ওবামা-মোদির অঙ্গীকারে বাংলাদেশ কি বার্তা পাবে?
মার্কিন
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যৌথ
বিবৃতি থেকে ভারতের প্রতিবেশীরা কি বার্তা পাবে? দুই নেতা এই মর্মে
অঙ্গীকার করেছেন যে, আফগানিস্তান, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকায় দিল্লি-ওয়াশিংটন
যেভাবে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে সেটা তারা এখন থেকে আরও
বিস্তৃত করবে। তারা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, ‘অতিরিক্ত তৃতীয় দেশে’ তারা
সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেবে। এই তৃতীয় দেশ বলতে কোন দেশের নাম তারা
নেননি। তবে বিশ্লেষকরা একমত যে, ভারত ও আমেরিকা সামনের দিনগুলোতে তাদের
বিদেশনীতি পরিচালনায় এই নীতির কথা তারা মনে রাখবে। উল্লেখ্য, এর আগে
ওয়াশিংটনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং বারাক ওবামার মধ্যে
অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছিল বলে খবর বেরোয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লি-ওয়াশিংটনের
মনোভাব পত্রপত্রিকায় আলোচিত হয়েছিল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের ইকনোমিক
টাইমস খবর দিয়েছিল যে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান
মজিনা আমন্ত্রিত না হয়েও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে দিল্লি
গিয়েছিলেন। একজন অজ্ঞাতনামা ভারতীয় পত্রিকার বরাতে বলা হয়েছিল, ঢাকার
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমন্ত্রিত হননি। কিন্তু তিনি তার সরকারের (মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র) নির্দেশে ভারতে আসেন। তিনটি ইস্যু আলোচনায় আসে। প্রথমত
বাংলাদেশ শান্তি ও স্থিতিশীলতা, দ্বিতীয়ত সকল দলের অংশগ্রহণসাপেক্ষ একটি
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, তৃতীয়ত সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলা।
গত ১২ই জানুয়ারি ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের বিষয় যে, তারা যেসব ইস্যুতে বিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন তা মোকাবিলায় কিভাবে তারা অগ্রসর হবেন। আমরা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ চাই।’ ঢাকার অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ভারতীয় মুখপাত্রের এই অবস্থান তার আগের অবস্থান থেকে পৃথক। কারণ গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে ভারতীয় সরকার ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’ রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল। গত ৭ই জানুয়ারি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় রিপোর্ট ছাপা হয় যে, বিএনপি বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ আশা করছে। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একথাই প্রচার করছে যে, এর আগের কংগ্রেস সরকারের মতো বর্তমান বিজেপি মোর্চাও তাদেরকে সমর্থন দিয়ে চলেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আকবর ওই মন্তব্য করেছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা সাধারণভাবে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশীরা অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকলে সেটা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের অনুকুলে যায় না। ভারতের সাবেক হাইকমিশনারগণ অব্যাহতভাবে মত প্রকাশ করে থাকেন যে, একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ভারতের উন্নতির জন্য খুবই দরকারি। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রিপোর্টে এটা উল্লিখিত হতে দেখা যায় যে, ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নানামাত্রায় ভূমিকা রেখে থাকে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় সাধারণ নির্বাচনের পরে দেশটির সরকার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকাকে দায়ী করেছে। তারা এমনকি ‘র’-এর স্টেশন চিফ ইলাঙ্গাকে বহিষ্কার করেছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছিল। যদিও ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেন, এটা রুটিন বদলি মাত্র। তবে গত বছর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বিরোধী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী শ্রীসেনার সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। এর দু’মাসের মধ্যে তিনি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। দুদিন আগে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আমি জয়ী হতে যাচ্ছি জেনেও আমাকে রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট দু’বছরের জন্য ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করার ফন্দি এঁটেছিলেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মালদ্বীপে আরও বড় নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি ভারতীয় হাইকমিশনে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘যদি কোন নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না।’
ঢাকার অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন কোন ভারতীয় মুখপাত্র যদি ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বা ফলাফলের পরে গত ১২ই জানুয়ারিতে উচ্চারিত মন্তব্য করতেন তাহলে তার তাৎপর্য ভিন্ন মাত্রা পেত। আর এখন যে তারা ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ’ চাইছেন তা নিশ্চিত করতে হলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া তা নিষ্পন্ন করা কঠিন।
অনেকেই বিশ্বাস করতে চান যে, বারাক ওবামা ও মোদির বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন এসেছে। কারণ, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী চরমপন্থা দমনে তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আর ওয়াশিংটনের হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, আনন্দবাজার পত্রিকা ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো মার্কিন-ভারতীয় মহল আশঙ্কা ব্যক্ত করছে যে, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পরিস্থিতি উগ্রপন্থিদের হাতে চলে যেতে পারে।
এশীয় অঞ্চলে গণতন্ত্রের নতুন আশা জেগে উঠেছে
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ভারতকে বৃহত্তর ভূমিকায় দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল ভারত সফরের শেষ দিনের বক্তব্যে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে শ্রীলঙ্কা- যেখানে গণতন্ত্রের নতুন আশা জেগে উঠেছে, এ অঞ্চলের সেই দেশগুলোতে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তার মাধ্যমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে ভারত। তিনি ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অন্য দেশগুলোর নির্বাচনে সহায়তা করতে পারেন।
এর মাধ্যমে সফরের শেষ দিন ভারতবাসীকে চমকে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। খাঁটি সংস্কৃতে বললেন- ‘জয় হিন্দ’। তার মুখে এমন উচ্চারণ শুনে মুগ্ধ সামনের দর্শক, টেলিভিশনের সামনে বসা ভারতবাসী। এদিন নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ওবামা। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে বিদায়ী ভাষণে তিনি প্রকাশ ঘটালেন এক নতুন ওবামাকে। তার কথায়, মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ছিল অডিটোরিয়াম। আহ্বান জানালেন ধর্মীয় সহনশীলতার। বললেন, প্রত্যেক মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার আছে। ধর্মের ভিত্তিতে যতদিন বিভক্ত না হবে ততদিন সফলতার পথে এগিয়ে যাবে ভারত। সমপ্রীতি আর বন্ধুত্বপূর্ণ আবহের বাতাবরণ তৈরি করে দিয়ে ভারত ছেড়ে গেলেন ওবামা দম্পতি। এর আগে সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে হাজার দু’য়েক দর্শক-শ্রোতাকে আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছেন ওবামা। সেসঙ্গে ধর্মকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না করার কথা বলেছেন। ‘নমস্তে’ উচ্চারণের মাধ্যমে গতকাল বিদায়ী ভাষণ শুরু করেন তিনি। সকালে অডিটোরিয়ামের মঞ্চে প্রায় দৌড়ে উঠে সোজা পোডিয়ামে পৌঁছেন তিনি। তারপরই দর্শকদের দিকে ডান হাত তুলে সাদা স্ট্রাইপড শার্ট আর গাঢ় নীল রঙের স্যুট-টাইয়ে ওবামা বলেন, ‘নমস্কার’। সেসঙ্গে যোগ করেন- ‘বহত ধন্যবাদ’। প্রায় ৩৫ মিনিটের ভাষণ শেষ করেন ভারতীয় ভাষাতেই। বলেন, ‘জয় হিন্দ’। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমিই প্রথম দু’বার ভারত সফর করলাম। কিন্তু এক্ষেত্রে আমিই শেষ নই এটা প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে মহাত্মা গান্ধী থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, সবার কথাই উল্লেখ করেছেন।
ওবামা বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এ দু’টি দেশের সামনেই রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ। এর আগে ২০১১ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন ওবামা। তখন সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল একজন শ্রমিক সন্তান বিশাল-এর। গতকাল ওবামা সেই বিশাল (১৬)কে পরিচয় করিয়ে দেন। দেশ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-ধর্ম-উন্নয়নের পাশাপাশি তার ভাষণে ব্যক্তিগত কথাও উঠে এসেছে। মার্টিন লুথার কিং-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত ওবামা অহিংসার প্রতীক হিসেবে গান্ধীকে বর্ণনা করে সোজা পৌঁছে যান বিবেকানন্দে। ১০০ বছরেরও আগে ‘হিন্দুত্ববাদ’ এবং ‘যোগা’ নিয়ে স্বামীজি গিয়েছিলেন আমেরিকায়। ওবামার কথায়, স্বামীজি আমার শহর শিকাগোতেও গিয়েছিলেন। ‘আমেরিকার ভাই ও বোনেরা’ এ সম্ভাষণ দিয়ে বিবেকানন্দ তার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন। তাই আমি আজ শুরু করছি, ভারতের ভাইবোনেরা বলে। কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের যোগ্য এবং সবচেয়ে ভাল সহযোগী হয়ে উঠতে পারে আমেরিকা। বলেন, আমাদের দু’দেশের গণতন্ত্র পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো এবং বৃহৎ গণতন্ত্র। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে গোটা বিশ্ব আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে। এর পরেই তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন। বিষয়টিকে আমেরিকার সমর্থনের কথাও বলেন ওবামা।
দারিদ্র্য দূরীকরণে ভারতের প্রশংসা করেন তিনি। ওবামা জানান, বৈষম্যময় এ পৃথিবীতে একমাত্র স্বপ্নই মানুষকে উত্তরণের পথে নিয়ে যেতে পারে। বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত কথায় চলে যান বারাক ওবামা। তিনি জানান, কেনিয়ায় বৃটিশ সেনাবাহিনীতে রাঁধুনির কাজ করতেন তার দাদা। শুধু তাই নয়, স্ত্রী মিশেলের পরিবার যে এক কালে দাস ছিল সে কথাও অকপটে প্রকাশ্যে স্বীকার করেন ওবামা। এর পরেই যোগ করেন, রাঁধুনির নাতি যদি প্রেসিডেন্ট হতে পারে, চা-ওয়ালা যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়! প্রত্যেকেরই সুযোগ রয়েছে। তিনি ভাষণে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার প্রশংসা করেন। বলেন, আমি শক্তিশালী মানসিকতার ও মেধাবী একজন নারীকে বিয়ে করেছি। আমি কি ভুল করছি তা নিয়ে প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে কথা বলতে কোন ভয় পায় না মিশেল। প্রকাশ্যে বলে দেয় সে সে কথা। ভারতে এসে নারীশক্তির জয় দেখে উচ্ছ্বসিত ওবামা। প্রেসিডেন্ট ভবনে তাকে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার পূজা ঠাকুর। এদিন সে কথার উল্লেখও করেন ওবামা। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, আমেরিকাতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এখনও কাজ চলছে। কিন্তু ভারতে মা-বউরাই পরিবারকে বেঁধে রেখেছেন।
ধর্মকে সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ওবামা। পরে তিনি গান্ধীজির উল্লেখও করেন। তিনি বলেন, গান্ধীজি বলতেন, আমার কাছে বিভিন্ন ধর্ম মানে, একই বাগানে, একই গাছের নানা শাখায় ফুটে থাকা অনেক রকম ফুল। ভারতকে পাশে নিয়ে উন্নয়নের যে বার্তা ওবামা এদিন দিয়েছেন তাতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত সিরি ফোর্টে হাজির সবাই। শেষ করার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতবাসীর ওপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস। ভারতের বন্ধু হিসেবে গর্ববোধ করি। সহযোগী হিসেবেও। এর পরেই ৩৫ মিনিটের ভাষণ শেষ করেন ‘জয় হিন্দ’ বলে। এর পরে মিশে যান দর্শকের ভিড়ে। আবহে তখন বাজছিল ‘লগন’ ছবির ‘মিতওয়া ও মিতওয়া তুঝকো ক্যায়া ডর হ্যায় রে...।’ তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে তিনি সস্ত্রীক সৌদি আরবের উদ্দেশে ভারত ত্যাগ করেন।
৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি
ভারত ছাড়ার আগে ঋণ ও বিনিয়োগ খাতে ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওবামা। সোমবার ভারতের ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর তিনি রাতে যোগ দেন ইন্ডিয়া-ইউএস সিইও সামিটে। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, তিন দিনের ভারত সফরে গত রোববার রাজধানী নয়া দিল্লি পৌঁছেন বারাক ওবামা। প্রথা ভেঙে তাকে স্বাগত জানাতে পালাম বিমানবন্দরে নিজে গিয়ে হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপরই রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের মধ্যে আলোচনা জমে ওঠে। নরেন্দ্র মোদি তাকে খোলা প্রান্তরে বসিয়ে নিজ হাতে চা পান করান। ওবামা তার আতিথেয়তায় বার বারই মুগ্ধ হন। ওই দিন রাতে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তাকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন। পরদিন সোমবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বৃষ্টিভেজা সকালে গিয়ে হাজির হন রাজপথে। সেখানে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ দেখে বিমোহিত হন ওবামা। বার বার তিনি হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। তবে তিনি বেশি আনন্দ পেয়েছেন বিএসএফের সাহসী যোদ্ধাদের মোটরসাইকেলে দেখানো কসরত দেখে।
বাইক চালানো ছেড়ে দেবেন ওবামা
মোটরসাইকেল কসরত দেখে ওবামা বলেছেন, তিনি আর বাইক চালাবেন না। বিএসএফের ‘জানবাজ’দের পারফরমেন্স দেখে তিনি বলেন, এমন অবিশ্বাস্য অ্যাক্রোব্যাট দেখার পর আমি মোটরসাইকেল চালানো ছেড়ে দেব। এ কথা বলেছেন তিনি সোমবার রাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে। চলন্ত মটরসাইকেলে এমন পারফরমেন্স দেখে তিনি ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা অভিভূত।
গত ১২ই জানুয়ারি ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের বিষয় যে, তারা যেসব ইস্যুতে বিরোধের সম্মুখীন হচ্ছেন তা মোকাবিলায় কিভাবে তারা অগ্রসর হবেন। আমরা শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ চাই।’ ঢাকার অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, ভারতীয় মুখপাত্রের এই অবস্থান তার আগের অবস্থান থেকে পৃথক। কারণ গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পরে ভারতীয় সরকার ‘সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা’ রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছিল। গত ৭ই জানুয়ারি টাইমস অব ইন্ডিয়ায় রিপোর্ট ছাপা হয় যে, বিএনপি বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ আশা করছে। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একথাই প্রচার করছে যে, এর আগের কংগ্রেস সরকারের মতো বর্তমান বিজেপি মোর্চাও তাদেরকে সমর্থন দিয়ে চলেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আকবর ওই মন্তব্য করেছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা সাধারণভাবে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশসহ ভারতের প্রতিবেশীরা অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকলে সেটা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের অনুকুলে যায় না। ভারতের সাবেক হাইকমিশনারগণ অব্যাহতভাবে মত প্রকাশ করে থাকেন যে, একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ভারতের উন্নতির জন্য খুবই দরকারি। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রিপোর্টে এটা উল্লিখিত হতে দেখা যায় যে, ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নানামাত্রায় ভূমিকা রেখে থাকে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় সাধারণ নির্বাচনের পরে দেশটির সরকার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকাকে দায়ী করেছে। তারা এমনকি ‘র’-এর স্টেশন চিফ ইলাঙ্গাকে বহিষ্কার করেছে বলে রয়টার্স খবর দিয়েছিল। যদিও ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেন, এটা রুটিন বদলি মাত্র। তবে গত বছর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বিরোধী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী শ্রীসেনার সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। এর দু’মাসের মধ্যে তিনি নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন। দুদিন আগে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আমি জয়ী হতে যাচ্ছি জেনেও আমাকে রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট দু’বছরের জন্য ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করার ফন্দি এঁটেছিলেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মালদ্বীপে আরও বড় নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল। মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি ভারতীয় হাইকমিশনে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের সরকারি মুখপাত্র বলেছিলেন, ‘যদি কোন নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের কোন বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না।’
ঢাকার অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন কোন ভারতীয় মুখপাত্র যদি ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বা ফলাফলের পরে গত ১২ই জানুয়ারিতে উচ্চারিত মন্তব্য করতেন তাহলে তার তাৎপর্য ভিন্ন মাত্রা পেত। আর এখন যে তারা ‘শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ’ চাইছেন তা নিশ্চিত করতে হলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া তা নিষ্পন্ন করা কঠিন।
অনেকেই বিশ্বাস করতে চান যে, বারাক ওবামা ও মোদির বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন এসেছে। কারণ, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদী চরমপন্থা দমনে তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আর ওয়াশিংটনের হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, আনন্দবাজার পত্রিকা ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো মার্কিন-ভারতীয় মহল আশঙ্কা ব্যক্ত করছে যে, সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পরিস্থিতি উগ্রপন্থিদের হাতে চলে যেতে পারে।
এশীয় অঞ্চলে গণতন্ত্রের নতুন আশা জেগে উঠেছে
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে ভারতকে বৃহত্তর ভূমিকায় দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল ভারত সফরের শেষ দিনের বক্তব্যে এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে শ্রীলঙ্কা- যেখানে গণতন্ত্রের নতুন আশা জেগে উঠেছে, এ অঞ্চলের সেই দেশগুলোতে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়তার মাধ্যমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে ভারত। তিনি ভারতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অন্য দেশগুলোর নির্বাচনে সহায়তা করতে পারেন।
এর মাধ্যমে সফরের শেষ দিন ভারতবাসীকে চমকে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। খাঁটি সংস্কৃতে বললেন- ‘জয় হিন্দ’। তার মুখে এমন উচ্চারণ শুনে মুগ্ধ সামনের দর্শক, টেলিভিশনের সামনে বসা ভারতবাসী। এদিন নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান ওবামা। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে বিদায়ী ভাষণে তিনি প্রকাশ ঘটালেন এক নতুন ওবামাকে। তার কথায়, মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ছিল অডিটোরিয়াম। আহ্বান জানালেন ধর্মীয় সহনশীলতার। বললেন, প্রত্যেক মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার আছে। ধর্মের ভিত্তিতে যতদিন বিভক্ত না হবে ততদিন সফলতার পথে এগিয়ে যাবে ভারত। সমপ্রীতি আর বন্ধুত্বপূর্ণ আবহের বাতাবরণ তৈরি করে দিয়ে ভারত ছেড়ে গেলেন ওবামা দম্পতি। এর আগে সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে হাজার দু’য়েক দর্শক-শ্রোতাকে আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছেন ওবামা। সেসঙ্গে ধর্মকে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না করার কথা বলেছেন। ‘নমস্তে’ উচ্চারণের মাধ্যমে গতকাল বিদায়ী ভাষণ শুরু করেন তিনি। সকালে অডিটোরিয়ামের মঞ্চে প্রায় দৌড়ে উঠে সোজা পোডিয়ামে পৌঁছেন তিনি। তারপরই দর্শকদের দিকে ডান হাত তুলে সাদা স্ট্রাইপড শার্ট আর গাঢ় নীল রঙের স্যুট-টাইয়ে ওবামা বলেন, ‘নমস্কার’। সেসঙ্গে যোগ করেন- ‘বহত ধন্যবাদ’। প্রায় ৩৫ মিনিটের ভাষণ শেষ করেন ভারতীয় ভাষাতেই। বলেন, ‘জয় হিন্দ’। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমিই প্রথম দু’বার ভারত সফর করলাম। কিন্তু এক্ষেত্রে আমিই শেষ নই এটা প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে মহাত্মা গান্ধী থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, সবার কথাই উল্লেখ করেছেন।
ওবামা বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এ দু’টি দেশের সামনেই রয়েছে বহু চ্যালেঞ্জ। এর আগে ২০১১ সালে ভারত সফরে এসেছিলেন ওবামা। তখন সম্রাট হুমায়ুনের সমাধিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল একজন শ্রমিক সন্তান বিশাল-এর। গতকাল ওবামা সেই বিশাল (১৬)কে পরিচয় করিয়ে দেন। দেশ-রাষ্ট্র-রাজনীতি-ধর্ম-উন্নয়নের পাশাপাশি তার ভাষণে ব্যক্তিগত কথাও উঠে এসেছে। মার্টিন লুথার কিং-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত ওবামা অহিংসার প্রতীক হিসেবে গান্ধীকে বর্ণনা করে সোজা পৌঁছে যান বিবেকানন্দে। ১০০ বছরেরও আগে ‘হিন্দুত্ববাদ’ এবং ‘যোগা’ নিয়ে স্বামীজি গিয়েছিলেন আমেরিকায়। ওবামার কথায়, স্বামীজি আমার শহর শিকাগোতেও গিয়েছিলেন। ‘আমেরিকার ভাই ও বোনেরা’ এ সম্ভাষণ দিয়ে বিবেকানন্দ তার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন। তাই আমি আজ শুরু করছি, ভারতের ভাইবোনেরা বলে। কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ভারতের যোগ্য এবং সবচেয়ে ভাল সহযোগী হয়ে উঠতে পারে আমেরিকা। বলেন, আমাদের দু’দেশের গণতন্ত্র পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো এবং বৃহৎ গণতন্ত্র। আমরা একসঙ্গে কাজ করলে গোটা বিশ্ব আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে। এর পরেই তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করেন। বিষয়টিকে আমেরিকার সমর্থনের কথাও বলেন ওবামা।
দারিদ্র্য দূরীকরণে ভারতের প্রশংসা করেন তিনি। ওবামা জানান, বৈষম্যময় এ পৃথিবীতে একমাত্র স্বপ্নই মানুষকে উত্তরণের পথে নিয়ে যেতে পারে। বিষয়টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যক্তিগত কথায় চলে যান বারাক ওবামা। তিনি জানান, কেনিয়ায় বৃটিশ সেনাবাহিনীতে রাঁধুনির কাজ করতেন তার দাদা। শুধু তাই নয়, স্ত্রী মিশেলের পরিবার যে এক কালে দাস ছিল সে কথাও অকপটে প্রকাশ্যে স্বীকার করেন ওবামা। এর পরেই যোগ করেন, রাঁধুনির নাতি যদি প্রেসিডেন্ট হতে পারে, চা-ওয়ালা যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়! প্রত্যেকেরই সুযোগ রয়েছে। তিনি ভাষণে ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার প্রশংসা করেন। বলেন, আমি শক্তিশালী মানসিকতার ও মেধাবী একজন নারীকে বিয়ে করেছি। আমি কি ভুল করছি তা নিয়ে প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে কথা বলতে কোন ভয় পায় না মিশেল। প্রকাশ্যে বলে দেয় সে সে কথা। ভারতে এসে নারীশক্তির জয় দেখে উচ্ছ্বসিত ওবামা। প্রেসিডেন্ট ভবনে তাকে গার্ড অব অনার দিয়েছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার পূজা ঠাকুর। এদিন সে কথার উল্লেখও করেন ওবামা। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, আমেরিকাতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে এখনও কাজ চলছে। কিন্তু ভারতে মা-বউরাই পরিবারকে বেঁধে রেখেছেন।
ধর্মকে সন্ত্রাসের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন ওবামা। পরে তিনি গান্ধীজির উল্লেখও করেন। তিনি বলেন, গান্ধীজি বলতেন, আমার কাছে বিভিন্ন ধর্ম মানে, একই বাগানে, একই গাছের নানা শাখায় ফুটে থাকা অনেক রকম ফুল। ভারতকে পাশে নিয়ে উন্নয়নের যে বার্তা ওবামা এদিন দিয়েছেন তাতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত সিরি ফোর্টে হাজির সবাই। শেষ করার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারতবাসীর ওপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস। ভারতের বন্ধু হিসেবে গর্ববোধ করি। সহযোগী হিসেবেও। এর পরেই ৩৫ মিনিটের ভাষণ শেষ করেন ‘জয় হিন্দ’ বলে। এর পরে মিশে যান দর্শকের ভিড়ে। আবহে তখন বাজছিল ‘লগন’ ছবির ‘মিতওয়া ও মিতওয়া তুঝকো ক্যায়া ডর হ্যায় রে...।’ তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে তিনি সস্ত্রীক সৌদি আরবের উদ্দেশে ভারত ত্যাগ করেন।
৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি
ভারত ছাড়ার আগে ঋণ ও বিনিয়োগ খাতে ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ওবামা। সোমবার ভারতের ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর তিনি রাতে যোগ দেন ইন্ডিয়া-ইউএস সিইও সামিটে। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেন। উল্লেখ্য, তিন দিনের ভারত সফরে গত রোববার রাজধানী নয়া দিল্লি পৌঁছেন বারাক ওবামা। প্রথা ভেঙে তাকে স্বাগত জানাতে পালাম বিমানবন্দরে নিজে গিয়ে হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপরই রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের মধ্যে আলোচনা জমে ওঠে। নরেন্দ্র মোদি তাকে খোলা প্রান্তরে বসিয়ে নিজ হাতে চা পান করান। ওবামা তার আতিথেয়তায় বার বারই মুগ্ধ হন। ওই দিন রাতে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি তাকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন। পরদিন সোমবার ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে বৃষ্টিভেজা সকালে গিয়ে হাজির হন রাজপথে। সেখানে সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজ দেখে বিমোহিত হন ওবামা। বার বার তিনি হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। তবে তিনি বেশি আনন্দ পেয়েছেন বিএসএফের সাহসী যোদ্ধাদের মোটরসাইকেলে দেখানো কসরত দেখে।
বাইক চালানো ছেড়ে দেবেন ওবামা
মোটরসাইকেল কসরত দেখে ওবামা বলেছেন, তিনি আর বাইক চালাবেন না। বিএসএফের ‘জানবাজ’দের পারফরমেন্স দেখে তিনি বলেন, এমন অবিশ্বাস্য অ্যাক্রোব্যাট দেখার পর আমি মোটরসাইকেল চালানো ছেড়ে দেব। এ কথা বলেছেন তিনি সোমবার রাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে। চলন্ত মটরসাইকেলে এমন পারফরমেন্স দেখে তিনি ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা অভিভূত।
No comments