শোকাতুর জননীর পাশে সমগ্র বাংলাদেশ by সৈয়দ আবদাল আহমদ
শহীদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট
ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ইন্তেকালে জিয়া পরিবারের সঙ্গে দেশ প্রেমিক জনগণও
শোকাভিভূত। তার এই মৃত্যু বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা।
জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্যে দেশি-বিদেশি যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, সেই
ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ২০০৭ সালের এক-এগারোর জরুরি সরকার বেগম খালেদা জিয়া
এবং তার দুই পুত্রকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাদের নামে দেয়া হয় বিভিন্ন
ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও খালেদা জিয়ার দুই
ছেলে তারেক রহমান পিনো ও আরাফাত রহমান কোকোর দেশের মাটিতে থাকায় সৌভাগ্য
হয়নি। চিকিৎসার জন্যে তারেক রহমানকে লন্ডনে এবং আরাফাত রহমানকে সিঙ্গাপুর,
ব্যাংকক ও মালয়েশিয়ায় কাটাতে হয়। এরই মধ্যে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার সরকার
তারা যাতে আর কোনো দিন দেশে ফিরতে না পারেন, সেজন্য শুরু করে ষড়যন্ত্র।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দিয়ে তার দেশে প্রত্যাবর্তনের পথ
বন্ধ করে দেয়া হয়। তেমনি আরাফাত রহমান কোকোকেও একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত
করে দেশের জন্য তার দরজাও রুদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় আজ মালয়েশিয়ায় কোকোর
দুঃখজনক মৃত্যু হয়। একদিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন, অন্যদিকে দেশে মা
বেগম খালেদা জিয়ার ওপর হাসিনা সরকারের অত্যাচার-নির্যাতনের খবরে ছিলেন চরম
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। এই শোক মা
খালেদা জিয়া কিভাবে সইবেন তা জানি না। তার জন্য সত্যিই দুঃখ হয়। বাংলাদেশের
জন্য তিনি এবং তার স্বামী শহীদ জিয়াউর রহমানের ত্যাগ অপরিসীম। এদেশের
গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য এই দুই মহান নেতার অবদান অতুলনীয়। কিন্তু প্রতি
পদে পদে তারা অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশের দুঃসময়ে কাণ্ডারির ভূমিকায়
অবতীর্ণ হয়েছেন জিয়াউর রহমান। একাত্তরে সারা জাতি যখন দিশেহারা ছিলেন, ঠিক
তখন চট্টগ্রামের কালোর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন
জিয়া। তারপর রণাঙ্গণে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশকে স্বাধীন করেন।
তেমনি ১৯৭৫ সালে দেশে যখন চরম অরাজকতা, ঠিক তখন ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতায়
বিপ্লবের মাধ্যমে তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন এবং এদেশকে উন্নয়নের রোল
মডেলে পরিণত করেন। কিন্তু এদেশ মাথা তুলে দাঁড়াক যারা চায় না, সেই
কুচক্রীরা অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে।
এরপর দীর্ঘ ৯ বছর এরশাদ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন শহীদ জিয়ার সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আবার বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নের একটি পর্যায়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ২০০৭ সালে এক-এগারোর জরুরি সরকার ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অপচেষ্টা চালায়। তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু দেশমাতৃকার বিপদের কথা চিন্তা করে তিনি অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। নেমে আসে অত্যাচার। তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়াকে টানা ৬ মাস ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তাতেও তিনি নির্বাসনে যেতে রাজী না হওয়ায় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় তিনি ও তার দুই ছেলে নির্জন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এ সময় তার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন উদ্যমে জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা শুরু হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে ২০০৮ সালে ১৩ নভেম্বর তার ক্যান্টনমেন্টের ৩৮ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে এক কাপড়ে উচ্ছেদ করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হওয়া সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া এদেশের এক দুঃখিনী রাজনীতিক। বার বার তিনি শিকার হন নির্মম অত্যাচারের। তবে যত অত্যাচার নির্যাতনই আসুক না কেন বাংলাদেশ ও জনগণের বিপদের সময় তিনি কখনও তাদের ছেড়ে যাননি এবং যাবেনও না। দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। দুই ছেলে কাছে নেই। ছেলেদের বউ, নাতি-নাতনীর অন্তরঙ্গ সঙ্গ থেকে তিনি বঞ্চিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষই তাকে আগলে রেখেছে এবং রাখবে।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় ১/১১র কঠিন সময়ের কথা নিজেই বলেছেন- ‘মানুষ হিসেবে আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলাম না। ব্যর্থতায় গ্লানিও আমাকে অনেক সময় স্পর্শ করেছে। কিন্তু যে সীমাহীন কুৎসা ও অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হচ্ছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য? অপপ্রচারের পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছে থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ৬ মাস গৃহবন্দী ও এক বছর নির্জন কারাবন্দী করা হয়। মায়ের মৃত্যুর সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। গুরতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেয়া হয়নি। তবু যতদিন বেঁচে থাকব আপনাদের মাঝেই বাঁচব। এদেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমার দুটি পা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে গেছে। আপনাদের ছেড়ে আমি যাইনি, যাবও না।’
বাংলাদেশ আজ চরম বিপদগ্রস্ত। ভোটহীন, ভোটারহীন, প্রার্থীহীন এক ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছে হাসিনা সরকার। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে তিনি আন্দোলন শুরু করেছেন। সেই আন্দোলনের বিজয়ই তার শোককে শক্তিতে পরিণত করবে। শোকাতুর জননীর পাশে আছে সমগ্র বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশে তিনি আবারও ফোটাবেন গণতন্ত্রের ফুল।
লেখক : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক
(নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
এরপর দীর্ঘ ৯ বছর এরশাদ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন শহীদ জিয়ার সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আবার বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নের একটি পর্যায়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ২০০৭ সালে এক-এগারোর জরুরি সরকার ক্ষমতায় এসে তার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অপচেষ্টা চালায়। তাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু দেশমাতৃকার বিপদের কথা চিন্তা করে তিনি অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। নেমে আসে অত্যাচার। তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। খালেদা জিয়াকে টানা ৬ মাস ক্যান্টনমেন্টের বাসভবনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তাতেও তিনি নির্বাসনে যেতে রাজী না হওয়ায় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকেও গ্রেপ্তার করা হয়। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় তিনি ও তার দুই ছেলে নির্জন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এ সময় তার মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ইন্তেকাল করেন।
২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন উদ্যমে জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা শুরু হয়। বেগম খালেদা জিয়াকে ২০০৮ সালে ১৩ নভেম্বর তার ক্যান্টনমেন্টের ৩৮ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে এক কাপড়ে উচ্ছেদ করা হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হওয়া সত্ত্বেও বেগম খালেদা জিয়া এদেশের এক দুঃখিনী রাজনীতিক। বার বার তিনি শিকার হন নির্মম অত্যাচারের। তবে যত অত্যাচার নির্যাতনই আসুক না কেন বাংলাদেশ ও জনগণের বিপদের সময় তিনি কখনও তাদের ছেড়ে যাননি এবং যাবেনও না। দীর্ঘ ৬/৭ বছর ধরে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। দুই ছেলে কাছে নেই। ছেলেদের বউ, নাতি-নাতনীর অন্তরঙ্গ সঙ্গ থেকে তিনি বঞ্চিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষই তাকে আগলে রেখেছে এবং রাখবে।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় ১/১১র কঠিন সময়ের কথা নিজেই বলেছেন- ‘মানুষ হিসেবে আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলাম না। ব্যর্থতায় গ্লানিও আমাকে অনেক সময় স্পর্শ করেছে। কিন্তু যে সীমাহীন কুৎসা ও অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হচ্ছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য? অপপ্রচারের পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছে থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ৬ মাস গৃহবন্দী ও এক বছর নির্জন কারাবন্দী করা হয়। মায়ের মৃত্যুর সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। গুরতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেয়া হয়নি। তবু যতদিন বেঁচে থাকব আপনাদের মাঝেই বাঁচব। এদেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমার দুটি পা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে গেছে। আপনাদের ছেড়ে আমি যাইনি, যাবও না।’
বাংলাদেশ আজ চরম বিপদগ্রস্ত। ভোটহীন, ভোটারহীন, প্রার্থীহীন এক ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছে হাসিনা সরকার। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে তিনি আন্দোলন শুরু করেছেন। সেই আন্দোলনের বিজয়ই তার শোককে শক্তিতে পরিণত করবে। শোকাতুর জননীর পাশে আছে সমগ্র বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশে তিনি আবারও ফোটাবেন গণতন্ত্রের ফুল।
লেখক : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক
(নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
No comments