পুতিন রাজনীতিবিদ নয় একজন গোয়েন্দা -বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ
বেলারুশ
সাহিত্যিক ও অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ এ বছরের নোবেল
সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সোভিয়েত আমল ও সোভিয়েত পরবর্তী
যুদ্ধবিগ্রহ ও মানবজীবনের সংকটকালীন নানা দিক উঠে এসেছে তার লেখায়। নিজের
দেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। পার্শ^বর্তী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ভাদিমির পুতিনের আগ্রাসী নীতি নিয়েও তিনি শংকিত। নোবেল পাওয়ার কিছুদিন আগে
তিনি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছিলেন চার্টার নাইন্টি সেভেনের
সাংবাদিকের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। তাদের
কথোপকথনের আলোকে দশদিগন্ত পাঠকদের জন্য নিচের ট্রান্সক্রিপ্টটি তৈরি
করেছেন মো. হাসানুজ্জামান আমরা এখন একটি ভয়ংকর জগতে বাস করছি। লোকজন এখন
কথা বলার চেয়ে গুলি করতে পছন্দ করে। আমি বলছি না, এটা কেবল রুশদের ভবিষ্যৎ।
বিংশ শতাব্দীতে আমরা যুগোশ্লোভিয়া-আফগানিস্তানে এসব দেখেছি। মানুষের ভেতরে
বাস করা পশু জেগে উঠতে খুব একটা সময় নেয় না। একবিংশ শতাব্দীও শুরু হয়েছে
রক্তপাতের মাধ্যমে। সাহিত্যের মাধ্যমে ওই ধারণাগুলোই ‘হত্যা’ করতে হবে।
মানুষকে হত্যা নয়, যুক্তিতর্ক চাই। সোভিয়েত আমলে যারা বাস করেছে, তারা
দেখেছে একদিকে ঘাতক, আরেকদিকে অসহায় মানুষ। সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে আমার দেশ
বেলারুশ হয়ে উঠেছে মাফিয়া আর সোভিয়েতের মিশ্র স্টাইল। বেলারুশ ইতিমধ্যে
সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে। আর রাশিয়া এখন ভাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে
সেদিকেই এগুচ্ছে। কীভাবে একটা দেশে রক্তের প্লাবন তোলা যায়? ইউক্রেনের
ক্রিমিয়াকে দস্যু স্টাইলে দখল করা হয়? আমি কিয়েভে গিয়েছিলাম। মানুষকে দেখে
বিস্মিত হয়েছি। তারা একটি নতুন জীবন চাই। একটি নতুন জীবনের জন্য তারা যুদ্ধ
করবে। আমি রুশ মায়েদের জিজ্ঞেস করেছি, আপনার সন্তানদের ইউক্রেনে যুদ্ধ
করতে দিচ্ছেন কেন? তারা অনেকেই তো সেখানে নিহত হচ্ছে। তারা বলেছেন, ‘আমরা
যদি নীরব না থেকে আওয়াজ করি, তবে আমাদের জন্য বরাদ্দ ১০ লাখ রুবল বন্ধ হয়ে
যাবে। আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য ফ্ল্যাট কিনতে চাই।’ অথচ আমি যখন
আফগানিস্তান নিয়ে ‘জিংকি বয়’ বই লিখি, তখন দেখেছি, আফগান মায়েরা কথা বলে,
চিৎকার করে, কাঁদে। আসলে রাশিয়া এখন একটা সামষ্টিক পুতিন হয়ে উঠেছে।
প্রত্যেক রুশই একেকজন পুতিন। আর পুতিন তো কোনো রাজনীতিবিদ নয়, একজন
গোয়েন্দা, কেজিবি অফিসার। আমি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১১ বছর বাস করেছি।
সেখানে একজন লেখক হিসেবে অসম্ভব সংহতি ও সমর্থন পেয়েছি। কিন্তু আমি শেষ
পর্যন্ত বেলারুশে ফিরে এসেছি। কারণ এ বাতাসেই আমাকে নিঃশ্বাস নিতে হবে।
এখানকার জনগণের কথা শুনতে হবে। আমি নিজেকে এবং বন্ধদের বলি, কখনও হতাশায়
ডোবা যাবে না। জনগণকে আলোকিত করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
No comments