কী হবে কেউ জানে না
কী
হবে কেউ জানে না। দুই পক্ষই মুখোমুখি। যুদ্ধংদেহী মনোভাব। এক পক্ষ বলছে
অবরোধ চলতেই থাকবে। আরেক পক্ষ বলছে কেয়ামত পর্যন্ত সংলাপ নয়। দু পক্ষেরই
টার্গেট একটাই। ক্ষমতা। একপক্ষ চাইছে ক্ষমতায় যেতে। আরেকপক্ষের লক্ষ্য
ক্ষমতা ধরে রাখা। আতঙ্ক দু পক্ষেই। নিশ্চিহ্ন হওয়ার আতঙ্ক।একপক্ষ ভাবছে
ক্ষমতায় না থাকলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। আরেকপক্ষ ভাবছে ক্ষমতায় না যেতে পারলে
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ভাগ হয়ে গেছে দেশের মানুষ। কেউ যেন আর মানুষ নয়। কেউ
আওয়ামী লীগার, কেই বিএনপি। এক অপরের জানি দুষমন। একপক্ষ আরেকপক্ষকে শেষ করে
দেয়ার জিঘাংসায় মেতেছে। কী দুর্ভাগ্য এই জাতির। এক ভাষা। চেহারাও একই রকম।
বেশিরভাগ মানুষের একই ধর্ম। এরপরও এতো বিভক্তি, এতো হানিহানি। যারা আমাদের
বিভক্তি করার এই ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে করেছে তারা সফল। চূড়ান্তভাবে
বিজয়ী। বিএনপি অবরোধ চালিয়ে যাবে। এরপর হরতাল আসবে। আসবে অবরোধ। তারা
মরণকামড় দিতে মরিয়া। দলটি মনে করছে এবার ব্যর্থ হলে আর রক্ষা নেই। কিন্তু
কতদিন তারা এটি চালাবে কিংবা চালাতে পারবে তা বিএনপি জানে না। দলটি দীর্ঘ
১৩ বছর আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। রাজনৈতিক লড়াইয়ে তারা অভ্যস্ত নয়। এরপরও
নেমেছে। কিন্তু নেতারা নামেননি।এ কারণে নামেনি কর্মীরা। অন্তত রাজধানীর
ব্যাপারে এ কথা তো বলাই যায়।তাহলে কীভাবে তারা সফল হবে? বিএনপি হয়তো তাদের
বিশাল জনসমর্থনের কথা ভাবছে। এই ভাবনা ঠিক আছে। কিন্তু কর্মী-সমর্থকরা আগে
মাঠে নামবে- নাকি নেতারা? নেতারা না নামলে কর্মীরা কেন নামবে? এ প্রশ্নের
জবাব দলের কাছে নেই। দলের তৃণমূলের কমিটি নেই। ছাত্রদলের অবস্থা লেজেগোবরে।
মিডিয়া নেই । নেই কোনো প্রেশার গ্রুপ।নেই কার্যমকরী বিশ্বস্ত নেতার। তাহলে
কিভাবে কী করবে বিএনপি? দলের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকট। অমিত শাহ টেলিফোন,
মার্কিন কংগেসম্যানদের কথিত বিবৃতি দলটির যোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে
দিয়েছে। দলের নিষ্ক্রিয় নেতারা কী ভাবছেন? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের ভাবনা
একটাই-আন্দোলন যেমনে চলছে এমনটি চললেও সরকার বেকায়দা পড়তে বাধ্য। আর এর
মধ্যেই ‘একটা কিছু’ ঘটে যাবে। এই ‘একটা কিছু’র অপেক্ষায় এখন বিএনপি। তবে
অমিত শাহর টেলিফোন, কংগ্রেসম্যানদের কথিত বিবৃতি যে দলটির জন্য কোনো ফল বয়ে
আনবে না-এটা বিএনপি বুঝলে হয়তো ‘একটা কিছু’ হতে পারে। ক্ষমতা ছাড়বো,
সংলাপে বসবো না-এটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মূলমন্ত্র। সবকিছু আমাদের
নিয়ন্ত্রণে। কাজেই কাউকে পাত্তা দেয়ার দরকার নেই। পুলিশ আমাদের, আর্মি
আমাদের, আমলা আমাদের, মিডিয়া আমাদের, সুশীল সমাজ আমাদের- সব আমাদের। আওয়ামী
লীগের এই মনোভাব সত্য। কিন্তু জনগণ কাদের-সেটি ভাবছে না আওয়ামী লীগ।
জনগণকে বাদ দিয়ে ক্ষমতায় হয়তো কিছুদিন থাকা যায়। কিন্তু পরিণতি ভালো হয় না
তা সবার জানা। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়াটিই দুস্তর। আওয়ামী লীগও
তাই করছে। প্রতিটি দিন যাচ্ছে আর দলটির জনসমর্থন কমছে। বিশেষ করে নিরপেক্ষ
ভোটাররা বিএনপির দিতে ঝুঁকছে। বিদেশী মিডিয়াও এটি বলছে। আর এ কারণে
নির্বাচনকে ভয় আওয়ামী লীগের। সিটি, পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে দল বিষয়টি
প্রত্যক্ষ করেছে। নির্বাচন এখন দলটির জন্য আতঙ্ক। সময়ক্ষেপণ এখন আওয়ামী
লীগের কর্মসূচি। তাদের পরিকল্পনা হলো, সময় যাবে, বিএনপি নিঃশেষ হবে। নিঃশেষ
করে দেয়া হবে।এই ধরনের চিন্তা যে নিজেরই ধ্বংস ডেকে আনে তা ক্ষমতায় থাকলে
টের পাওয়া যায় না। কেউ পায় না। এরশাদ পায়নি। বিএনপিও পায়নি। আওয়ামী লীগও
পাচ্ছে না। মিডিয়ায় তারেক নিষিদ্ধ। মিডিয়ায় লাইভ নিষিদ্ধ। টকশোতে
অংশগ্রহণকারীদের আগেই বলে দেয়া হচ্ছে- রয়ে সয়ে বলবেন। কোনো সরকার যখন
আতঙ্কে থাকে, পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে থাকে-তখন ওই সরকার এমনটি করে।
এটি জানতে গবেষণার প্রয়োজন নেই। অতীতে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। অবরোধ
চলছে, অবরোধ চলছে না। যেটাই হোক, দেশের অবস্থা যে পেছনে হাঁটছে সেটা তো
সত্য। রাজধানীতে ৬০ টাকার নিচে সবজি নেই। ময়মনসিংহে মুরগীর কেজি ১০০ টাকা
থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম এভাবে বাড়ছে।
ব্যবসা নেই। ভবিষ্যৎ নেই। স্বপ্ন নেই। আছে দুঃস্বপ্ন। আমরা হতাশ জাতিতে
পরিণত হচ্ছি। আর একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য হতাশার মতো কার্যকরী আর
কিছু নেই। বিভেদ, সহিংসতা, বিদ্বেষ, হানাহানি আর দুঃস্বপ্নই কি এই জাতির
নিয়তি?
No comments