তো আপনার জানা নেই
সিংহের গড় আয়ু ১৩ বছর। |
সিংহকে বলা হয় রাজকীয় বন্যপ্রাণী
অর্থাৎ বনের রাজা। কিন্তু এই প্রাণীটিই এখন বিপন্ন প্রজাতির তালিকায়। এর
দুটো প্রজাতি এখনও টিকে আছে- আফ্রিকান সিংহ ও এশীয় সিংহ।
মানুষের কাছে ক্যারিশম্যাটিক প্রাণী হিসেবে পরিচিত এই সিংহ যা অত্যন্ত তেজস্বী, ক্ষিপ্র এবং অসাধারণ সুন্দর।
একারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপনে অহরহই এই প্রাণীটির ব্যবহার চোখে পড়ে।
এখানে সিংহ সম্পর্কে ৯টি তথ্য তুলে ধরা হলো:
১. সিংহের গর্জন পাঁচ মাইল দূর থেকেও শোনা যায়
বিড়াল
প্রজাতির যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সিংহের গর্জনই সবচেয়ে বেশি জোরালো। এই
গর্জন এতোই তীব্র যে এটি ১১৪ ডেসিবল হতে পারে এবং শোনা যেতে পারে পাঁচ মাইল
দূর থেকেও।
সিংহের গর্জন এতো তীব্র হওয়ার পেছনে কারণ এই প্রাণীটির
স্বরযন্ত্রের আকার। বেশিরভাগ প্রাণীর ভোকাল কর্ড সাধারণত ত্রিভুজাকৃতির।
কিন্তু সিংহের ভোকাল কর্ড চতুর্ভুজ আকারের। এছাড়াও এটি চেপটা।
একারণে তারা বাতাসের উপর খুব সহজেই অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এর অর্থ হলো অল্প চেষ্টাতেই শক্তিশালী গর্জন।
২. পুরুষ সিংহ দিনে ৪০ কেজির বেশি মাংস খেতে পারে
বন্যপ্রাণীর
ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেঁচে থাকতে হলে একটি নারী সিংহের দিনে
গড়ে পাঁচ কেজি এবং পুরুষ সিংহের সাত কেজি মাংসের দরকার হয়।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে একদিনে এই প্রাণীটি যত মাংস ভক্ষণ করে তার পরিমাণ আট থেকে নয় কেজি।
তবে
তারা এর চেয়েও অনেক বেশি মাংস খেতে পারে। দেখা গেছে একটি সিংহী এক দিনে
২৫ কেজি এবং একটি সিংহ এক বসাতেই ৪০ কেজিরও বেশি মাংস খেতে পারে।
৩. ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে
বন্যপ্রাণীদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম প্রাণী এই সিংহ যা কিনা ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে।
সিংহীর
(বেশিরভাগ শিকার এই প্রাণীটিই করে থাকে) হৃৎপিণ্ডের ওজন তার দেহের ওজনের
তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। ফলে তার মানসিক শক্তি বা স্ট্যামিনা
এখানে মূল বিষয় নয়।
বরং এই দ্রুত গতির কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র স্বল্প
দূরত্বের জন্য। আর একারণে কোন শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে তাকে খুব
কাছ থেকে আক্রমণ শুরু করতে হয়।
৪. কেশর থেকে জানা যায় বয়স
পুরুষ সিংহ চেনার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে এর কেশর। এর রঙ যত গাঢ় প্রাণীটির বয়সও ততই বেশি।
এ থেকে আরো বোঝা যায় যে পুরুষ সিংহ থেকে প্রচুর টেস্টোসটেরন হরমোন নির্গত হয়। ফলে এর শক্তিও হয় বেশি।
একারণে কালো কেশরের পুরুষ সিংহ প্রচুর সংখ্যক নারী সিংহকে আকৃষ্ট করতে পারে।
৫. একমাত্র বিড়াল যার লেজের প্রান্তে পশমের গোছা
বিড়াল প্রজাতির যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সিংহ-ই একমাত্র প্রাণী যার লেজের একেবারে শেষ প্রান্তে পশমের গোছা আছে।
কেশর থেকে সিংহের বয়স বোঝা যায়। |
অন্যান্য প্রাণীর সাথে এটি যোগাযোগের একটি হাতিয়ার। তার পালে আরো যেসব সদস্য থাকে এই গোছার মাধ্যমে সে তাদেরকে বার্তা দিয়ে থাকে।
লেজের এই গোছার মাধ্যমে সে অন্যান্যদের দিক নির্দেশনা দেয়, আদেশ দেয় এবং তার ভালোবাসার কথাও প্রকাশ করে থাকে।
৬. সবচেয়ে বৃদ্ধ সিংহের বয়স ২৯ বছর
সিংহের
গড় আয়ু ১৩ বছর। কিন্তু যদি তারা কোন খাঁচায় থাকে, যখন বেঁচে থাকার
জন্যে তাদেরকে শক্তি ও শিকারের ক্ষমতার উপর নির্ভর করতে হয় না, তখন তারা
এরচেয়েও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে।
এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বয়সী সিংহের কথা রেকর্ড করা হয়েছে তার বয়স ছিল ২৯ বছর।
৭. রাতের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চাইতে ৬ গুণ বেশি
দিনের বেলায় একটি সিংহের যে দৃষ্টিশক্তি তার সাথে মানুষের দৃষ্টিশক্তির খুব বেশি পার্থক্য নেই।
সিংহের রেটিনায় কম 'কোন সেল' থাকার কারণে তারা কম রঙ দেখতে পায়। কিন্তু রাতের বেলায় এই প্রাণীটির দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি বদলে যায়।
বলা হয় খাঁচার সিংহ বাঁচে বেশি দিন। |
সিংহের
চোখে আছে প্রচুর ফটো-রিসেপ্টর সেল - যা চোখে আলো প্রবেশ করা মাত্রই সেটা
গ্রহণ করে। তারপর রেটিনার পেছনে যে রিফ্লেকটিভ মেমব্রেন আছে সেখানে ওই আলো
প্রতিফলিত হয়ে গিয়ে পড়ে আলো-সংবেদনশীল কোষে।
সিংহের চোখে আছে শাদা স্ট্রিপ যা থেকে চোখের মণিতে যতো বেশি সম্ভব আলো প্রতিফলিত হয়।
এসব কিছুর অর্থ হলো : দেখার জন্যে মানুষের চোখে যত আলোর প্রয়োজন হয় তার ছ'ভাগের এক ভাগ আলোতেই সিংহ দেখতে পায়।
৮. এক মাইল দূর থেকেও শিকারের আওয়াজ শুনতে পায়
সিংহের শ্রবণশক্তি অত্যন্ত তীব্র। এর কান এমনভাবে তৈরি যাতে যেদিক থেকে শব্দ আসে সেদিকে তার কান ঘুরিয়ে দিতে পারে।
তার
এই স্পর্শকাতর শ্রবণশক্তি কারণে সহজেই যে শিকারকে শনাক্ত করতে পারে। এমনকি
ঘন ঝোপের পেছনেও যখন কোন প্রাণী নিজেকে আড়াল করে রাখে, কিম্বা এক মাইল
দূরেও থাকে, সিংহ ঠিকই বুঝতে পারে তার খাদ্যটি এখন কোথায় আছে।
৯. সারা বিশ্বে আছে ২০,০০০ সিংহ
আফ্রিকায় সিংহের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমছে। বলা হচ্ছে, গত তিন প্রজন্মে এই প্রাণীটির সংখ্যা সেখানে ৪০% হ্রাস পেয়েছে।
এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে সিংহের বসতি ধ্বংস করা, খাবার কমে যাওয়া। সিংহ শিকারও একটি বড় কারণ।
তবে অনুমান করা হয় যে ২০,০০০ থেকে ৩৯,০০০ সিংহ এখনও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এক মাইল দূর থেকেও শিকারের শব্দ পায় এই প্রাণীটি। |
No comments