রাঙামাটিতে কেন মেডিক্যাল কলেজের বিরোধিতা

রাঙামাটিতে
মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন নিয়ে আতঙ্ক আর ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ শনিবার
মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের দিন এর বিরোধিতা করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা
অবরোধের মধ্যে সংঘর্ষের জের এখনো চলছে৷ জেলা প্রশাসন কারফিউ আর ১৪৪ ধারা
জারি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন৷ আর এরই মধ্যে অন্তত ৩৫ জন
পাহাড়ি আদিবাসীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ গণগ্রেপ্তারের আশঙ্কায়
আছেন পাহাড়িরা৷ ‘‘রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনে স্থানীয় মানুষের কোনো মতামত নেয়া হয়নি৷ আলোচনা করা হয়নি জেলা পরিষদ
বা আঞ্চলিক পরিষদের৷ যা ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন৷
এখানে এই দু'টি প্রতিষ্ঠান হলে শত শত পাহাড়ি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ হবে৷
তারা তাদের ভিটে মাটি হারাবেন,'' – এই অভিযোগ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামটি
জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমার৷ তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আগেই আমরা বিষয়টি সরকারকে
জানিয়েছি, স্মারক লিপি দিয়েছি৷ তারপরও শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনে
সরকার অনড় থাকায় আমরা শান্তিপূর্ণ অবরোধের ডাক দেই৷ আর সেই কর্মসূচিতে
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে রাঙামাটিকে অশান্ত করে তোলে৷''
বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা এখন কারফিউ এবং ১৪৪ ধারার মধ্যে আছি৷ রোববারের
কারফিউ সোমবার সকাল ১১টায় তুলে নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ আবার সোমবার
সন্ধ্যা থেকে কারফিউয়ের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ এর মধ্যেই গ্রেপ্তার
অভিযান চলছে৷ আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনো সময় গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু হতে
পারে৷'’ শনিবার মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধনের পরদিন রোববার বিকেলে ১১৪ ধারার
মধ্যেই রাঙামাটি বনরূপা বাজারে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ জেলা প্রশাসন বলছে, নানা
গুজব ছড়িয়ে এই সংঘর্ষে ইন্ধন দেয়া হয়৷ সংঘর্ষের সময় দোকানপাট ভাঙচুর এবং
আগুন দেয়া হয়৷ পাহাড়িদের অভিযোগ, চার-পাঁচজন মুখোশ পরা বাঙালি যুবক বনরূপা
বাজারের গিয়ে পাহাড়িদের মারধর শুরু করে৷ এ সময় পাহাড়িরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে
সংঘর্ষ শুরু হয়৷ আর এরপরই কারফিউ-এর ঘোষণা আসে৷ কেন মেডিক্যাল কলেজের
বিরোধিতা রাঙামাটির সাংবাদিক ছত্রং চাকমা বলেন, ‘‘পাহাড়ি আদিবাসীদের
মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের বিরোধিতার মূল কারণ উচ্ছেদ আতঙ্ক৷ এখন রাঙামাটি
শহরের জেনারেল হাসপাতালের পাশের একটি ভবনে অস্থায়ীভাবে মেডিক্যাল কলেজ
স্থাপন করা হলেও এর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে৷ আর তখন শত শত পরিবার উচ্ছেদ
হবে৷'' তিনি জানান, ‘‘রাঙামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ আগেই শুরু
হয়েছে৷ আর জমি অধিগ্রহণের জন্য এরই মধ্যে রাঙামাটি শহরের কাছে ক্ষেত্তা
এলাকায় বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দিয়েছে জেলা
প্রশাসন৷'' তিনি বলেন, ‘‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য এলাকায় এ
ধরনের কোনো কাজ করতে হলে তা জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন
সাপেক্ষে করার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি৷ ফলে পাহাড়িদের মনে সন্দেহ
দানা বাঁধছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘১৯৬০ সালে উন্নয়নের নামে শত শত পাহাড়ি
পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাদের জমি, বাড়ি-ঘর হুকুম দখল করা হয়৷'' পাহাড়ি ছাত্র
পরিষদের রাঙামটি জেলা সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘রাঙামাটিতে ভালো কোনো
প্রাইমারি বা হাই স্কুল নাই, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার চিত্র খুবই করুন৷
হাসপাতালে চিকিৎসক নেই৷ নার্সিং ইন্সটিউট চলছে না৷ এসবের উন্নয়ন না করে কেন
মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে, তা
অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ আইনে এই দু'টি
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হলে তাতে পাহাড়িরা তেমন সুযোগ পাবেনা৷'' তিনি
দাবি করেন, ‘‘এরই মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে ৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে৷ তার
মধ্যে পাহাড়ি মাত্র ৪/৫ জন৷'' বাচ্চু চাকমা বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই জেলা
পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে পাশ কাটিয়ে রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ বা
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে দেব না৷'' রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ
সামসুল আরেফিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জেলা প্রশাসন
সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ আর এজন্যই কারফিউ জারি করা হয়েছে৷ তিনি রবিবার
বনরূপা বাজারের সংঘর্ষের পর নতুন করে কোনো হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি
বলে তিনি জানান৷ তিনি আরও জানান, মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন সরকারের সিদ্ধান্ত এ
নিয়ে আমার কিছু বলার নেই৷ শনিবার ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে
রাঙামাটিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ টি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করেছেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷- ডিডব্লিউ।
No comments