ফিলিস্তিনি কিশোরী তুলল প্রতিবাদের ঝড়
মেয়েটির
নাম আহেদ তামিমি। বয়স ১৬। সুন্দর একটা কৈশোর কাটানো তার অধিকার। তবে সে এই
অধিকার থেকে বঞ্চিত। জন্মের পর থেকে সে দেখে আসছে, তার জন্মভূমি
ফিলিস্তিনে চলছে সংঘাত-সহিংসতা। তবে এসব দেখে নীরবে সয়ে যাওয়ার মেয়ে সে না।
যেখানে যেভাবে যতটুকু প্রতিবাদ করা যায়, সে তা-ই করে। সম্প্রতি ইসরায়েলি
সেনার গালে চড় মারার ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর ফিলিস্তিনে প্রতিবাদের প্রতীক
হয়ে উঠেছে কিশোরীটি। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনি
মানুষ। কারণ, পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে চায় তারাও। এ নিয়ে
ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ, সেই প্রতিবাদ থামাতে ইসরায়েলের দমন-পীড়ন—সব মিলিয়ে
সংঘাতের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অঞ্চলটিতে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন
সিদ্ধান্ত আর দশটা ফিলিস্তিনির মতো মেনে নিতে পারেনি কিশোরী আহেদ তামিমিও।
পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে নিজেদের বাড়ির সামনে ইসরায়েলের সেনাদের দেখে
নিজেকে আর সংযত করতে পারেনি সে। ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথমে মেয়েটি ইসরায়েলি সেনাদের সেখান
থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলে।
চিৎকার করতে থাকে। সেনারা তাকে সরে যেতে বলে। এ
নিয়ে কথা-কাটাকাটি চলতে থাকে দুই পক্ষের মধ্যে। একপর্যায়ে এক ইসরায়েলি
সেনার গালে চড় মারে কিশোরী আহেদ। আল-জাজিরা বলছে, কিশোরীর সেই চড় হজম করতে
পারেনি ইসরায়েলি সেনা দলের সদস্যরা। ঘটনার কিছু সময় পর কিশোরী আহেদকে
গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় তারা। পরের দিন বাড়িতে হানা দিয়ে তছনছ করে সব।
মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পুলিশ স্টেশনে গেলে মা নারিমান আল তামিমিকেও
গ্রেপ্তার করা হয়। মা-মেয়ের কেউই মুক্তি পাননি। বরং তাঁদের আটকাদেশের মেয়াদ
বেড়েছে। নিউজউইক বলছে, ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ইসরায়েল।
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারম্যান গতকাল মঙ্গলবার বলেন, শুধু ওই
কিশোরী নয়, এ ঘটনার জন্য দায়ী তার বাবা-মাসহ কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রাপ্য সাজা তাদের ভোগ করতেই হবে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ যদি কোনো ধরনের
বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে, তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে। এই কড়া বার্তাটি সবাইকে
মনে রাখার ও মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। আহেদ তামিমি যে এবারই প্রথম এমন
ঘটনা ঘটাল, তা নয়। নয় বছর বয়স থেকে সে ইসরায়েলবিরোধী মিছিলে শামিল হয়। ২০১৪
সালে বাড়ির কাছ থেকে ছোট ভাইকে ইসরায়েলি বাহিনীর লোকজন ধরে নিতে গেলে সে
বাধা দিয়েছিল। কিন্তু এতেও আটকাতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
সদস্যের হাত কামড়ে ধরেছিল সে। আর তার পুরো পরিবারই প্রতিবাদী। আহেদের বাবা
বাসেম আল তামিমিও তাঁদের গ্রামে একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে পরিচিত, যিনি
সব সময়ই ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বলে যান। কী
কারণে আহেদ তামিমি এত খেপে গিয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাবা বাসেম
বলেন, কয়েক দিন আগেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আহেদের ১৪ বছর বয়সী চাচাতো
ভাই গুলিবদ্ধ হয়। টানা তিন দিন কোমায় থাকার পর তার জ্ঞান ফেরে। প্রায়
সমবয়সী ভাইয়ের এমন অবস্থা ক্ষুব্ধ করে তুলছিল তাকে। আর সে কারণেই সে
প্রতিবাদ করেছে। মেয়ের সাহসের তারিফ করেছেন বাবা। শুধু পশ্চিম তীর নয়, গোটা
ফিলিস্তিনেই আহেদ এখন প্রতিবাদের প্রতীক। সবাই তার সাহসের প্রশংসা করছে।
বাদিল নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আহেদের মতো শিশুদের এমন আচরণ করার
কারণ ব্যাখ্যা করে বলেছে, জন্মের পর থেকে দমন-পীড়ন দেখতে দেখতে শিশুমনে
নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিশু অসহায়-বিপন্ন বোধ করে। এ থেকে মুক্তির জন্য,
ভালোভাবে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা থেকে তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছে। ভাবছে,
প্রতিবাদেই মুক্তি মিলবে তাদের।
No comments