স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা নতুন কমিশনপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের দেশের
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত
হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কাজেই এ দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ ও সদা
প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে এ স্বাধীনতা নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না
পারে।’
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে
৭৫তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত রাষ্ট্রপতি
প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের
দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের এবং গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকে তোমাদের
ওপর ন্যস্ত হচ্ছে দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র
দায়িত্ব। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময় হলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা
করাই হবে তোমাদের জীবনের প্রথম ও প্রধান ব্রত।’ নতুন কমিশনপ্রাপ্ত সেনা
কর্মকর্তাদের জনগণের পাশে থাকার এবং দেশসেবার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, তোমরা নিঃস্বার্থভাবে জনগণের পাশে থাকবে এবং দেশের সেবা করবে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুগত এবং অধীনস্থদের প্রতি সহমর্মী হতে হবে
তোমাদের। তোমাদের জন্য রইল আমার শুভকামনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা
জিপে করে সুসজ্জিত প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং সালাম গ্রহণ করেন। তিনি বিশেষ
কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাসিং আউট ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ
করেন। সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক এবং বিএমএ
কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল সাইফুল আলম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জাতীয় সংসদের
সদস্য, নৌবাহিনীপ্রধান, সরকারের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা,
কূটনৈতিক, আমন্ত্রিত অতিথি ও কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরা উপস্থিত
ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মিলিটারি একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে তাকে
স্বাগত জানান সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, ২৪
ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের জিওসি এবং চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল
মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, জেনারেল অফিসার কমান্ডিং অব আর্মি ট্রেনিং
অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লে. জেনারেল আবদুল আজিজ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট
মেজর জেনারেল সাইফুল আলম। দেশ-বিদেশে দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর সদস্যদের
ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে
দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের
প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তোমাদের এ সুনাম আরও এগিয়ে নিতে হবে।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মানুষ শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে- এটিই আমার প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রী বলেন,
তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান। জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই
তোমাদের সবাইকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে
হবে। দাঁড়াতে হবে যে কোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে। তিনি
বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন,
সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ এবং তাদের পরিচয়পত্র তৈরিতে সেনাবাহিনী
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দুর্গম
পার্বত্য এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে
মহাসড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভার নির্মাণ, ভোটার তালিকা ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট
তৈরির ক্ষেত্রেও দক্ষতা দেখিয়েছে। নতুন ক্যাডেটদের কমিশন লাভের প্রাক্কালে
সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছাও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ দিনের কুচকাওয়াজের
মধ্য দিয়ে ৩৫০ জন ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। যার মধ্যে ৩৪৩ জন বাংলাদেশি, ৫
জন ফিলিস্তিনি এবং ২ জন শ্রীংলকার নাগরিক রয়েছেন। ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার
অফিসার সাদমানুর রহমান ৭৫তম বিএমএ লং কোর্সে বেস্ট অলরাউন্ড নৈপুণ্যের
জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। তিনি একই মিলিটারি
বিষয়ে সর্ব্বোচ্চ মান অর্জন করায় ‘আর্মি চিফ গোল্ড মেডেল’ও লাভ করেন।
No comments