চীন ও ভারতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখছেন শেখ হাসিনা by ঝাং জিয়ায়ু
বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন দিনের চীন সফর শেষ করেছেন। গত
জানুয়ারিতে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের নেতার এটিই প্রথম চীন সফর।
এটি অনেকটাই সফল হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সাথে সাক্ষাত করেন, চীনের সাথে ৯টি চুক্তিতে সই করেন। বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেন। চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর জোরদার করতে বাংলাদেশের ভূমিকা বাড়াতে তিনি রাজি হন।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক অপ্রত্যাশিতভাবে আসেনি। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের অর্থনীতি বিকশিত করা।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দশক থেকে বছরে গড়ে ৬.৩ ভাগ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে হয় ৭.৩ ভাগ।
দ্রুত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের আরো উন্নত অবকাঠামোর প্রয়োজন, বিনিয়োগ ও কারিগরি সমর্থন দরকার। চীন কেবল ঋণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরই করছে না, সেইসাথে পরিবহণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ও টেলিযোগাযোগের মতো খাতে অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণেও জড়িত রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন ও বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা লালন করে।
এ কারণেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা হতে পারে পরিপূরক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাভিত্তিক।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী বাংলাদেশ। হাসিনার সফরকালে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। হাসিনার সরকার উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তা দিতে থাকলেও সঙ্কটটির সমাধান এখনো হয়নি এবং উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য উদ্বাস্তুদের জন্য ২,৫০০ টন চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ২০১৭ সাল থেকেই চীন সঙ্কটটি সমাধানের চেষ্টা করছে। দেশটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সংলাপ ও আলাপ আলোচনা করার জন্য উৎসাহিত করছে।
দৃশ্যত, চীনের কাছ থেকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা আশা করছে বাংলাদেশ। আরো ভালো অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য, বিশেষ করে বিসিআইএম করিডোর নির্মাণের জন্য একটি স্থিতিশীল আঞ্চলিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত সফরটি তার বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। যদিও ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে চীনা প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু তবুও চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে ইতস্তত করছেন না হাসিনা। দেশের ভেতরে ও বাইরে তাকে ভারতপন্থী রাজনৈতিক নেতা বিবেচনা করা হয়। কারণ তিনি যৌবনে ছয়টি বছর ভারতের প্রবাস জীবন যাপন করেছেন।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে তার অবস্থানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তিনি দেশটির সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার প্রতিশ্রুতি অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অনেক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। তিন দিক থেকে ঘিরে থাকা দেশটির পক্ষে ভারতের সাথে সঙ্ঘাতে যাওয়া কল্যাণকর হবে না।
শেখ হাসিনা পরিকল্পিতভাবে চীন বা ভারতের পক্ষ বেছে নেননি। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ নজর দিয়ে থাকেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশ চায় সব প্রতিবেশীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে। তার পররাষ্ট্রনীতিতে বৈপরীত্য নেই।
দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী আঞ্চলিক দেশ হিসেবে চীনও চায় তার সাফল্য বাংলাদেশের সাথে ভাগাভাগি করতে।
এবার প্রেসিডেন্ট শি ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা জোরদার করতে এবং যৌথভাবে ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শির চিন্তাভাবনার সাথে হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা মিলে গেছে। তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, যুব ও মিডিয়া বিনিময়ে আগ্রহী চীন।
এটি আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের ব্যবস্থা করে দিতে পারে, উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া নিশ্চিত করতে পারে। চীন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অংশীদার।
>>>লেখক: পরিচালক, বেঙ্গালি স্টাডিজ, কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়না
শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সাথে সাক্ষাত করেন, চীনের সাথে ৯টি চুক্তিতে সই করেন। বিদ্যুৎ, প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও সংস্কৃতি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেন। চীনা প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর জোরদার করতে বাংলাদেশের ভূমিকা বাড়াতে তিনি রাজি হন।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক অপ্রত্যাশিতভাবে আসেনি। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের অর্থনীতি বিকশিত করা।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দশক থেকে বছরে গড়ে ৬.৩ ভাগ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধির হার ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাপিয়ে হয় ৭.৩ ভাগ।
দ্রুত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের আরো উন্নত অবকাঠামোর প্রয়োজন, বিনিয়োগ ও কারিগরি সমর্থন দরকার। চীন কেবল ঋণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরই করছে না, সেইসাথে পরিবহণ, বিদ্যুৎ বিতরণ ও টেলিযোগাযোগের মতো খাতে অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণেও জড়িত রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীন ও বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা লালন করে।
এ কারণেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা হতে পারে পরিপূরক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাভিত্তিক।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী বাংলাদেশ। হাসিনার সফরকালে এই ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। হাসিনার সরকার উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তা দিতে থাকলেও সঙ্কটটির সমাধান এখনো হয়নি এবং উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য উদ্বাস্তুদের জন্য ২,৫০০ টন চাল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। ২০১৭ সাল থেকেই চীন সঙ্কটটি সমাধানের চেষ্টা করছে। দেশটি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সংলাপ ও আলাপ আলোচনা করার জন্য উৎসাহিত করছে।
দৃশ্যত, চীনের কাছ থেকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা আশা করছে বাংলাদেশ। আরো ভালো অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য, বিশেষ করে বিসিআইএম করিডোর নির্মাণের জন্য একটি স্থিতিশীল আঞ্চলিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনার সদ্য সমাপ্ত সফরটি তার বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন। যদিও ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে চীনা প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু তবুও চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে ইতস্তত করছেন না হাসিনা। দেশের ভেতরে ও বাইরে তাকে ভারতপন্থী রাজনৈতিক নেতা বিবেচনা করা হয়। কারণ তিনি যৌবনে ছয়টি বছর ভারতের প্রবাস জীবন যাপন করেছেন।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে টানা তৃতীয় মেয়াদে তার অবস্থানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, তিনি দেশটির সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে রাখার প্রতিশ্রুতি অক্ষুণ্ন রেখেছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অনেক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। তিন দিক থেকে ঘিরে থাকা দেশটির পক্ষে ভারতের সাথে সঙ্ঘাতে যাওয়া কল্যাণকর হবে না।
শেখ হাসিনা পরিকল্পিতভাবে চীন বা ভারতের পক্ষ বেছে নেননি। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ নজর দিয়ে থাকেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশ চায় সব প্রতিবেশীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে। তার পররাষ্ট্রনীতিতে বৈপরীত্য নেই।
দায়িত্বশীল ও প্রভাবশালী আঞ্চলিক দেশ হিসেবে চীনও চায় তার সাফল্য বাংলাদেশের সাথে ভাগাভাগি করতে।
এবার প্রেসিডেন্ট শি ডিজিটাল অর্থনীতিতে সহযোগিতা জোরদার করতে এবং যৌথভাবে ডিজিটাল সিল্ক রোড নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শির চিন্তাভাবনার সাথে হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা মিলে গেছে। তাছাড়া বাংলাদেশের সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, যুব ও মিডিয়া বিনিময়ে আগ্রহী চীন।
এটি আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের ব্যবস্থা করে দিতে পারে, উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া নিশ্চিত করতে পারে। চীন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অংশীদার।
>>>লেখক: পরিচালক, বেঙ্গালি স্টাডিজ, কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়না
No comments