রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ফুলেল শ্রদ্ধায় চাষী নজরুল ইসলামকে শেষ বিদায় by মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন
রাষ্ট্রীয়
মর্যাদা আর ফুলেল শ্রদ্ধায় চোখের জলে প্রিয় চাষী নজরুল ইসলামকে শেষ বিদায়
জানালো চলচ্চিত্র শিল্প। গতকাল সকাল সাড়ে দশটায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য
চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলামের নিথর দেহ শেষবারের মতো নিয়ে আসা হয় তার
প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে। অনেক আগে থেকেই সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে
অপেক্ষা করছিলেন তারই প্রিয় সহকর্মী, সতীর্থ, বন্ধু-স্বজন, অনুসারীরা।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য
সচিব মোরতুজা আহমেদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, নায়করাজ রাজ্জাক, কবরী, সুচন্দা,
ববিতা, ফারুক, উজ্জ্বল, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চল, চম্পা, বাপ্পারাজ, ওমর
সানি, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকি, ফেরদৌস, সম্রাট, আহমেদ শরীফ, মিশা সওদাগর,
প্রবীণ অভিনেতা মঞ্জুর হোসেন, একেএম বাহাউদ্দিন খান, আমজাদ হোসেনসহ প্রযোজক
পরিচালক শিল্পী কলাকুশলীদের প্রিয় মানুষকে শেষবারের মতো দেখার আকুলতার
অবসান ঘটিয়ে চাষী নজরুল ইসলামের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স এফডিসিতে প্রবেশ
করলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি
তাদের চারবারের সভাপতি চাষী নজরুল ইসলামকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ফুল
দিয়ে আচ্ছাদিত একটি মঞ্চ তৈরি করে রাখে। সেই মঞ্চে এনে রাখা হয় কফিন।
পুলিশের একটি চৌকস দল মুক্তিযোদ্ধা পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয়
মর্যাদা ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। পালন করে এক মিনিট নীরবতা। প্রথমেই
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি এবং তার পরপরই সংস্কৃতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান নূর ফুল দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক চাষী
নজরুল ইসলামকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক
পরিচালক সমিতি, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব লি. জাতীয় প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সংস্কৃতি সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, এফডিসির
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ, জাসাস,
জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র কলাকুশলী ফোরাম, জাতীয় চলচ্চিত্র কলাকুশলী লীগ,
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), বাংলাদেশের কালচারাল
রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিআরএ), ফিল্ম এডিটর গিল্ড, চলচ্চিত্র গ্রাহক
সংস্থা, সিডাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। প্রিয় মানুষ চাষী নজরুল ইসলামকে একনজর
দেখার জন্য আগ্রহী মানুষের ভিড় সামলাতে চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন সংগঠনের
নেতাদের হিমশিম খেতে হয়। শ্রদ্ধা জানানো শেষে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষে চাষী নজরুল ইসলামের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল
মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর নামাজে জানাজা শেষে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি
বিক্রমপুরের শ্রীনগরের সমষপুর গ্রামে। সেখানে বাদ আসর শেষবারের মতো নামাজে
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সামাজিক কবরস্থান বাবার কবরের পাশে চাষী নজরুল
ইসলামকে দাফন করা হয়। প্রিয় বন্ধু চাষী নজরুল ইসলামকে শেষ বিদায় জানিয়ে
নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, চাষী শুধু আমার বন্ধুই ছিল না, ছিল আমাদের
চলচ্চিত্রের অন্যতম একটি স্তম্ভ। তার এভাবে চলে যাওয়ায় চলচ্চিত্র শিল্পে যে
অভাব সৃষ্টি হয়েছে সেই অভাব কোনদিনই পূরণ হবে না। চাষীর মৃত্যুতে পুরো
চলচ্চিত্র শিল্প ভেঙে পড়েছে। আজ চলচ্চিত্রের বড়ই দুর্দিন। চাষীর মৃত্যু এই
দুর্দিনকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেবে। চাষী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি
‘দেবদাস’-এর পার্বতী কবরী বলেন, চাষী ছিল আমার ভাল বন্ধু। বন্ধু হিসেবে
আমরা দু’জন দু’জনার সব সময় কাছে ছিলাম। চাষীর অভাব কোনদিনই পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, চাষী যেখানেই থাকবে ভাল থাকবে। প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুচন্দা
বলেন, আমি যখন নায়িকা, চাষী নজরুল ইসলাম তখন সহকারী পরিচালক। সেই থেকেই
চাষী আমাদের পারিবারিক বন্ধু। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না চাষী নজরুল ইসলাম
আমাদের মাঝে নেই। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তারকা ববিতা বলেন, চাষী ভাই
ছিলেন আমাদের আত্মার আত্মীয়, পরিবারের একজন। অসম্ভব গুণী চাষী ভাইয়ের
সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল স্পষ্ট করে কথা বলা। যা বলতেন স্পষ্ট করেই বলতেন।
রাখঢাক করতেন না। চাষী ভাই আজ নেই, তার সেই দরাজ কণ্ঠ আর শুনতে পাবো না-
এসব ভাবতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে।
No comments