চার শতাধিক গাছ ও টিলার মাটি লুট
(ভারতের
সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুর ও কালিকৃষ্ণনগর এলাকায়
টিলা ও গাছ কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার তোলা ছবি l প্রথম
আলো) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ভারত সীমান্তবর্তী আনন্দপুর ও
কালিকৃষ্ণনগর এলাকায় গড়ে ওঠা সামাজিক বনায়নের চার শতাধিক গাছ এবং
পার্শ্ববর্তী টিলার মাটি কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু প্রশাসন এ
ব্যাপারে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সামাজিক বনায়ন বিভাগ সূত্র ও
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৬-৯৭ সালে
বুড়িচংয়ের বাকশিমুল ইউনিয়নের আনন্দপুর ও কালিকৃষ্ণনগর গ্রামের প্রায় ৬৫
একর জমিতে সরকারের ৫৫ ভাগ ও এলাকাবাসীর ৪৫ ভাগ মালিকানার চুক্তিতে গড়ে ওঠে
সামাজিক বনায়ন। চুক্তির মেয়াদ অনুযায়ী প্রথম দফায় কিছু গাছ বিক্রি করা হয়।
২০০৭-২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় একই রকম চুক্তিতে ওই এলাকায় একাশিয়া,
মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগায় সামাজিক বনায়ন বিভাগ। গত এক সপ্তাহে
সেখান থেকে চার শতাধিক গাছ কেটে নেন কালিকৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম
ওরফে ধনু, খোকন মিয়া, লিটন মিয়া ও আবুল বাশার। ওই জমির পাশেই সরকারি টিলা।
গত নভেম্বর থেকে টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছেন বুড়িচংয়ের আনন্দপুর
গ্রামের আবদুল আলিম ও তাঁর অনুসারীরা। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক্টরে করে
সেখান থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা বন কর্মকর্তা
তমিজ উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া
অনুসরণ করবেন বলে নিশ্চিত করেন। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে,
টিলার বিস্তীর্ণ এলাকা কেটে ফেলা হয়েছে। সেখান থেকে মাটি কাটছেন শ্রমিকেরা।
এর পাশেই সামাজিক বনায়নের কয়েক শ গাছ কাটার চিহ্ন রয়েছে। বাকশিমুল ইউনিয়ন
পরিষদের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বনায়নের সভাপতি মো. নূরুল হক দাবি করেন,
আনন্দপুর ও কালিকৃষ্ণনগর এলাকার মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন
কালিকৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, খোকন, লিটন ও আবুল বাশার। এ ছাড়া
আনন্দপুর গ্রামের আবদুল আলিম ও তাঁর অনুসারীরা ওই টিলা ও আশপাশের এলাকা
থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। কয়েক দফা তাঁদের নিষেধ করা হলেও তাঁরা ওই কাজ
অব্যাহত রেখেছেন। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার খোকন, লিটন, আবুল বাশারের সঙ্গে
যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মনিরুল ইসলাম ও আবদুল আলিমের মুঠোফোনে দুই
দফা যোগাযোগ করে তা বন্ধ পাওয়া যায়। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, এঁরা সবাই
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যাঁরা গাছ কাটছেন তাঁদের মধ্যে
মনিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ করেন না। অন্যদের পরিচয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।’
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম নাজিম উদ্দিন বলেন,
সামাজিক ওই বনায়ন এবং টিলাকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র বানানোর জন্য ইতিমধ্যে
স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাছ উজাড় ও টিলা
কাটার ফলে ওই প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি জানার পর
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
No comments