আমার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হলো : সুজাতা সিং
বলব
না বলব না করেও ক্ষোভটা প্রকাশ্যে এনেই ফেললেন ভারতের সদ্য বরখাস্ত হওয়া
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং। অবসরের সাত্র সাত মাস বাকি থাকতে যে ভাবে
তাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হলো, তা নিয়ে শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন
তুললেন তিনি। বললেন, “আমার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হলো। এটার কি খুব দরকার ছিল?”
সুজাতার ক্ষোভ, গত আঠেরো মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই সব কাজ করে গেছেন তিনি। বিনিময়ে সেখান থেকে শুধুই নেতিবাচক মন্তব্যই শুনতে হয়েছে তাকে। এটা পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেন সুজাতা। জানান, দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের জন্য চেষ্টা করেও সেই সুযোগ পাননি তিনি। এবং সে কারণেও সুজাতা মনে করছেন, আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করা ছিল।
পরিকল্পনা অবশ্য একটা ছিলই। সেটা এখন আর গোপন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বক্তব্য অন্য কোনো মাপকাঠিতে নয়, কূটনীতিবিদ হিসেবে যে রেকর্ড রয়েছে জয়শঙ্করের, তাতেই তিনি এই পদের ‘অটোমেটিক চয়েস’। ৩১ তারিখই তার অবসর নেয়ার কথা ছিল। তার আগেই তাকে পররাষ্ট্রসচিব নিয়োগ করাটা জরুরি ছিল। সময়ের এই অঙ্ক মেলানোর চেষ্টাতেও সরতে হয়েছে সুজাতাকে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, এত দিন সুজাতার কাজে কোনো সমস্যা তৈরি করা হয়নি। ব্যাকরণ মেনে তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েই আগে থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তাকে। বরখাস্ত করা হয়নি, বরং পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আঠাশ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি সাংবাদিক বৈঠকে বসে আচমকাই বরখাস্ত করেছিলেন তখনকার পররাষ্ট্রসচিব এ পি বেঙ্কটেশ্বরনকে। সেই সংবাদ সম্মেলনে তখন খোদ সচিব উপস্থিত।
এ রকম কোনো অপমানের মধ্যে সুজাতাকে ফেলতে চাননি মোদি। আবার জয়শঙ্করের মতো দক্ষ কূটনীতিক ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়ে নিলে তাকে বিদেশসচিবের পদে আনার সুযোগ হাতছাড়া হতো মোদির। অতীতে যে সুযোগ মনমোহন সিংহকে হাতছাড়া করতে হয়েছিল, গান্ধি পরিবার তথা সরাসরি বললে সনিয়া গান্ধি সরকারের কাজে নাক গলানোয়। জয়শঙ্করকে দুই বছর আগেই পররাষ্ট্রসচিব পদে চেয়েছিলেন মনমোহন। জয়শঙ্করের যোগ্যতা নিয়ে মনমোহন এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে পররাষ্ট্রসচিব করতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সনিয়ার আপত্তিতে পেরে ওঠেননি। এত দিন পরে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই জয়শঙ্করকে শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিবের আসনে বসালেন মোদি।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদি। তার সঙ্গে জয়শঙ্করের ব্যক্তিগত রসায়নের একটি ইতিহাসও রয়েছে। ২০১২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর তখন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। সেখানে বেশ কিছ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আযোজনের ক্ষেত্রে জয়শঙ্করের তৎপরতায় মুগ্ধ হন মোদি। এক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য পররাষ্ট্রসচিবের এই সক্রিয়তা তখনই নজর কেড়েছিল মোদির। পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ধীরে ধীরে তার উপর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মোদির। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর এবং সদস্যসমাপ্ত প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামার সফরকে সফল করে তুলতে প্রবল সক্রিয় ছিলেন জয়শঙ্কর ও তার অফিস। মনমোহন জমানার শেষ দিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল। হিমঘরে চলে যাওয়া পরমাণু চুক্তি, প্রতিরক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কের যে অভাবনীয় উন্নতি গত চার মাসে দেখা যাচ্ছে, জয়শঙ্করই তার অন্যতম রূপকার বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
কিন্তু জয়শঙ্করের দীর্ঘ ছায়ায় নিজের যাবতীয় প্রয়াস আড়ালে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সুজাতা। সেই ক্ষোভই শুক্রবার উগরে দিয়েছেন তিনি। সুজাতার কথায়, “ওবামার সফরের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি আমরা পরিশ্রম করে তৈরি করেছি। আমার মন্ত্রণালয়ের অফিসাররা করেছেন। পরমাণু চুক্তি নিয়েও যথাসাধ্য পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সর্বদাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।” কেন এই নেতিবাচক মনোভাব? প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসারকে সুজাতা প্রশ্নও করেছিলেন এ নিয়ে। তার কথায় “উত্তরে বলা হয়েছিল যে এটা ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার কিছু নেই, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই নাকি এমনটা হয়ে থাকে!” সুজাতার দাবি, গত আট মাসে পররাষ্ট্রনীতিতে মোদি যে ঝড় তুলেছেন, তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ঢাক নিজে পেটান না বলে এবং ব্যক্তি নয় দলবদ্ধ কাজে বিশ্বাস করে এসেছেন বলে, তাকে দাম দিতে হলো।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
সুজাতার ক্ষোভ, গত আঠেরো মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই সব কাজ করে গেছেন তিনি। বিনিময়ে সেখান থেকে শুধুই নেতিবাচক মন্তব্যই শুনতে হয়েছে তাকে। এটা পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেন সুজাতা। জানান, দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের জন্য চেষ্টা করেও সেই সুযোগ পাননি তিনি। এবং সে কারণেও সুজাতা মনে করছেন, আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করা ছিল।
পরিকল্পনা অবশ্য একটা ছিলই। সেটা এখন আর গোপন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বক্তব্য অন্য কোনো মাপকাঠিতে নয়, কূটনীতিবিদ হিসেবে যে রেকর্ড রয়েছে জয়শঙ্করের, তাতেই তিনি এই পদের ‘অটোমেটিক চয়েস’। ৩১ তারিখই তার অবসর নেয়ার কথা ছিল। তার আগেই তাকে পররাষ্ট্রসচিব নিয়োগ করাটা জরুরি ছিল। সময়ের এই অঙ্ক মেলানোর চেষ্টাতেও সরতে হয়েছে সুজাতাকে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, এত দিন সুজাতার কাজে কোনো সমস্যা তৈরি করা হয়নি। ব্যাকরণ মেনে তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েই আগে থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তাকে। বরখাস্ত করা হয়নি, বরং পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। আঠাশ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি সাংবাদিক বৈঠকে বসে আচমকাই বরখাস্ত করেছিলেন তখনকার পররাষ্ট্রসচিব এ পি বেঙ্কটেশ্বরনকে। সেই সংবাদ সম্মেলনে তখন খোদ সচিব উপস্থিত।
এ রকম কোনো অপমানের মধ্যে সুজাতাকে ফেলতে চাননি মোদি। আবার জয়শঙ্করের মতো দক্ষ কূটনীতিক ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়ে নিলে তাকে বিদেশসচিবের পদে আনার সুযোগ হাতছাড়া হতো মোদির। অতীতে যে সুযোগ মনমোহন সিংহকে হাতছাড়া করতে হয়েছিল, গান্ধি পরিবার তথা সরাসরি বললে সনিয়া গান্ধি সরকারের কাজে নাক গলানোয়। জয়শঙ্করকে দুই বছর আগেই পররাষ্ট্রসচিব পদে চেয়েছিলেন মনমোহন। জয়শঙ্করের যোগ্যতা নিয়ে মনমোহন এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে পররাষ্ট্রসচিব করতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু সনিয়ার আপত্তিতে পেরে ওঠেননি। এত দিন পরে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই জয়শঙ্করকে শেষ পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিবের আসনে বসালেন মোদি।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদি। তার সঙ্গে জয়শঙ্করের ব্যক্তিগত রসায়নের একটি ইতিহাসও রয়েছে। ২০১২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর তখন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। সেখানে বেশ কিছ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আযোজনের ক্ষেত্রে জয়শঙ্করের তৎপরতায় মুগ্ধ হন মোদি। এক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য পররাষ্ট্রসচিবের এই সক্রিয়তা তখনই নজর কেড়েছিল মোদির। পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ধীরে ধীরে তার উপর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মোদির। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর এবং সদস্যসমাপ্ত প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামার সফরকে সফল করে তুলতে প্রবল সক্রিয় ছিলেন জয়শঙ্কর ও তার অফিস। মনমোহন জমানার শেষ দিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল। হিমঘরে চলে যাওয়া পরমাণু চুক্তি, প্রতিরক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কের যে অভাবনীয় উন্নতি গত চার মাসে দেখা যাচ্ছে, জয়শঙ্করই তার অন্যতম রূপকার বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর।
কিন্তু জয়শঙ্করের দীর্ঘ ছায়ায় নিজের যাবতীয় প্রয়াস আড়ালে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সুজাতা। সেই ক্ষোভই শুক্রবার উগরে দিয়েছেন তিনি। সুজাতার কথায়, “ওবামার সফরের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি আমরা পরিশ্রম করে তৈরি করেছি। আমার মন্ত্রণালয়ের অফিসাররা করেছেন। পরমাণু চুক্তি নিয়েও যথাসাধ্য পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সর্বদাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে।” কেন এই নেতিবাচক মনোভাব? প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসারকে সুজাতা প্রশ্নও করেছিলেন এ নিয়ে। তার কথায় “উত্তরে বলা হয়েছিল যে এটা ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার কিছু নেই, সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই নাকি এমনটা হয়ে থাকে!” সুজাতার দাবি, গত আট মাসে পররাষ্ট্রনীতিতে মোদি যে ঝড় তুলেছেন, তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের ঢাক নিজে পেটান না বলে এবং ব্যক্তি নয় দলবদ্ধ কাজে বিশ্বাস করে এসেছেন বলে, তাকে দাম দিতে হলো।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
No comments