যৌথবাহিনীর হাতে আটকের পর শিবির নেতা নিহত
যৌথবাহিনীর
অভিযানে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার সোয়া ১৩ ঘণ্টা পর চাঁপাই নবাবগঞ্জে শিবির
নেতা আসাদুজ্জামান তুহিন মারা গেছেন। র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,
পালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক চাপায় তুহিন মারা গেছেন। তবে, নিহত তুহিনের পরিবার
দাবি করেছে র্যাব তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তুহিন হত্যার
প্রতিবাদে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের দাবিতে রাজশাহী
বিভাগের ৮ জেলায় আজ সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে শিবির।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাবের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর কামরুজ্জামান পাভেল জানান,
সোমবার তুহিনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে র্যাবের একটি দল। পরে মঙ্গলবার
ভোররাতে তাকে নিয়ে রামচন্দ্রপুর হাট এলাকায় ককটেল উদ্ধারে যাওয়ার সময় রাত
সোয়া ৩টার দিকে লালাপাড়া এলাকায় র্যাবের গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে
বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকচাপায় তুহিন আহত হয়। দ্রুত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর
হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তুহিনকে আটকের পর
নির্যাতন করা হয়নি। তুহিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চরমোহনপুর গ্রামের মো.
ইমদাদুল হকের ছেলে এবং সিটি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। পাশপাশি
কলেজ শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন। নিহত তুহিনের ভাই মুঠো ফোনে
মানবজমিনকে জানান, সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে তুহিনকে
গ্রেপ্তার করে র্যাব। তার সঙ্গে কোরবানির ঈদে ব্যবহৃত দু’টি ছোরা, কিছু
ফাইলপত্র ও ইলেকট্রিক কাজের সরঞ্জামাদি নিয়ে যায়। তিনি আরও জানান, তুহিনকে
থানায় সোপর্দ করা হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পরিবারের লোকজন রাত সাড়ে ১১টা
পর্যন্ত থানায় অবস্থান করেন। কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে থানায় সোপর্দ করা
হয়নি। পরে তারা লোকমুখে জানতে পারেন তুহিন ট্রাক চাপায় মারা গেছে। খবর পেয়ে
হাসপাতালে গিয়েও মরদেহ দেখার ভাগ্য হয়নি পরিবারের। এমনকি প্রথমে র্যাবের
অনুমতি ছাড়া সংবাদকর্মীদেরও লাশের কাছে যেতে দেয়া হয়নি। ঘণ্টা তিনেক
অপেক্ষা করে সকাল সোয়া ১১টার দিকে লাশের কাছে গিয়ে দেখা যায়, নিহত তুহিনের
দুই পায়ে ছেঁড়া ফোলার দাগ, দুই নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে এবং হালকা মুখম-লে
ফোলা রয়েছে। নিহত তুহিনের ভাই আসলাম আরও জানান, মানুষ খুন করতে বর্তমানে
র্যাব ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি
মো. আবু বাক্কার বলেন, শিবির নেতা তুহিন একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। তার
বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা কিংবা কোনও অভিযোগ নেই। র্যাব অন্যায়ভাবে
তুহিনকে গ্রেপ্তার করে হত্যা করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের আরএমও
ডা. সফিকুল ইসলাম জানান, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। রিপোর্ট
আসলে ময়নাতদন্ত শেষে বলা যাবে মৃত্যুর আসল কারণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল
থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জসিম উদ্দীন বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি
করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেনি। মামলা
হলে তদন্ত শেষে বলা যাবে মৃত্যুর কারণ।
No comments