সংরক্ষিত বনে অবৈধ করাতকল by নজরুল ইসলাম
মধুপুর
গড়ে সংরক্ষিত বন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক অবৈধ করাতকল। সখিপুর,
ঘাটাইল, মধুপুর বনাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত অবৈধ করাতকলগুলো নিয়মিত
মাসোহারার বিনিময়ে পরিচালিত হচ্ছে। মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীদের অবৈধ করাতকল ও
কাঠ ব্যবসা পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন বন বিভাগেরই একশ্রেণীর অসাধু
কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে অবৈধ করাতকল ও কাঠ ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার
বাইরে। ঘাটাইল উপজেলার বন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন বিভাগের ধলাপাড়া
রেঞ্জের ৬টি বিটের আওতায় প্রায় ৫০টির বেশি অবৈধ করাতকল রয়েছে। তবে ঘাটাইল
পৌরসভার করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান মিয়া জানান, অবৈধ করাতকলের
সংখ্যা প্রায় শতাধিক। ধলাপাড়া, সাগরদীঘি, দেওপাড়া, গারোবাজার, মাকরাই,
ছনখোলা, বটতলা, নলমা, কুশারিয়া, পেচারআটা, মাইধারচালা, কাজলা এলাকায় এসব
অবৈধ করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। ঘাটাইলের মতো সখিপুর উপজেলার বন বিভাগের
১২টি বিটের আওতায় গড়ে উঠেছে অবৈধ ৫০ করাতকল। মধুপুর এলকায় এর সংখ্যা আরো
বেশি বলে জানান বন এলকার সাধারণ কাঠ ব্যবসায়ীরা। সংরক্ষিত শালগজারির বন
ঘেঁষে, সামাজিক বনায়নের ভেতর, এমনকি বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কাছেই এসব
অবৈধ কল স্থাপিত হয়েছে। ফলে ওই সব করাতকলে অবাধে চিরাই হচ্ছে শাল গজারিসহ
সামাজিক বনের কাঠ। বন বিভাগের ১০ কি.মি.র মধ্যে করাতকল স্থাপন করার
বিধিনিষেধ থাকলেও সখিপুরের কালিদাস বন কার্যালয়ের একশত গজ দূরে স্থাপিত
করাতকলে হরদম অবৈধভাবে বনের কাঠ চিরানো হচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।
মধুপুর উপজেলার মহিষমারা বিটের সামান্য দূরে গারোবাজার এলাকায় রয়েছে তিনটি
অবৈধ করাতকল। বন কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই এখানে দিনরাত চিরানো হচ্ছে
সংরক্ষিত বনের কাঠ। বন এলাকায় বসবাসকারীরা জানান, সখিপুরের বহেড়াতৈল
রেঞ্জের পাঁচটি বিটে ২৬টি, হাতিয়া রেঞ্জের পাঁচটি বিটে ১৭টি, বাঁশতৈল
রেঞ্জের দুটি বিটে সাতটি, মোট ৫০টি অবৈধ করাতকল রয়েছে। সখিপুর পৌরসভার
করাতকল মালিক সমিতির নেতারা জানান, টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও)
কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু এর কোন প্রতিকার নেই। কারণ, বন বিভাগের
লোকজনকে মাসোহারা দিয়েই চলে এসব করাতকল। সংরক্ষিত এলাকায় গড়ে ওঠা
করাতকলগুলো দেখে মনে হবে এগুলো যেন বেওয়ারিশ। সখিপুর পৌরসভার করাতকল মালিক
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ. মালেক মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘বন বিভাগের লোকজন
নিয়মিত চাঁদা নিয়ে চালাচ্ছেন অবৈধ কলগুলো। ফলে সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ
করলে অথবা পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকলেও তা কখনও
উচ্ছেদ হয় না।’ টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের খান
জানান, ‘অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে।’ শিগগিরই বন
বিভাগের ভিতরে স্থাপিত অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
No comments