যেভাবে তদন্ত আড়াল করল পাকিস্তান
২০০৭
সালের অক্টোবরে নির্বাসন থেকে দেশে ফেরার পরপরই হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে
যান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। তবে দুই মাস পরের
ঘটনা। ২৭ ডিসেম্বর। এ যাত্রায় আর রক্ষে হলো না। গুলি এবং আত্মঘাতী
বিস্ফোরণে মারা পড়লেন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথম নারী
প্রধানমন্ত্রী। বেনজির ভুট্টোর মৃত্যুর এক দশক পেরোল গতকাল বুধবার।
হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ বলছেন, সে
ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো অংশ জড়িত থাকতে পারে। যে
কিশোর বেনজিরের ওপর আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল তার নাম বিলাল।
রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভার পর বেনজির ভুট্টো যখন তাঁর গাড়ির কাছে
গিয়ে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন, তখন বিলাল তাঁকে গুলি করে এবং পরে
আত্মঘাতী হামলা চালায়। পাকিস্তানি তালেবানদের নির্দেশে হামলা চালিয়েছিল সে।
দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনজির। মৃত্যুর সময় তৃতীয় দফার জন্য
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। বেনজিরের মৃত্যুর জন্য অনেকে দায়ী করেন পারভেজ
মোশাররফকে। বেনজিরের পরিবারেরও একই সন্দেহ। হত্যার এক দশক পর সাবেক এই
প্রেসিডেন্ট অবশ্য মনে করছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি অংশের তালেবানের সঙ্গে
যোগাযোগ থাকতে পারে বেনজিরকে হত্যার ব্যাপারে। মোশাররফকে জিজ্ঞেস করা
হয়েছিল, এ-সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কি না?
তাঁর জবাব,
‘আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ আইনজীবীরা বলছেন, ২০০৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর
মোশাররফ ওয়াশিংটনে অবস্থানরত বেনজির ভুট্টোকে টেলিফোন করেছিলেন। বেনজিরের
ঘনিষ্ঠ সহযোগী মার্ক শেঘাল এবং সাংবাদিক রন সাসকাইন্ড ওই ফোনালাপের সময়
বেনজিরের পাশে ছিলেন। ফোনালাপের পর তিনি সহযোগীদের বলেছিলেন, ‘সে (মোশাররফ)
আমাকে হুমকি দিয়েছে। সে আমাকে পাকিস্তানে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক
করেছে।’ মার্ক শেঘাল বিবিসিকে বলেছেন, মোশাররফ টেলিফোনে জানিয়েছিলেন,
পাকিস্তানে ফেরার পর যদি কিছু ঘটে তাহলে, সে জন্য তাঁকে দায়ী করা যাবে না।
অবশ্য এ ধরনের কোনো ফোনালাপের বিষয় অস্বীকার করছেন মোশাররফ। বিবিসির
অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ১৫ বছর বয়সী আত্মঘাতী বিলালকে যাঁরা বেনজির ভুট্টোর
কাছাকাছি পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন, এমন দুজনকে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে সেনা
তল্লাশিচৌকিতে মারা হয়। আরেক সহযোগী যে আত্মঘাতী জ্যাকেট সরবরাহ করেছিলেন,
তাঁকে ২০১০ সালের ১৩ মে দেশটির দুর্গম এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
হত্যার কয়েক দিনের মাথায় পাঁচজন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায় স্বীকার করেন।
পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করেন। বেনজির হত্যার খানিক আগে তাঁর দেহরক্ষী
শাহেনশাহের সন্দেহজনক অঙ্গভঙ্গি ছিল। মোবাইল ফোনের ধারণ করা ভিডিও চিত্রে
দেখা যায়, তিনি হাতের আঙুল দিয়ে গলার দিকে কিছু ইশারা করছেন। এই
দেহরক্ষীকেও ২০০৮ সালের জুলাইয়ে করাচিতে তাঁর বাসার সামনে মারা হয়। এই
মামলার রাষ্ট্রীয় আইনজীবী চৌধুরী জুলফিকারকে ২০১৩ সালের মে মাসে ইসলামাবাদে
রাস্তায় গুলি করে মারা হয়। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, বেনজির হত্যার তদন্ত
আড়ালে সব ধরনের জোগাড়যন্ত্র করেছে পাকিস্তান।
No comments