জনগণকে বিপদে ফেলে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি কাম্য নয় by আর কে চৌধুরী
সন্ত্রাস-সংঘাত কিংবা হরতাল-অবরোধ সভ্য
সমাজের রাজনীতির অনুষঙ্গ বলে বিবেচিত হতে পারে না। কিন্তু এর একটির সূত্র
ধরে আরেকটি জাতির ঘাড়ে যেভাবে চেপে বসছে, তা জনপ্রত্যাশার সঙ্গে
সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নেতিবাচক রাজনীতির কুপ্রভাব থেকে জাতিকে রক্ষার ক্ষেত্রে
সরকারের ব্যর্থতাও জনগণকে আহত করছে।
দেশবাসী চায় সুস্থ পরিবেশ। রাজপথে স্বচ্ছন্দে চলাফেরার অধিকার। জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এমনটিও তাদের কাম্য। সভ্য সমাজের প্রতিটি সরকার জনগণকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়।
সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। সরকারি দল ৫ জানুয়ারি দিনটিকে পালন করেছে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সংসদবহির্ভূত বিরোধী দলগুলো এটিকে পালন করেছে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে। সরকারি দল তাদের কর্মসূচি পালনে রাজধানীর ১৬টি পয়েন্টে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করে। সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিণতিতে সহিংসতার ঘটনা এবং জনদুর্ভোগ দেশের রাজনীতি সম্পর্কে জনমনে বিরাজমান সংশয় ঘনীভূত করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জনগণই হল রাজনীতির প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। রাজনীতির কাছে গণমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা আশা-আকাক্সক্ষার কোনো মূল্য আছে কি-না সে সন্দেহই জোরদার হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাজনীতি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করছে। এর অবসান হওয়া উচিত।
এটা মেনে নেয়া কঠিন হলেও সত্য- নিজেদের সভ্য দুনিয়ার অংশ হিসেবে ভাবার ক্ষেত্রে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কার্পণ্য রয়েছে। এ কার্পণ্যের বিষয়টি জাজ্বল্যমান হয়ে উঠেছে সংঘাতপ্রবণ রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়ানোর ক্ষেত্রে। ৫ জানুয়ারি সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পর বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধের ডাক দেশবাসীকে আতংকিত করে তুলেছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিণতিতে চারজনের প্রাণহানি ও ৩০০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বহীনতাকেই দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করেছে।
গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। স্বাভাবিক মৃত্যু মানুষের একটি সহজাত অধিকার। রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘাতে এ অধিকার হাতছাড়া হতে চলেছিল। নতুন বছরের শুরুতেই একের পর এক সহিংসতায় একদিকে যেমন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের যে আশা সৃষ্টি করেছিল, রাজনৈতিক সহিংসতা তা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকদেরই আত্মত্যাগে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের অবদান প্রাতঃস্মরণীয়। কিন্তু গত বছর নির্বাচন নিয়ে তারা যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তা দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের অবিমৃষ্যকারিতা কখনোই কাম্য হওয়া উচিত ছিল না। সরকার ও বিরোধী দল দুপক্ষই যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে, তা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট। এ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা নিছক জেদের কারণে। সরকার ও বিরোধী দলের আস্থার সংকট অতীতে রাজনীতিকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, কেউই তা থেকে শিক্ষা নেননি। বলা হয়, ইতিহাসের শিক্ষা হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া। আমরা মনে করি, দেশবাসীকে তারা মৃত্যু উপত্যকার দিকে ঠেলে দেয়ার যে বোকামি করছেন, তা কারও জন্যই মঙ্গল ডেকে আনবে না। নিজেদের স্বার্থেই সংঘাতের বদলে সমঝোতার পথে তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল পালনের অধিকার আছে। কিন্তু জনগণকে বিপদে ফেলে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিই কাম্য নয়। সরকারকেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমরা চাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটুক, মানুষ শান্তিতে, নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করুক। হরতালে যদি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে সেটাকে সফল বলা যায়। কিন্তু যদি অযৌক্তিকভাবে হরতাল ডেকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়, নিছক দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হরতাল ডাকা হয়, তাহলে সেটা মানুষ সমর্থন করবে না। দমনপীড়ন নয়, সহনশীলতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
দেশবাসী চায় সুস্থ পরিবেশ। রাজপথে স্বচ্ছন্দে চলাফেরার অধিকার। জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এমনটিও তাদের কাম্য। সভ্য সমাজের প্রতিটি সরকার জনগণকে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়।
সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের মানুষ। সরকারি দল ৫ জানুয়ারি দিনটিকে পালন করেছে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস হিসেবে। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সংসদবহির্ভূত বিরোধী দলগুলো এটিকে পালন করেছে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে। সরকারি দল তাদের কর্মসূচি পালনে রাজধানীর ১৬টি পয়েন্টে সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করে। সরকারি ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিণতিতে সহিংসতার ঘটনা এবং জনদুর্ভোগ দেশের রাজনীতি সম্পর্কে জনমনে বিরাজমান সংশয় ঘনীভূত করছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জনগণই হল রাজনীতির প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। রাজনীতির কাছে গণমানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা আশা-আকাক্সক্ষার কোনো মূল্য আছে কি-না সে সন্দেহই জোরদার হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় রাজনীতি সম্পর্কে জনমনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করছে। এর অবসান হওয়া উচিত।
এটা মেনে নেয়া কঠিন হলেও সত্য- নিজেদের সভ্য দুনিয়ার অংশ হিসেবে ভাবার ক্ষেত্রে আমাদের কর্তাব্যক্তিদের কার্পণ্য রয়েছে। এ কার্পণ্যের বিষয়টি জাজ্বল্যমান হয়ে উঠেছে সংঘাতপ্রবণ রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়ানোর ক্ষেত্রে। ৫ জানুয়ারি সরকার ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পর বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধের ডাক দেশবাসীকে আতংকিত করে তুলেছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পরিণতিতে চারজনের প্রাণহানি ও ৩০০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্বহীনতাকেই দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করেছে।
গত বছর রাজনৈতিক সহিংসতায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। স্বাভাবিক মৃত্যু মানুষের একটি সহজাত অধিকার। রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘাতে এ অধিকার হাতছাড়া হতে চলেছিল। নতুন বছরের শুরুতেই একের পর এক সহিংসতায় একদিকে যেমন হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে বিপর্যস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে অভ্যুদয়ের যে আশা সৃষ্টি করেছিল, রাজনৈতিক সহিংসতা তা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
আজকের বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে রাজনীতিকদেরই আত্মত্যাগে। দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের অবদান প্রাতঃস্মরণীয়। কিন্তু গত বছর নির্বাচন নিয়ে তারা যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তা দুর্ভাগ্যজনক। নিজেদের নাক কেটে অপরের যাত্রাভঙ্গের অবিমৃষ্যকারিতা কখনোই কাম্য হওয়া উচিত ছিল না। সরকার ও বিরোধী দল দুপক্ষই যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে, তা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট। এ নির্বাচন কীভাবে হবে তা নিয়ে একমত হতে পারেননি তারা নিছক জেদের কারণে। সরকার ও বিরোধী দলের আস্থার সংকট অতীতে রাজনীতিকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, কেউই তা থেকে শিক্ষা নেননি। বলা হয়, ইতিহাসের শিক্ষা হল ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া। আমরা মনে করি, দেশবাসীকে তারা মৃত্যু উপত্যকার দিকে ঠেলে দেয়ার যে বোকামি করছেন, তা কারও জন্যই মঙ্গল ডেকে আনবে না। নিজেদের স্বার্থেই সংঘাতের বদলে সমঝোতার পথে তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল পালনের অধিকার আছে। কিন্তু জনগণকে বিপদে ফেলে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিই কাম্য নয়। সরকারকেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। আমরা চাই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটুক, মানুষ শান্তিতে, নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করুক। হরতালে যদি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে, তাহলে সেটাকে সফল বলা যায়। কিন্তু যদি অযৌক্তিকভাবে হরতাল ডেকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়, নিছক দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য হরতাল ডাকা হয়, তাহলে সেটা মানুষ সমর্থন করবে না। দমনপীড়ন নয়, সহনশীলতা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
No comments