গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই পারে অস্থিরতার নিরসন করতে by কাজল ঘোষ
ফের
সন্ধিক্ষণে রাজনীতি। অনড় সরকার ও বিরোধীপক্ষ। রাজপথে মুখোমুখি দু’গ্রুপ।
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দেশজুড়ে। ২০১৩ সালের ২৯শে
ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কায়দায় ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের
বর্ষপূর্তিতেও সরকার আটকে দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের
কর্মসূচি। গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়াকে। অন্যদিকে সরকারপক্ষ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে সংবিধান রক্ষার বললেও
ঘোষণা দিয়েছে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার। রোববার বাণিজ্যমন্ত্রী
তোফায়েল আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০১৯ সালের আগে নির্বাচন নিয়ে কোনও
আলোচনা নয়। গতকাল সরকারের বর্ষপূর্তিতেও সরকারি দলের নেতারা বিএনপি’র
নির্বাচনে না আসার খেসারত তাদেরকেই দিতে বলেছেন। অন্যদিকে বিরোধী নেতারা
বলছেন, সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাব দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায়
অব্যাহত আন্দোলন, সংগ্রাম দেশের অর্থনীতিকে করছে ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাহত
হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। সংঘাতময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত সংলাপ
আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। সব দলের অংশগ্রহণে একটি
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনই বর্তমান অস্থিরতার নিরসন করতে পারে বলেও অভিমত
দিয়েছেন নাগরিক সমাজ।
ড. আকবর আলি খান: দু’পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে আলোচনা না করতে চাইলে উত্তেজনা থাকবেই। সংলাপ বা সমঝোতায় উদ্যোগ যে কেউ নিতে পারে। তবে সরকার আগ্রহী না হলে এ সংলাপে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। বর্তমানে একপক্ষ বিশেষত বিএনপির পক্ষে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারপক্ষ তা নাকচ করে দেয়ায় যে ধরনের সঙ্কট চলছে তা আরও বাড়বে। নাগরিক সমাজের চেষ্টা করেও কোন লাভ হবে না। কারণ, সরকারি দল আওয়ামী লীগ নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজকে বিশ্বাস করে না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সংলাপের আপাতত কোন সম্ভাবনা দেখছি না। শাসক দলের মন পরিবর্তন আর বিরোধী দলের মধ্যে সেই শক্তি দেখছি না। ক্রমাগত রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না হলে অব্যাহত রক্তক্ষরণ দেখতে পাচ্ছি। সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার কার্যকর কোন কারণ দেখছি না। দেশের ভেতরে মূল দ্বন্দ্ব হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে। তা বাস্তবায়নে যে ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি দরকার তারও অভাব বিদ্যমান রয়েছে। চলমান সঙ্কটে একদিকে সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগগুলো মার খাচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনীতিতে যে ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল তাও হোঁচট খাচ্ছে। দেশের গরিব মানুষ মারা যাচ্ছে। বর্তমান সঙ্কট নিরসনে নাগরিক সমাজের বক্তব্য শোনার কোন পক্ষেরই সময় দেখছি না। আর যেখানে বিরোধী দলের জন্য কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সেখানে নাগরিক সমাজ তো অনেক বেশি নিরীহ।
ড. ইমতিয়াজ আহমদ: বর্তমান সঙ্কটের সমাধান জরুরি। বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকেই পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই পার্টির দুই প্রধান ব্যক্তি উদ্যোগ নিলে সঙ্কটের দ্রুত সুরাহা সম্ভব। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ম রক্ষার। নিয়ম তো রক্ষা হয়েছে কিন্তু তারপর। এখন তো তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার যদি মনে করে পাঁচ বছরই এ অবস্থায় দেশ চালিয়ে যাবে; কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করবে না। হয়তো তারা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনই যদি হয় সমাধান- তাহলে এই ভোগান্তি কেন?
ড. বদিউল আলম মজুমদার: ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বড় দু’পক্ষের উসকানিমূলক কর্মসূচি বর্তমান সঙ্কটকে আরও জটিল ও ভয়াবহ করে তুলবে। আমরা আশা করি, উভয় পক্ষ উপলব্ধিতে আনবেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি জটিলতা ও জন-অসন্তোষ বিরাজ করছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান জরুরি। আমরা নাগরিকদের পক্ষে আশা করি, আমাদের রাজনীতিবিদরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।
ড. শাহদীন মালিক: বর্তমান অচলাবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি গণভোটের আয়োজন করতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল মামলায় গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। গণভোটের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন যোগসাজশ নেই। গণভোট দলীয় সরকারের অধীনেও হতে পারে। দু’দলের অনড় অবস্থান থেকে মুক্তি পেতে সংসদে আইন পাস করে গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করে দেখা যেতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে একটি যৌক্তি ও গণতান্ত্রিক সমাধান দেখতে পারি। দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে না পেলে সহিংসতা অবশ্যম্ভাবীভাবে বৃদ্ধি পাবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের দুটি আদালত কক্ষে যেটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। অতএব, উভয় প্রধান জোট যত অনমনীয় অবস্থায় থাকবে সঙ্কট আরও গভীর হবে এবং আশঙ্কা করছি সহিংসতাও বাড়বে।
মনজুরুল আহসান বুলবুল: বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপ দরকার। বিএনপির প্রস্তাবিত ৭ দফায়ও সংলাপের উপাদান রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন বা পুরো মেয়াদ শেষে যখনই নির্বাচন হোক আলোচনা করেই নির্বাচনে আসতে হবে। এখন বিএনপি নির্বাচনে আসেনি কিন্তু কাল যদি ১৪ দল ক্ষমতায় না থাকে তাহলে পরিস্থিতি একই থাকবে। আমাদের মতো দেশে নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের বা ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ। চারটি বিষয় সামনে রেখেই সংলাপ জরুরি- ১. নির্বাচনমুখী সকল দলই নির্বাচনে অংশ নেবে, ২. নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, ৩. নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক সকল দল মেনে নেবে এবং ৪. নির্বাচনের আগে বা পরে কোনও সহিংসতা হবে না। অথচ আমরা বরাবরই নির্বাচনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেখেছি যে দল পরাজিত হয়েছে সে দলই কখনই ফল মেনে নেয়নি। কাজেই সহিংসতা বা দমন কোনটাই চলমান সঙ্কটের সমাধান নয়।
নূরুল কবীর: ক্ষমতার জন্য দু’টি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ একে অপরের ওপর মতামত চাপিয়ে দিয়ে কোন সমাধান সম্ভব নয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং নির্বাচন কিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে তা এখনও অনিষ্পন্ন বিষয়। এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বা উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের না হওয়া পর্যন্ত সাংঘর্ষিক অবস্থা চলতেই থাকবে। এটা উভয় পক্ষের ক্ষমতার লড়াই। ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ হচ্ছে সংলাপ। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নিষ্পত্তি হলে হার মানতে হবে একপক্ষকে।
আসিফ নজরুল: বর্তমান সঙ্কটের উৎস হচ্ছে ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন। এ সঙ্কট গভীরতর হয়েছে আর এ বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার কারণে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। একই কারণে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনও দেশের সব মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটা সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। সরকার যখন দেখেছে বিরোধী দল তাদের বিপাকে ফেলতে পারছে না, তখনই তারা অবস্থান বদলে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন করা হচ্ছে, ভিন্নমতকে কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের এসব কার্যক্রমের বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে দেশজুড়ে অবরোধ আর সহিংসতা। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজন। তাহলেই অস্থিরতার আপাতত নিরসন হবে।
ড. আকবর আলি খান: দু’পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে আলোচনা না করতে চাইলে উত্তেজনা থাকবেই। সংলাপ বা সমঝোতায় উদ্যোগ যে কেউ নিতে পারে। তবে সরকার আগ্রহী না হলে এ সংলাপে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। বর্তমানে একপক্ষ বিশেষত বিএনপির পক্ষে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকারপক্ষ তা নাকচ করে দেয়ায় যে ধরনের সঙ্কট চলছে তা আরও বাড়বে। নাগরিক সমাজের চেষ্টা করেও কোন লাভ হবে না। কারণ, সরকারি দল আওয়ামী লীগ নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজকে বিশ্বাস করে না।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সংলাপের আপাতত কোন সম্ভাবনা দেখছি না। শাসক দলের মন পরিবর্তন আর বিরোধী দলের মধ্যে সেই শক্তি দেখছি না। ক্রমাগত রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন না হলে অব্যাহত রক্তক্ষরণ দেখতে পাচ্ছি। সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার কার্যকর কোন কারণ দেখছি না। দেশের ভেতরে মূল দ্বন্দ্ব হচ্ছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে। তা বাস্তবায়নে যে ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি দরকার তারও অভাব বিদ্যমান রয়েছে। চলমান সঙ্কটে একদিকে সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগগুলো মার খাচ্ছে, অন্যদিকে অর্থনীতিতে যে ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করেছিল তাও হোঁচট খাচ্ছে। দেশের গরিব মানুষ মারা যাচ্ছে। বর্তমান সঙ্কট নিরসনে নাগরিক সমাজের বক্তব্য শোনার কোন পক্ষেরই সময় দেখছি না। আর যেখানে বিরোধী দলের জন্য কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সেখানে নাগরিক সমাজ তো অনেক বেশি নিরীহ।
ড. ইমতিয়াজ আহমদ: বর্তমান সঙ্কটের সমাধান জরুরি। বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকেই পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নিতে হবে। দুই পার্টির দুই প্রধান ব্যক্তি উদ্যোগ নিলে সঙ্কটের দ্রুত সুরাহা সম্ভব। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ম রক্ষার। নিয়ম তো রক্ষা হয়েছে কিন্তু তারপর। এখন তো তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার যদি মনে করে পাঁচ বছরই এ অবস্থায় দেশ চালিয়ে যাবে; কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করবে না। হয়তো তারা চালিয়ে যেতে পারবে। তবে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনই যদি হয় সমাধান- তাহলে এই ভোগান্তি কেন?
ড. বদিউল আলম মজুমদার: ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বড় দু’পক্ষের উসকানিমূলক কর্মসূচি বর্তমান সঙ্কটকে আরও জটিল ও ভয়াবহ করে তুলবে। আমরা আশা করি, উভয় পক্ষ উপলব্ধিতে আনবেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি জটিলতা ও জন-অসন্তোষ বিরাজ করছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান জরুরি। আমরা নাগরিকদের পক্ষে আশা করি, আমাদের রাজনীতিবিদরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।
ড. শাহদীন মালিক: বর্তমান অচলাবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি গণভোটের আয়োজন করতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল মামলায় গণভোটের বিধান বাতিল করা হয়েছে। গণভোটের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন যোগসাজশ নেই। গণভোট দলীয় সরকারের অধীনেও হতে পারে। দু’দলের অনড় অবস্থান থেকে মুক্তি পেতে সংসদে আইন পাস করে গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাই করে দেখা যেতে পারে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে একটি যৌক্তি ও গণতান্ত্রিক সমাধান দেখতে পারি। দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে না পেলে সহিংসতা অবশ্যম্ভাবীভাবে বৃদ্ধি পাবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের দুটি আদালত কক্ষে যেটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। অতএব, উভয় প্রধান জোট যত অনমনীয় অবস্থায় থাকবে সঙ্কট আরও গভীর হবে এবং আশঙ্কা করছি সহিংসতাও বাড়বে।
মনজুরুল আহসান বুলবুল: বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপ দরকার। বিএনপির প্রস্তাবিত ৭ দফায়ও সংলাপের উপাদান রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন বা পুরো মেয়াদ শেষে যখনই নির্বাচন হোক আলোচনা করেই নির্বাচনে আসতে হবে। এখন বিএনপি নির্বাচনে আসেনি কিন্তু কাল যদি ১৪ দল ক্ষমতায় না থাকে তাহলে পরিস্থিতি একই থাকবে। আমাদের মতো দেশে নির্বাচনই ক্ষমতা বদলের বা ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ। চারটি বিষয় সামনে রেখেই সংলাপ জরুরি- ১. নির্বাচনমুখী সকল দলই নির্বাচনে অংশ নেবে, ২. নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন, ৩. নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক সকল দল মেনে নেবে এবং ৪. নির্বাচনের আগে বা পরে কোনও সহিংসতা হবে না। অথচ আমরা বরাবরই নির্বাচনের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেখেছি যে দল পরাজিত হয়েছে সে দলই কখনই ফল মেনে নেয়নি। কাজেই সহিংসতা বা দমন কোনটাই চলমান সঙ্কটের সমাধান নয়।
নূরুল কবীর: ক্ষমতার জন্য দু’টি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ একে অপরের ওপর মতামত চাপিয়ে দিয়ে কোন সমাধান সম্ভব নয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং নির্বাচন কিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে তা এখনও অনিষ্পন্ন বিষয়। এর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বা উভয় পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের না হওয়া পর্যন্ত সাংঘর্ষিক অবস্থা চলতেই থাকবে। এটা উভয় পক্ষের ক্ষমতার লড়াই। ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ হচ্ছে সংলাপ। শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নিষ্পত্তি হলে হার মানতে হবে একপক্ষকে।
আসিফ নজরুল: বর্তমান সঙ্কটের উৎস হচ্ছে ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন। এ সঙ্কট গভীরতর হয়েছে আর এ বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টার কারণে। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনও দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। একই কারণে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনও দেশের সব মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটা সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন। সরকার যখন দেখেছে বিরোধী দল তাদের বিপাকে ফেলতে পারছে না, তখনই তারা অবস্থান বদলে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাদের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন করা হচ্ছে, ভিন্নমতকে কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের এসব কার্যক্রমের বাই প্রোডাক্ট হচ্ছে দেশজুড়ে অবরোধ আর সহিংসতা। এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে সব দলের অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আয়োজন। তাহলেই অস্থিরতার আপাতত নিরসন হবে।
No comments