‘এখন আমার সব শ্যাষ’
(ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নতুন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ব্যক্তিরা l ছবি: প্রথম আলো) তীব্র
জ্বালা-যন্ত্রণায় চিৎকার করে চলেছেন মো. খোকন। মুখ পুড়ে প্রায় অঙ্গার।
সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। এক বছরের উনাইশাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা
মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ঢুকলেন স্ত্রী রত্না। স্বামীর মুখের দিকে তাকালেন
একবার। আর পারেননি। অন্যদিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি।
মায়ের কান্নায় অঝোরে কাঁদতে থাকল কিছু বোঝার বয়স না হওয়া শিশু উনাইশাও।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দেখা গেছে
এই পরিবারটির করুণ অসহায়ত্বের দৃশ্য। গুলিস্তানের ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন
খোকন। প্রতিদিনের মতো জুতা বিক্রি করে বাসযোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের
বাসায় ফিরছিলেন। পেট্রলবোমায় খোকনের শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গেছে। তাঁর
চিৎকারে পুরো বার্ন ইউনিটে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। পিঠ বুলিয়ে
দোয়া-দরুদ পড়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বোন সালমা আক্তার।
খোকনের আহাজারি দেখে কাঁদতে থাকেন আশপাশে থাকা অন্য দগ্ধদের স্বজনেরাও।
স্বামীর আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে
শিশুসন্তানকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন স্ত্রী রত্না। কাঁদতে কাঁদতে
খোকনের স্ত্রী রত্না প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের একমাত্র মেয়ে উনাইশার বাঁ
পা জন্মগতভাবে একটু বাঁকানো। কিছুদিন পর ঢাকা মেডিকেলেই তার অস্ত্রোপচার
হওয়ার কথা। এ জন্য কিছু টাকাও জমিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। এখন স্বামী লড়ছে
মৃত্যুর সঙ্গে। রত্না বলেন, ‘এখন আমার সব শ্যাষ হইয়া গেছে।’
No comments