পাকিস্তান নীতি নিয়ে দিশাহারা মোদি
ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একরোখা পাকিস্তান নীতি কোনো কাজে আসছে না।
বরং এ নিয়ে মোদি নিজেই দিশাহারা। বছরের শেষলগ্নে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদি
বুঝতে পারছেন, গত তিন বছরে সরকারের পাকিস্তান নীতি এক চূড়ান্ত অভিমুখহীনতার
শিকার। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনার গুলিতে এক ভারতীয় সেনা অফিসার ও তিন
জওয়ানের মৃত্যুর পরে কংগ্রেস মুখপাত্র মনিশ তিওয়ারি প্রশ্ন তুলেছেন, মোদির
পুরনো হুঙ্কার কোথায় গেল? তিনি তো বলেছিলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক
সীমান্ত লঙ্ঘন করতে দেব না!’ সম্প্রতি পাক সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে বলেন,
ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চান। বিরোধী নেতাদের প্রশ্ন, মোদি আলোচনা
করতে দ্বিধাগ্রস্ত কেন?
বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়,
তিন বছর ধরে যেন তৈলাক্ত বাঁশে ওঠানামা করেছে ভারতের পাকনীতি। ধারাবাহিকতা
রক্ষা করে সুষ্ঠু রণকৌশল দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী মোদি এ বিষয়ে জাতীয়
নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা
বলেছেন। কিন্তু সাউথ ব্লক সূত্র বলছে, ভারত-পাকিস্তান বোঝাপড়া যতটা কম, তার
চেয়েও বেশি কম বোঝাপড়া বোধ হয় এই দুই আমলার মধ্যে। গত তিন বছর ধরে জয়শঙ্কর
পররাষ্ট্র সচিব থাকলেও পাকনীতি দেখাশোনা করেছেন ডোভাল একাই। একসময়
পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন ডোভাল। সাবেক এই গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে তুলনা করা
হতো জেমস বন্ডের সঙ্গে। পত্রিকাটি দাবি করেছে, ডোভালের কথা শুনতে গিয়েই
নাকি চীন ও পাকিস্তানকে একসঙ্গে ক্ষেপিয়েছেন মোদি। পাকিস্তানের সঙ্গে
সমানতালে ‘ট্র্যাক টু’, ‘ট্র্যাক থ্রি’ কূটনীতি চালিয়ে যেতে হয়। শোনা
যাচ্ছে, মোদি এখন সেটাই করতে চাইছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ এক আমলার
মতে, মোদি বাঘের পিঠে চেপেছেন। ভারতীয় জওয়ানদের মৃত্যুতে সেনাবাহিনীতে
প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কয়েকদিন পরে ত্রিপুরা-কর্নাটকের ভোট। তাই এখনই
পাক-বিরোধিতা লঘু করা যাচ্ছে না। জয়শঙ্কর মনে করেন, পাকিস্তানে এখন চূড়ান্ত
টালমাটাল অবস্থা। সেনা এবং সুপ্রিমকোর্ট যৌথভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী
নওয়াজ শরিফকে ঠেকাতে চায়। ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করতে চায়
পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দেশটির অর্থনীতির অবস্থাও খারাপ। জঙ্গি তৎপরতা
বাড়ছে। কোণঠাসা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর এটাই সেরা সময়। এদিকে মোদির
পাক নীতির সমালোচনা করেছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদও।
তিনি বলেন, পাক-নীতি নিয়ে মোদির কোনো নিজস্ব বিশ্বাসের জায়গা নেই। কারগিল
যুদ্ধের পরেও লালকৃষ্ণ আদভানি ও জর্জ ফার্নান্দেজের আপত্তি অগ্রাহ্য করে
পারভেজ মোশাররফকে আগ্রায় ডেকে এনে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
অটলবিহারি বাজপেয়ি। কিন্তু মোদির পক্ষে তা করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েও
প্রশ্ন তুলেছেন সালমান খুরশিদ। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন,
পাকিস্তান ও চীনের মতো দুটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে এভাবে বিরোধিতা
করা উচিত হয়নি মোদির। তাই দেশ দুটির সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
No comments