শীতলক্ষ্যায় নীরব চাঁদাবাজি
নরসিংদীর
পলাশের ডাঙ্গা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ নৌপথে শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রকাশ্যে
মালবাহী নৌযানে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাঁদাবাজদের
হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মালবাহী ছোটখাটো ট্রলারও। ভুক্তভোগীরা বলছেন,
প্রতিটি নৌযান থেকে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌযানের চালকদের মারধরসহ মালামাল লুট করা
হচ্ছে। দীর্ঘদিনের চাঁদাবাজি বন্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে
অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। সরেজমিনে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর এই
পথ দিয়ে প্রতিদিন শত শত মালবাহী জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করছে। ঘোড়াশাল ও পলাশ
ইউরিয়া সার কারখানা, প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেশবন্ধু সুগার মিল,
জনতা জুটমিল, ক্যাপিটাল পেপার মিল, সেভেন রিং সিমেন্টসহ বড় বড়
শিল্পপ্রতিষ্ঠান পলাশ ও কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে অবস্থিত। এসব
প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পণ্য ও কাঁচামাল এই নৌপথে আনা-নেওয়া করা হয়। স্থানীয়
বাসিন্দা ও নৌযান চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজদের হামলা ও
লুটপাটের শিকার হচ্ছে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নৌযানগুলো। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা
নদীর এই পথ দিয়ে আসা বাঁশ, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার আটকে
চাঁদা আদায় করা হয়। পলাশের ডাঙ্গা ও কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীপথে নিয়মিত
যাতায়াতকারী একজন চালক জানান, কালীগঞ্জের মাছুম নামের এক সন্ত্রাসী তার
বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌযান আটকে চাঁদা আদায় করছে।
টাকা না দিলে বাহিনীর
লোকজন লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে মানুষকে আহত করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এসবি বিউটি অব সাকুরা নামে জাহাজের কর্মী মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম
থেকে সার নিয়ে ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানায় আসার পথে গত সোমবার সকালে
ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি ট্রলার নিয়ে ১৫ জন জাহাজে
ওঠে। পরে তারা জাহাজের স্টাফদের অবরুদ্ধ করে চাঁদা দাবি করে। তাদের মধ্যে
একজন বলে, তারা ‘মাছুম ভাইয়ের’ লোক। এই পথ দিয়ে যেতে হলে তাদের চাঁদা দিয়েই
যেতে হবে। চাঁদা দিতে না চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে জাহাজের মাস্টার ইকবাল
হোসেন ও ড্রাইভার আব্দুল সোবাহানকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তিন
হাজার টাকা নিয়ে তারা চলে যায়। অন্যদিকে একজন ট্রলারচালক বলেন, পলাশ থেকে
সার নিয়ে মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার পথে ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ সীমানায় প্রায় সময় মাছুম
বাহিনী ট্রলার আটকে চাঁদা আদায় করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালীগঞ্জ ও
ডাঙ্গা নৌঘাটের এক মাঝি বলেন, মাছুম বাহিনীর ১০ থেকে ১৫ জন লোক কালীগঞ্জ
গুদারাঘাটের পাশে ভূমি অফিসে অবস্থান নিয়ে থাকে। দূর থেকে মালবাহী কোনো
জাহাজ বা ট্রলার এই পথে আসতে দেখলেই ট্রলার নিয়ে এগিয়ে যায় তারা। অনেক সময়
জাহাজ বা ট্রলারের লোকজনের চিৎকার শোনা যায়। কিন্তু সন্ত্রাসী মাছুমের
ভয়ে কেউ সাহস করে এগিয়ে যায় না। সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পোটন
ট্রেডার্সের পলাশ শাখার সুপারভাইজার আল আমিন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে
ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ এলাকায় মাছুম বাহিনীর লোক সারের জাহাজে চাঁদাবাজি করে
আসছে। বিষয়টি নিয়ে পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও পলাশের এমপি (সাংসদ)
কামরুল আশরাফ খান কালীগঞ্জের এমপি মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এ বিষয়ে
স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। এদিকে মাছুমের
বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে গাজীপুর কালীগঞ্জের দড়িসোম এলাকার চিহ্নিত
সন্ত্রাসী। তার নামে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক
মামলা রয়েছে। এদিকে নৌপথে চাঁদাবাজির বিষয়ে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কালীগঞ্জের কিছু লোক নৌপথে টাকা
আদায় করছে। বিষয়টি আমি ওই থানার ওসিকে জানিয়েছি। আমাদের ডাঙ্গার পুলিশ
ক্যাম্পের সদস্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধে নৌপথে টহলের ব্যবস্থা করেছি।’
মাছুম বাহিনীর চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ওসি আলম চাঁদ
বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ
করেনি। মাসুমের নামে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে আগের একটি মামলায় গত দুই দিন
আগে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়।’
No comments