কেবল বাংলাদেশই উল্টো পথে by শওকত হোসেন
দীর্ঘদিনের
এক তাত্ত্বিক বিতর্কের অবসান ঘটাতে চাইছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
(আইএমএফ)। বিতর্কটি মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে। বিশেষ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন
করা হলে রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে। থাকাটাই
স্বাভাবিক। কারণ, অনেক আগেই উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, ‘দুজন অর্থনীতিবিদ
থাকলে সর্বদা দুটি মত পাওয়া যাবে। আর যদি সেখানে জন মেনার্ড কেইনস থাকেন,
তাহলে মতামত পাওয়া যাবে তিনটি।’
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানি বাড়ে। আর অতিমূল্যায়ন হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে কী পরিমাণ এর লাভ-ক্ষতি, তা নিয়ে নানা মতভেদ ছিল। আইএমএফ এ নিয়ে গবেষণা করে এর ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। আইএমএফ বলছে, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল অবস্থায়। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে মুদ্রাযুদ্ধ। চীন গত আগস্টে হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়নের পর শুরু হয় এই মুদ্রাযুদ্ধ। বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশগুলো যখন যার যার মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতায় নামে, তখনই শুরু হয় মুদ্রাযুদ্ধ। ইউয়ান ও ডলারের এই মুদ্রাযুদ্ধ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও এটি জোরালো হয়েছে মূলত গত আগস্ট থেকেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীন তাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে আগস্টে পরপর দুই দিন ইউয়ানের অবমূল্যায়ন ঘটায়। অন্যদিকে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট শক্তিশালী থাকায় দেশটির ডলারও তেজি। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক দেশকেই মুদ্রার মান কমাতে হয়েছে।
২০০৪ থেকে এই সময় পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ইউরো ও ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর বাইরে এই মুদ্রাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ভারতের রুপি, রাশিয়ার রুবলসহ প্রায় সব দেশের মুদ্রাই। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ পান উদ্যোক্তারা। এতে আগের চেয়ে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা বেশি পান তাঁরা। ফলে সব দেশই আগ্রহী অবমূল্যায়নে। আর এমনই এক সময়ে আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করে জানাল অবমূল্যায়নের লাভ-ক্ষতি। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাযুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশই কেবল এর বাইরে।
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বেড়েছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বিজিএমইএ বলছে, ডলার ও ইউরোর ওঠানামার কারণে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৩৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হারিয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার কাজ পরোক্ষভাবে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ডলারের চাহিদা ধরে রাখতে ৩৫০ কোটি ডলার কিনেছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন বেড়েছে, তেমনি টাকা রয়ে গেছে তেজি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মজুত ছিল ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর ফলে ডলারের দর এখন ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ধরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হলে আমদানিকারকেরা লাভবান হন। কারণ আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কিছুটা কম দামে তাঁরা ডলার কিনতে পারেন। যেমন, এখন যদি ডলার কিনতে হয় প্রায় ৭৮ টাকায়, অবমূল্যায়ন হলে সেটি ৭৯ বা ৮০ টাকা হতে পারে। প্রতি ডলার কিনতে তখন আমদানিকারকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি ব্যয় কমানোর দিকেই বেশি আগ্রহী। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমে গেছে। টাকা শক্তিশালী রেখে আমদানিতে আরও বাড়তি সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর লক্ষ্যও এর মাধ্যমে অর্জিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত ও চীন থেকে। আর দেশ দুটিতে রপ্তানি করে সামান্যই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি ছিল ৬৫০ কোটি ডলার, রপ্তানি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। একই সময়ে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮২২ কোটি ডলারের পণ্য, রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯ কোটি ডলারের পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থায় আমদানিতেই বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ এবং ব্যবসায়ীরা চান দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন হোক। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ওঠানামার কারণে দাবিটি জোরালো হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম। জুলাই-আগস্ট সময়ে প্রবাসী-আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ঈদের কারণে সেপ্টেম্বরে বেড়েছে। ফলে অবমূল্যায়নকে একেবারেই বাতিলের খাতায় ফেলতে হয়তো পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে আইএমএফের গবেষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে সেটাই এখন প্রশ্ন।
অর্থনীতির তত্ত্ব বলে, অবমূল্যায়ন হলে রপ্তানি বাড়ে। আর অতিমূল্যায়ন হলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বাস্তবে কী পরিমাণ এর লাভ-ক্ষতি, তা নিয়ে নানা মতভেদ ছিল। আইএমএফ এ নিয়ে গবেষণা করে এর ফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। আইএমএফ বলছে, একটি দেশের মুদ্রামানের ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হলে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল অবস্থায়। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে মুদ্রাযুদ্ধ। চীন গত আগস্টে হঠাৎ করে তাদের মুদ্রা ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়নের পর শুরু হয় এই মুদ্রাযুদ্ধ। বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দেশগুলো যখন যার যার মুদ্রার অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতায় নামে, তখনই শুরু হয় মুদ্রাযুদ্ধ। ইউয়ান ও ডলারের এই মুদ্রাযুদ্ধ ২০০৯ সাল থেকে শুরু হলেও এটি জোরালো হয়েছে মূলত গত আগস্ট থেকেই।
বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি চীন তাদের রপ্তানির প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে আগস্টে পরপর দুই দিন ইউয়ানের অবমূল্যায়ন ঘটায়। অন্যদিকে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট শক্তিশালী থাকায় দেশটির ডলারও তেজি। ফলে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক দেশকেই মুদ্রার মান কমাতে হয়েছে।
২০০৪ থেকে এই সময় পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ইউরো ও ইউয়ানের বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এর বাইরে এই মুদ্রাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ভারতের রুপি, রাশিয়ার রুবলসহ প্রায় সব দেশের মুদ্রাই। মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ পান উদ্যোক্তারা। এতে আগের চেয়ে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা বেশি পান তাঁরা। ফলে সব দেশই আগ্রহী অবমূল্যায়নে। আর এমনই এক সময়ে আইএমএফ সুনির্দিষ্ট করে জানাল অবমূল্যায়নের লাভ-ক্ষতি। বিশ্বজুড়ে মুদ্রাযুদ্ধের এই সময়ে বাংলাদেশই কেবল এর বাইরে।
গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান বেড়েছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ডলারের বিপরীতে ভারতের রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বিজিএমইএ বলছে, ডলার ও ইউরোর ওঠানামার কারণে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৩৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হারিয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখার কাজ পরোক্ষভাবে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে ডলারের চাহিদা ধরে রাখতে ৩৫০ কোটি ডলার কিনেছে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন বেড়েছে, তেমনি টাকা রয়ে গেছে তেজি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর মজুত ছিল ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর ফলে ডলারের দর এখন ৭৭ টাকা ৮০ পয়সায় ধরে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় মুদ্রা শক্তিশালী হলে আমদানিকারকেরা লাভবান হন। কারণ আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য কিছুটা কম দামে তাঁরা ডলার কিনতে পারেন। যেমন, এখন যদি ডলার কিনতে হয় প্রায় ৭৮ টাকায়, অবমূল্যায়ন হলে সেটি ৭৯ বা ৮০ টাকা হতে পারে। প্রতি ডলার কিনতে তখন আমদানিকারকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি ব্যয় কমানোর দিকেই বেশি আগ্রহী। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম কমে গেছে। টাকা শক্তিশালী রেখে আমদানিতে আরও বাড়তি সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর লক্ষ্যও এর মাধ্যমে অর্জিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে ভারত ও চীন থেকে। আর দেশ দুটিতে রপ্তানি করে সামান্যই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি ছিল ৬৫০ কোটি ডলার, রপ্তানি প্রায় ৫৩ কোটি ডলার। একই সময়ে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮২২ কোটি ডলারের পণ্য, রপ্তানি করেছে মাত্র ৭৯ কোটি ডলারের পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এ অবস্থায় আমদানিতেই বেশি লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ।
যদিও অর্থনীতিবিদদের বড় অংশ এবং ব্যবসায়ীরা চান দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন হোক। বিশেষ করে চলতি অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী-আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ওঠানামার কারণে দাবিটি জোরালো হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশেরও কম। জুলাই-আগস্ট সময়ে প্রবাসী-আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ঈদের কারণে সেপ্টেম্বরে বেড়েছে। ফলে অবমূল্যায়নকে একেবারেই বাতিলের খাতায় ফেলতে হয়তো পারবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ করে আইএমএফের গবেষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কী করবে সেটাই এখন প্রশ্ন।
No comments