অনন্য মুক্তি সংগ্রামী by উৎপল কান্তি ধর
বৃহত্তর জামালপুর অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী লড়াই-সংগ্রামের প্রবীণ নেতা, গণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক স্বদেশ নির্মাণের অন্যতম পুরোধা তৈয়ব আলী সরকার গত বছর ২৫ জানুয়ারি জামালপুরের ঝাউগড়ায় তার নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তৈয়ব আলীর জন্ম ঝাউগড়া গ্রামে, ১৯২০ সালে, এক কৃষক পরিবারে। পিতা আবদুল আজিজ সরকার, মা বাসজান বিবি। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে কৈশোরেই স্বদেশব্রতের চেতনা অঙ্কুরিত হয় তৈয়ব আলীর মনে। মানবমুক্তির সাধনায় ব্রতী জামালপুরের বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা যতীন সাহা। যতীন সাহার বাড়ি সরিষাবাড়ীতে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সূচনাপর্বে সাম্যবাদ-সমাজতন্ত্রের মতাদর্শ প্রচার, সংগঠন বিস্তার ও কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে ঝাউগড়া অঞ্চলকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তৈয়ব আলীর বাড়িতেই থাকতেন যতীন সাহা। যতীন সাহা যখন ঝাউগড়া অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন-সংগঠন গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হয়েছেন, তরুণ তৈয়ব আলী সে সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। জামালপুর শহরের সিংহজানী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হয়েছিলেন তিনি পিতার পরামর্শে। কৃষক আন্দোলনে তার সংশ্লিষ্টতা ক্রমে বাড়তে থাকায় এক সময়ে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ঝাউগড়া ও সংলগ্ন এলাকায় কৃষক আন্দোলন-সংগঠন এবং মানবমুক্তির মতাদর্শ সাম্যবাদ-সমাজতন্ত্রের প্রচারের কাজকর্মই হয়ে ওঠে তার ধ্যান-প্রাণ, তার সর্বক্ষণের কাজ।
'৫০-এর রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা রাখেন তৈয়ব আলী ও তার সঙ্গীরা। মানকী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বহু সংখ্যালঘু পরিবারের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে তার ঝাউগড়ার বাড়িটি। একইভাবে পাকিস্তানি কালপর্বে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের বহু নেতাকর্মীর আশ্রয়স্থল ছিল তার এই বাড়ি। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও রসদ জুগিয়েছেন তিনি। সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশেও অব্যাহত ছিল তার এই ভূমিকা। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মীরূপে তৈয়ব আলী ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে। রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি বিবিধ সামাজিক কাজকর্মেও সক্রিয় ছিলেন তৈয়ব আলী তার জীবনের প্রায় সবটা সময় ধরে। ঝাউগড়া অঞ্চলের জনগণের সমস্যা-সংকট মোচনে সচেষ্ট ও উদ্যোগী হয়েছেন তিনি সর্বসময়। এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন থেকে শুরু করে নানা কাজে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। আর ঝাউগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য এ ধরনের একটি কাজে উদ্যোগী হওয়ার কারণে ১৯৭৭ সালে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবাসও করতে হয় তাকে পুত্র জয়নাল আবেদীনসহ। মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে স্ত্রী জয়নব খাতুনকে হারানোর গভীর শোক সইতে হয়েছে তাকে। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন উদার, মানবতাবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত এক মানুষ। তার হৃদয়ে সর্বক্ষণ অনির্বাণ ছিল বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের আলোক শিখা। এই মুক্তি সংগ্রামীকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পরিচালক, মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর
'৫০-এর রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা রাখেন তৈয়ব আলী ও তার সঙ্গীরা। মানকী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বহু সংখ্যালঘু পরিবারের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে তার ঝাউগড়ার বাড়িটি। একইভাবে পাকিস্তানি কালপর্বে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের বহু নেতাকর্মীর আশ্রয়স্থল ছিল তার এই বাড়ি। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও রসদ জুগিয়েছেন তিনি। সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশেও অব্যাহত ছিল তার এই ভূমিকা। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্মীরূপে তৈয়ব আলী ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনে। রাজনৈতিক লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি বিবিধ সামাজিক কাজকর্মেও সক্রিয় ছিলেন তৈয়ব আলী তার জীবনের প্রায় সবটা সময় ধরে। ঝাউগড়া অঞ্চলের জনগণের সমস্যা-সংকট মোচনে সচেষ্ট ও উদ্যোগী হয়েছেন তিনি সর্বসময়। এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন থেকে শুরু করে নানা কাজে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। আর ঝাউগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য এ ধরনের একটি কাজে উদ্যোগী হওয়ার কারণে ১৯৭৭ সালে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবাসও করতে হয় তাকে পুত্র জয়নাল আবেদীনসহ। মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে স্ত্রী জয়নব খাতুনকে হারানোর গভীর শোক সইতে হয়েছে তাকে। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন উদার, মানবতাবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত এক মানুষ। তার হৃদয়ে সর্বক্ষণ অনির্বাণ ছিল বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের আলোক শিখা। এই মুক্তি সংগ্রামীকে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
পরিচালক, মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর
No comments