১৪ বছর অনশন করা শর্মিলাকে ফের গ্রেপ্তার
১৪
বছর ধরে অনশন চালিয়ে যাওয়া মানবাধিকার কর্মী আয়রম শর্মিলাকে আবারও
গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। আদালতের নির্দেশে মুক্তি পাবার কয়েক ঘণ্টা
পর তাকে আবারও আটক করে পুলিশ। মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা
জানিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। আয়রম শর্মিলা ‘মণিপুরের আয়রন
লেডি’ নামে পরিচিত। ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে
অসহিংস ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে তিনি সুপরিচিত। বহু বছর ধরে তিনি জেল হাজতে
কাটিয়েছেন। ৪২ বছর বয়সী আয়রম শর্মিলাকে বৃহসপতিবার মণিপুর রাজ্যের রাজধানী
ইম্ফলের একটি আদালত মুক্তির নির্দেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে খাবার না খেয়ে
আত্মহত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ ছিল। তবে পরের দিনই একই অপরাধে তাকে জেল
হাজতে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় পুলিশ প্রধান জলজিত জানিয়েছেন, একই
অপরাধ, অর্থাৎ আত্মহত্যা চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত
পাঁচ মাসে শর্মিলা দু’বার মুক্তি পেয়েছেন, আবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। গত
আগস্টে মণিপুরের আরেকটি আদালত তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল। তখন আদালত
বলেছিলেন, তার অনশন ধর্মঘট ছিল বৈধ উপায়ে রাজনৈতিক দাবি। মানবাধিকার সংগঠন
অ্যামনেস্টি বলেছে, শর্মিলাকে আবারও আটক করার ঘটনাটি অযৌক্তিক, যা ভারতের
ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়াকে উপহাস করার শামিল। মানবাধিকার কর্মী সমীর বাবু
এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনশন ধর্মঘট কোন আত্মহত্যা প্রচেষ্টা নয়। এটি আসলে
দুর্বোধ্য যে, কেন একই অভিযোগে শর্মিলাকে কর্তৃপক্ষ বারবার আটক করছে, যে
অভিযোগ থেকে আদালত তাকে মুক্তি দিয়ে আসছে। প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের নভেম্বর
থেকে শর্মিলা অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তিনি দাবি করেছিলেন, মণিপুরে নিজের
বাড়ির কাছে একটি বাস-স্টপেজে সেনাবাহিনীর হাতে ১০ ব্যক্তিকে হত্যা করার
ঘটনা চাক্ষুস করেছিলেন তিনি। এ ঘটনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভয়াবহ আর্মড
ফোর্সেস সেপশাল পাওয়ার অ্যাক্ট-এর অধীনে ঘটানো হয়েছিল। ভারতের
উত্তর-পূর্বের বড় অংশ ও কাম্মীরে এ আইন বলবৎ রয়েছে। এ আইনের ক্ষমতাবলে ওই
অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনী অনুসন্ধান, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে প্রবেশ ও
দেখামাত্র গুলি করতে পারে। এ আইনটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার
একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে ভারতীয়
সরকার বলেছিল, আত্মহত্যা প্রচেষ্টাকে অপরাধের আওতামুক্ত করা হবে। তবে ওই
আইন এখনও পাস হয়নি।
No comments