আমার কোকো বলেই কেঁদে ওঠেন খালেদা
বেলা
১টা ৩০ মিনিট। আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের এম্বুলেন্সযোগে আরাফাত রহমান কোকোর
লাশ এসে পৌঁছে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে। একটি কালো
গাড়িতে করে এম্বুলেন্সের পেছন পেছন আসেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান ও দুই
মেয়ে জাফিয়া রহমান এবং জাহিয়া রহমান। কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া হাজারো
মানুষের ভিড় ঠেলে কার্যালরে ভেতরে এম্বুলেন্সটি প্রবেশ করাতে বেগ পেতে হয়।
ভিড় ঠেলেই কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
কার্যালয়ের উত্তরদিকের ফটক দিয়ে লাশবাহী এম্বুলেন্সটি ঢোকাতে প্রায় ১৫
মিনিট সময় লেগে যায়। ১টা ৪৮ মিনিটে এম্বুলেন্সে রাখা কফিন থেকে কোকোর মরদেহ
বের করা হয়। এসময় আরবি হরফে লেখা একটি চাদর দিয়ে কোকোর মরদেহ ঢেকে
কার্যালয়ের ভেতরে নেয়া হয়। তার মরদেহ কার্যালয়ের নিচতলার সংবাদ সম্মেলন
কক্ষে খয়েরি রঙের কফিনে রাখা হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর কার্যালয়ের দোতলা থেকে
দুই ভাইয়ের স্ত্রী নাসরিন সাঈদ ও কানিজ ফাতেমার কাঁদে ভর করে নিচে নেমে
আসেন খালেদা জিয়া। কফিনের ভেতর ছেলের নিথর দেহ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন
তিনি। নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। এরপর ‘আমার কোকো আমার কোকো’ বলেই
আদরের ছোট সন্তানের মুখ ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। শেষবারের মতো মমতাময়ী
মায়ের হাতের স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন প্রাণহীন ছেলের মুখে। এসময় খালেদা
জিয়াকে দুই পাশ থেকে ধরে রাখেন দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও কোকোর স্ত্রী। এরপর
কফিনের পাশে বসে দুই নাতনি জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন
তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এসময় পাশে বড় বোন সেলিনা ইসলাম, দুই
ভাইয়ের স্ত্রী, বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা
ইকবাল মান্দ বানু, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু এবং
কোকোর শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে কাঁদতে দেখা যায়। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে
কার্যালয়ের পরিবেশ। এরপর ছেলের কফিনের সামনে বসেই মোনাজাতে শরিক হন খালেদা
জিয়া। কিছুক্ষণ পর মায়ের সামনেই ছেলের কফিনটি ঢেকে দেয়া হয়। প্রায়
ঘণ্টাখানেক রাখার পর কফিনটি যখন কার্যালয় থেকে বের করে এম্বুলেন্সে তোলা হয়
তখন অঝোরে কাঁদতে থাকেন খালেদা জিয়া। দুই ভাইয়ের স্ত্রীর কাঁধে ভর করে
দরজায় দাঁড়িয়ে ছোট ছেলেকে শেষবিদায় জানান তিনি। যতক্ষণ ছেলের লাশবাহী
এম্বুলেন্সটি কার্যালয়ের ভেতরে ছিল ততক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন লাশবাহী এম্বুলেন্সের দিকে।
বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে জানাজার জন্য এম্বুলেন্সটি কার্যালয় থেকে বায়তুল
মোকাররম জাতীয় মসজিদের উদ্দেশে রওনা হয়। এরপর খালেদা জিয়াকে ধরাধরি করে
কার্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। আরাফাত রহমান কোকোর লাশ খালেদা জিয়ার
কার্যালয়ের নেয়ার পর সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অশ্রুসিক্ত নয়নে
খালেদা জিয়া যখন তার ছোট ছেলেকে শেষ বিদায় জানান তখন উপস্থিত
নেতাকর্র্মীদের অনেকের চোখ ছিল অশ্রুসজল। এর আগে কার্যালয়ের নিচতলার কক্ষে
আরবি হরফে লেখা একটি ব্যানার টানানো হয়। এছাড়া সকাল থেকে কার্যালয়ের ভেতরে
খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়, দলের সিনিয়র নেতা ও কার্যালয়ের কর্মকর্তা ছাড়া
কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পাশের কক্ষে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সিনিয়র ভাইস
প্রেসিডেন্ট অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম
রেজা, প্রচারণা ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ কাশেমীর
নেতৃত্বে সকাল থেকে কোরআন তেলাওয়াত করা হয়। এছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান
সেলিমা রহমান, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান
শিমুল বিশ্বাস, প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী মেজর (অব.) আবদুল মজিদ এবং
সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ওদিকে আরাফাত রহমান কোকোকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে সকাল থেকে কার্যালয়ের
সামনে ৮৬ নম্বর সড়কে ভিড় জমান দলীয় নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতা। বেলা দেড়টার
দিকে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে লাশ দেখার জন্য
নেতাকর্মীদের হুড়োহুড়ি লেগে যায়। এসময় উদ্দেশে শিমুল বিশ্বাস মাইকে
নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান এবং বায়তুল মোকাররমের জানায়
শরিক হওয়ার অনুরোধ করেন।
No comments