কোকো আমাদের সবাইকে অপরাধী বানিয়ে গেছে by মিনার রশীদ
একটি
পরিবারকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য পুরো রাষ্ট্রশক্তি এবং তার বিষাক্ত
ক্রীড়নক হিসেবে ইভিল মিডিয়া এই পরিবারের সদস্যদের পেছনে লেগেছে। আর তাকে
পুরোপুরি মদদ দিয়ে যাচ্ছে একটি আধিপত্যবাদী শক্তি। কারণ এই সিঙ্গেল
পরিবারটি এখন জাতীয়তাবাদের শেষ ও একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে পড়েছে। অশুভ
শকুনদের সব ােভ ও ক্রোধের মূল টার্গেট আজ এই পরিবার। আর সেই ক্রোধের অসহায়
বলি হয়ে চলে গেলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার
কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। ১৯৮১ সালের ৩০ মের পর এই পরিবারের ওপর
সবচেয়ে বড় আঘাতটি এসেছে ২৪ জানুয়ারি ২০১৫। কোনো মানবীয় ভাষায় এই কষ্টের
অনুভূতিটুকু প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। তথাকথিত এক-এগারো থেকে শুরু করে বিগত
আটটি বছর দেশের তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন
করে রাখা হয়েছে। এত বড় কষ্ট পরিবারের সবচেয়ে নরম মনের কোকোর জন্য সহ্য করা
কঠিন হয়ে পড়েছিল। মালয়েশিয়ার ফরেন অফিস তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছে।
তার চিকিৎসায় নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তার ইন্ট্রুভার্ট ও
লাজুক চরিত্রকেও ডেবিল মিডিয়া অন্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। সব কিছুর
সিকোয়েন্সিয়াল কনসিকোয়েন্সে ২৪ জানুয়ারি এই মহাট্র্যাজিক ঘটনাটি ঘটে গেছে।
নিজের সন্তানদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গত আট বছর এ দেশের মাটি কামড়ে পড়ে
আছেন বেগম খালেদা জিয়া। জাতির জন্য নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সব সুখকে
উৎসর্গ করেছেন। এই দুষ্টচক্রের সময়েই নিজের মা, ভাই এবং ছেলেকে হারিয়েছেন।
নিজের ৪০ বছরের বাসস্থান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন।
অল্প বয়সে তরুণ সেনাকর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সাথে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের প্রথম ১০টি বছর একজন সেনাকর্মকর্তার ক্যারিয়ারের স্বাভাবিক টানাপড়েনের মধ্যে কেটে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৫ সালে (পাক-ভারত যুদ্ধের সময়) যুদ্ধরত সৈনিক পরিবারের টেনশনের স্বাদ পুরোমাত্রায় গ্রহণ করেছেন। আর্মি অফিসাররা যে সময়ে পরিবার নিয়ে একটু থিতু হন তখনই দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা সামান্য চিন্তা না করে ওই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়ে বসেন জিয়া। ফলে পাক বাহিনীর আক্রোশটি নিজের ও পরিবারের ওপর নিয়ে আসে। এর সব ধকল সইতে হয়েছে এই ইয়ং পরিবারটিকে। সবচেয়ে কষ্টের কথা হলো স্বাধীনতার চেতনাধারীরা এই বিষয়টিকে নিয়েও নোংরাভাবে আঘাত করেছে।
কর্নেল অলির লেখা থেকে তখনকার একটা কাহিনী জানা যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহের পরপর প্রায় শ’ চারেক সৈন্য নিয়ে নিজের বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন জিয়া। তখন ক্যাপ্টেন অলি বলেছিলেন, ‘স্যার, আপনাকে কিছু সময় দিচ্ছি, আপনি ভাবির সাথে দেখা করে আসেন।’ এ কথা শুনে জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাকে ছাড়া এখানে বাকি কেউ তো আর তাদের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারছে না। আমার মতো পরিবার তো এদের সবারই রয়েছে।’ এ কথা বলে তদানীন্তন মেজর জিয়া নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে আর দেখা করতে যাননি। আজ তা গল্পের মতো মনে হয়। তখন এই কোকোর বয়স ছিল মাত্র দেড় থেকে দুই বছর। বাকি ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে। সেই দেড়-দুই বছর বয়স থেকে শুরু করে আজ ৪৫ বছর পর্যন্ত এই ব্যক্তি কোকোকে সেই একই কষ্ট, একই বেদনা নীরবে সইতে হয়েছে। কাজেই এই জাতির প্রতি কোকোর অভিমান খুব অযৌক্তিক নয়। আসলেই আমরা একটা চরম স্বার্থপর জাতি। আমরা এই কোকোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমরা জিয়ার জন্য কিছুই করতে পারিনি। যে পরিবারটি দেশের জন্য এত কিছু উৎসর্গ করেছে আমরা সেই পরিবারটির জন্য কিছুই করতে পারিনি। অথচ জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এই পরিবারই আমাদের আশার প্রধান জায়গা হয়ে পড়ে। আজ নিজের কলিজার টুকরার লাশকে পাশে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে এখন এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়তে হচ্ছে। কারণ তিনি দুর্বল হয়ে পড়লে এ দেশে গণতন্ত্রের অকাল মৃত্যু হবে। এই শকুনেরা এই দুর্বল সময় থেকেও ফায়দা নিতে চেষ্টা করবে। কাজেই অনেকটা অপরাধীর মতোই বলতে হচ্ছে দেশনেত্রী, আপনার এই কঠিন সময়ে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। কিন্তু লাখো কোটি কোকোর জন্যই আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমরা জানি দেশনেত্রী, আপনি এটা পারবেন।
minarrashid@yahoo.com
অল্প বয়সে তরুণ সেনাকর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সাথে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের প্রথম ১০টি বছর একজন সেনাকর্মকর্তার ক্যারিয়ারের স্বাভাবিক টানাপড়েনের মধ্যে কেটে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৫ সালে (পাক-ভারত যুদ্ধের সময়) যুদ্ধরত সৈনিক পরিবারের টেনশনের স্বাদ পুরোমাত্রায় গ্রহণ করেছেন। আর্মি অফিসাররা যে সময়ে পরিবার নিয়ে একটু থিতু হন তখনই দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা সামান্য চিন্তা না করে ওই মুহূর্তে অত্যন্ত জরুরি স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়ে বসেন জিয়া। ফলে পাক বাহিনীর আক্রোশটি নিজের ও পরিবারের ওপর নিয়ে আসে। এর সব ধকল সইতে হয়েছে এই ইয়ং পরিবারটিকে। সবচেয়ে কষ্টের কথা হলো স্বাধীনতার চেতনাধারীরা এই বিষয়টিকে নিয়েও নোংরাভাবে আঘাত করেছে।
কর্নেল অলির লেখা থেকে তখনকার একটা কাহিনী জানা যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহের পরপর প্রায় শ’ চারেক সৈন্য নিয়ে নিজের বাসার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন জিয়া। তখন ক্যাপ্টেন অলি বলেছিলেন, ‘স্যার, আপনাকে কিছু সময় দিচ্ছি, আপনি ভাবির সাথে দেখা করে আসেন।’ এ কথা শুনে জিয়া বলেছিলেন, ‘আমাকে ছাড়া এখানে বাকি কেউ তো আর তাদের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারছে না। আমার মতো পরিবার তো এদের সবারই রয়েছে।’ এ কথা বলে তদানীন্তন মেজর জিয়া নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে আর দেখা করতে যাননি। আজ তা গল্পের মতো মনে হয়। তখন এই কোকোর বয়স ছিল মাত্র দেড় থেকে দুই বছর। বাকি ইতিহাস আমাদের চোখের সামনে। সেই দেড়-দুই বছর বয়স থেকে শুরু করে আজ ৪৫ বছর পর্যন্ত এই ব্যক্তি কোকোকে সেই একই কষ্ট, একই বেদনা নীরবে সইতে হয়েছে। কাজেই এই জাতির প্রতি কোকোর অভিমান খুব অযৌক্তিক নয়। আসলেই আমরা একটা চরম স্বার্থপর জাতি। আমরা এই কোকোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমরা জিয়ার জন্য কিছুই করতে পারিনি। যে পরিবারটি দেশের জন্য এত কিছু উৎসর্গ করেছে আমরা সেই পরিবারটির জন্য কিছুই করতে পারিনি। অথচ জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে এই পরিবারই আমাদের আশার প্রধান জায়গা হয়ে পড়ে। আজ নিজের কলিজার টুকরার লাশকে পাশে রেখে বেগম খালেদা জিয়াকে এখন এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়তে হচ্ছে। কারণ তিনি দুর্বল হয়ে পড়লে এ দেশে গণতন্ত্রের অকাল মৃত্যু হবে। এই শকুনেরা এই দুর্বল সময় থেকেও ফায়দা নিতে চেষ্টা করবে। কাজেই অনেকটা অপরাধীর মতোই বলতে হচ্ছে দেশনেত্রী, আপনার এই কঠিন সময়ে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। কিন্তু লাখো কোটি কোকোর জন্যই আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমরা জানি দেশনেত্রী, আপনি এটা পারবেন।
minarrashid@yahoo.com
No comments