বন্দুকযুদ্ধে নিহত সুলতানও ৩৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন
রাজধানীর রামপুরায় র্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত অপর যুবকের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তার নাম সুলতান আলী বিশ্বাস (৩৫)। তিনি একজন নির্মাণশ্রমিক। গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে সুলতানকে শনাক্ত করেন। স্বজনদের দাবি, কালামের মতো সুলতানও গত ৩৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। গত ২১শে ডিসেম্বর থেকে সুলতানের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত রোববার রাত পৌনে ৩টায় রামপুরার বনশ্রী এলাকায় র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই যুবক নিহত হয়। সোমবার আবুল কালাম নামে এক যুবককে শনাক্ত করে স্বজনরা। কালামের স্বজনদের দাবি, ২১শে ডিসেম্বর থেকে কালামও নিখোঁজ ছিল। তবে র্যাবের দাবি, নিহতরা দুষ্কৃতকারী। র্যাবের একটি চেকপোস্টে একটি গাড়িকে থামার সংকেত দিলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দুর্বৃত্তরা র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ওই দুই যুবক নিহত হয়। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের পোশাক, ওয়াকিটকি ও হাতকড়া উদ্ধার করা হয়। র্যাবের ধারণা, নিহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাত চক্রের সদস্য ছিল। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সাবিনা আক্তার নামে এক নারী সুলতানকে তার স্বামী হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ সত্যতা যাচাই করে দুপুরে সুলতানের লাশ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে। তবে একই ঘটনায় নিহত আবুল কালামের সঙ্গে সুলতান আলীর কোন সম্পর্ক ছিল কি না তা বলতে পারেননি স্বজনরা। আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা ছিল বলে তার স্বজনরা জানালেও সুলতানের স্বজনরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না। এমনকি সুলতান কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্তও ছিলেন না। তারপরও তিনি কেন নিহত হলেন- এ বিষয়টি জানা নেই তাদের। নিহতের স্ত্রী সাবিনা আক্তার জানান, গত ২০শে ডিসেম্বর রাতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাজীপুরের বাসা থেকে বের হন সুলতান। পরদিন সকাল সাড়ে ৭টায় সাবিনার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তার। তখন তিনি গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে ছিলেন। সাবিনা ফোনে তখন তাকে জানিয়েছিলেন তিনি অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। সুলতান বলেছিলেন, দু’দিন পরেই ফিরে আসবো। এসে ডাক্তারের কাছে যাব। তারপর থেকে সুলতানের ফোন বন্ধ। আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও সুলতানের কোন সন্ধান পাননি সাবিনা। সোমবার সকালে তার মোবাইলফোনে কল দিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জানান, সুলতানের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। মঙ্গলবার সকালে তিনি ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান। ঢামেক হাসপাতালে একমাত্র কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে আর্তনাদ করছিলেন সাবিনা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি জানতে চাই, আমার স্বামী কি অপরাধ করেছে। তার বিরুদ্ধে কোথাও কোন মামলা নেই। তাকে কেন এভাবে গুলি করে মারা হলো? রামপুরা থানার উপ-পরিদর্শক টিপু সুলতান জানান, সুলতানের বিরুদ্ধে কোন মামলা রয়েছে কি-না তা এখনও জানা যায়নি। তবে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সুলতান আলী বিশ্বাসের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলা শৈলকূপা থানার কুসুমবাড়ী গ্রামে। তার পিতার নাম হাশেম আলী বিশ্বাস। তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তাদের একমাত্র সন্তান সোহানা আক্তার গাজীপুরের কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তিনি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুরে থাকতেন। এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যায় একই ঘটনায় নিহত আবুল কালামের লাশ শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। কালাম ছিলেন একজন গাড়িচালক। নিহত আবুল কালামের বাড়ি ভোলা জেলা সদরের বাপতা গ্রামে। গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলার সানকির ট্যাগ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে তিনি ভাড়া থাকতেন।
No comments