অনশনে বসবেন এরশাদ
দেশে
বর্তমানে মহাদুর্যোগ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বলেছেন, এ দুর্যোগ মানে বন্যা বা সাইক্লোন নয়। তার
চেয়েও বড় দুর্যোগ। দেশ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে। দেশকে রক্ষা করতে হলে
আসুন সবাই এক টেবিেল বসি। আগামী দিনে রাজনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে আলোচনা
করি। শনিবার রাজধানীর ভাটারা এলাকায় জাতীয় পার্টি আয়োজিত শান্তি সমাবেশে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চলমান সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও
অরাজকতা বন্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টি এ শান্তি সমাবেশের
আয়োজন করে। এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ এখন অসুস্থ রাজনীতির শিকার। আমরা
রাজনীতিবিদরা সবাই অসুস্থ। অসুস্থ রাজনীতিকে সুস্থ করতে আগে আমাদের সবার
চিকিৎসা দরকার। সরকার জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে এরশাদ
বলেন, সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় শপথ গ্রহণ করে জানমালের দায়িত্ব তাদের। আজ
কত মানুষের জানমাল চলে যাচ্ছে দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি না। সংসদে দাঁড়িয়ে
বক্তৃতা দিচ্ছি। কিন্তু জানমালের দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। তাদের লজ্জাও
করছে না। আমাদের সামনে একটাই লক্ষ্য কি করে ক্ষমতায় থাকা যায়। অথচ মানুষের
নাভিশ্বাস উঠেছে। শ্রমজীবীরা কিভাবে বাঁচবে সেই চিন্তা করছে। একটাই কথা
সামনে কি হবে। এ দেশ আমরা চাইনি। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিবর্তন আনতে
হবে। বর্তমান সঙ্কট নিরসনে সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় কনভেনশন আয়োজনের আহ্বান
জানিয়ে এরশাদ বলেন, আমি সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করেছিলাম এবং চিঠি
দিয়েছিলাম আসুন সবাই একসঙ্গে বসি। আলোচনা করি আগামীতে রাজনীতি কিভাবে চলবে,
রাজনৈতিক সংস্কৃতি কিভাবে চলবে। আমরা কি মানুষ জ্বালিয়ে ক্ষমতায় থাকবো।
দেশ ধ্বংস করে ক্ষমতায় থাকবো, না শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবো। আপনারা আসুন
এক সঙ্গে বসি, কথা বলি কিভাবে আগামী দিনের রাজনীতি পরিচালিত হবে সে বিষয়ে
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ’৯০ সালে
প্রতিহিংসার রাজনীতি সৃষ্টি করেছিলেন বেগম জিয়া। সেই দাবানল আজ বিশাল
অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। এরশাদকে সবচেয়ে গণতন্ত্রী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন,
সরকার মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে বিএনপির আন্দোলন।
এই দুই দল থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি এসএম
ফয়সাল চিশতীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ
হান্নান এমপি, সুনীল শুভ রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া,
যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন বাবুল, নুরুল ইসলাম নুরু, জাতীয় ছাত্রসমাজ সভাপতি
সৈয়দ ইফতেখার আহসান হাসান প্রমুখ। রাজনৈতিক সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও,
দমন-নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও
ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য
জানান। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টি রাজধানীর কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের
সামনে মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এ প্রতীকী গণ-অনশন কর্মসূচি
পালন করবে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচিতে এরশাদ নেতৃত্ব দেবেন। বাবলা
বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো ধরনের সহিংস রাজনীতি বিশ্বাস করে না। বর্তমানে
দেশে রাজনীতির নামে জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতা আর দমন-নিপীড়ন চলছে। এ সহিংস
রাজনীতি বন্ধ করার জন্য আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান দুই দফা শান্তি সমাবেশ
করেছেন। একই সঙ্গে আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদও এ সব বন্ধ
করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।
No comments