দোয়ারাবাজারে জুমগাঁও পাহাড়ে তীব্র পানি সঙ্কট! by মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জুমগাঁও পাহাড়ে তীব্র শীত ও পানি সঙ্কটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। পৌষের শুরু থেকে অভাব-অনটন আর নানা রোগবালাই লেগেই আছে এখানকার ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী গারোদের। তীব্র শীত ও ঘন কোয়াশা উপেক্ষা করে সূর্য ওঠার আগেই আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমাতে হয় সীমানার ওপারে। সারা দিন পাহাড়ে কাজ করে সন্ধ্যায় আশ্রয় নেয় নিজেদের শেষ ঠিকানায়। তার পরও শান্তিতে নেই এখানকার দরিদ্রপীড়িত মানুষজন। সীমান্ত এলাকায় দেশের মাটিতে আত্মকর্মসংস্থানের কোন সুবিধা না থাকায় পাহাড়ই তাদের কর্মের একমাত্র ভরসা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে পাল্টে গেছে এখানকার আদিবাসীর জীবনচিত্র। একসময় গারোরা এপার-ওপারে বাধাহীন চলাচল করতে পারলেও তাদের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে এখন সীমানার কাঁটাতারের বেড়া। প্রতি বছর শুকনো মওসুমে ওই পাহাড়ে দেখা দেয় পানির তীব্র সঙ্কট। এ সময় ঘরের রান্নাবান্না, গোসলসহ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আদিবাসীদের। ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ছোট নালা-নর্দমার ময়লাযুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয় তাদের। প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নালার পানি ব্যবহারের ফলে নানা রোগবালাই যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। বাংলাদেশের একেবারে জিরো পয়েন্টে বসবাস করায় তারা এসব সুবিধা থেকে রয়েছে বঞ্চিত। শিশু, নারী, বৃদ্ধদের নেই প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। একদিকে পাহাড়ে ‘আকাল’ অন্যদিকে হাঁড় কাপানো শীতের মধ্যে বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে আদিবাসীরা। ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে চেরা পুঞ্জির নিকটবর্তী উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জুমগাঁও পাহাড়ে ৩৫ গারো পরিবারের বসবাস। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সুউচ্চ টিলার আঁকাবাকা সরু রাস্তা পাড়ি দিয়ে ভারতের সীমানায় গোসলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবহারে নালার ময়লাযুক্ত পানি সংগ্রহ করছে নারীরা। পাহাড়ের নীলিমা দাংগো (৪৫) বলেন, বাবুরে আমরার খবর নেয় কে। থাকি পাহাড়ে, খেয়ে না খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছি আর কি! এলিও বাবু (৫৫) বলেন, পানি নাই, খাবার নাই, কাজ নাই পাহাড়েও যেতে পারি না। পরিণত বয়সে উপনীত হয়ে দুর্গতির কথা কি আর বলা লাগে। চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবে বলছিলেন ‘ইশ্বর আমাদের কপালে এ রকমই লিখেছিলেন হয়তো’। মিশনারী স্কুলের শিক্ষিকা রেবেকা হাওয়াই বলেন, জুমগাঁও এ শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত মানুষজন এখন নানা সমস্যায় জর্জড়িত। অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধরা ভুগছে সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত নানা রোগবালাইয়ে। এখানে গারোদের সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই বলেও জানান তিনি।
No comments