উৎকণ্ঠায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী by নুর মোহাম্মদ
ফের
লণ্ডভণ্ড শিক্ষাসূচি। আগামী এক সপ্তাহের মাথায় ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু
হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বিরোধী জোটের টানা
অবরোধ কবে শেষ হবে এ নিয়ে কোন আগাম তথ্য মিলছে না। অন্যদিকে রাজনৈতিক
কর্মসূচি থাকলেও যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়। এমন অবস্থায় গভীর দুশ্চিন্তায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অন্যদিকে শিক্ষাবছর শুরু হলেও প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত
শিক্ষাসূচি ভেঙে পড়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে
হচ্ছে না ক্লাস-পরীক্ষা। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মানবজমিনকে
বলেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার সময় অবরোধ প্রত্যাহার না করলে তা হবে বিএনপি
জোটের দ্বৈতনীতি। কারণ গত বুধবার ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষায়
হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়। যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আমি আশা করি
দেশের বৃহত্তম পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের বাইরে রাখা হবে। যদিও পরীক্ষার সময়ে
কর্মসূচির বিষয়ে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত স্পষ্ট কোন ঘোষণা আসেনি।
এই অবস্থায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শষ্কা, অবরোধের কারণে কেন্দ্রে আসতে
না পারলে শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী
এবং তাদের লাখ লাখ অভিভাবক এ আশঙ্কার মধ্যেই সময় পার করছেন। ঢাকা শিক্ষা
বোর্ডের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর মানবজমিনকে বলেন,
ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহ পরীক্ষা নেয়া একটি ট্র্যাডিশন হয়েছে। এটি পেছানোর
কোন সুযোগ নেই। অবরোধেও মধ্যে পরীক্ষা হবে। তবে কোন বিভাগ ও জেলায় যদি
আলাদা করে হরতাল ডাকে তবে সেখানে পরীক্ষা স্থগিত করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের যাই হোক এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ীই পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। অবরোধের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার বেশিরভাগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা জানানোর পাশাপাশি এ সময়ে সব ধরনের কর্মসূচি বন্ধ রাখার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন কর্মসূচি বন্ধ করা না হলে প্রশাসন সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৭০-৭৫ ভাগ পরীক্ষার সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৯শে জানুয়ারির মধ্যে বাকি বোর্ডগুলোর প্রশ্নপত্রও বাকি সরঞ্জামাদি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
গত রোববার শিক্ষামন্ত্রণালয় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নির্বিগ্নে করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের লক্ষ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থাও নিতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার সরঞ্জামী নির্বিগ্নে নিতে রেলপথ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে পৃথক পত্র নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এতে কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার দিনই উত্তরপত্র এবং ওএমআর ফরমসহ গোপনীয় কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডগুলোতে যাতে পাঠানো যায়, সে জন্য এগুলো ডাকঘরে বা রেলস্টেশনে না পৌছা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান নিজে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) আলাদা পত্র দিয়েছেন। এতে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৮ দফা নির্দেশনা রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এত কিছুর পরও অভিভাবকতের মনের শঙ্কা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় কাটছে না। অভিভাবকরা জানান রাস্তায় যেভাবে হাতবোমা, আগুন সহিংসতার হয় কারণে এই পরীক্ষা নির্বিগ্নে করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী কোন ক্ষতি হয়ে গেলে এর দায়ভার কে নেবে? এসব অনিশ্চিয়তার মধ্যে চলছে শেষ সময়ে প্রস্তুতি। পরীক্ষা দরজায় নক করলেও তাদের মনে বিরাজ করছে নানা অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হওয়া না হওয়া মধ্যেই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এছাড়া আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইএইচএসসি পরীক্ষা।
পুরো শিক্ষাসূচিতে অবরোধের প্রভাব: শুধু এসএসসি নয় অবরোধে ছাপ পড়েছে পুরো শিক্ষাসূচিতে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে বেশিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও নিয়মিত ক্লাস শুরু করতে পারেনি। টানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারনে ক্লাস-পরীক্ষা দুটিই চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আর গত ৬ই জানুয়ারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেল পরীক্ষা শুরু হলেও হরতালে কারণে গত বুধবারের ঢাকা ও খুলনা বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ভর্তি প্রক্রিয়া। এছাড়া প্রায় সারা বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন না কোন পরীক্ষা লেগেই থাকে। থাকে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসও। টানা অবরোধে এসবই এখন চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। গত ৬ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা কর্মসূচি কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে ৫ কোটি শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৩ই জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া সদস্যরা বলেন, এভাবে টানা কর্মসূচি চলতে থাকলে পাবলিক পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত করতে দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। অন্যদিকে শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষে হোঁচট সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। অভিভাবকরা বলছেন, যেভাবে যাত্রীবাহী বাসে আগুন পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, চোরাগোপ্তা হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, বোমা হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারি না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী। দেশের কয়েকটি স্থানে ককটেল, পেট্রল বোমায় দু’জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এ পরিস্থিতি সন্তানদের নিরাপত্তায় কথা চিন্তা করে স্কুলে পাঠাচ্ছে না অভিভাবকরা। নতুন শিক্ষাবর্ষের ১৪ দিন কেটে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি। স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে নিয়মিত ক্লাস পর্যন্ত নেয়া যাচ্ছে না।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল দু’বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার একটু আগে ক্লাসসহ শিক্ষাকার্যত্রুম শুরু করা হলেও ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে শেষ দিক শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরত চলেছে ২০১৪ সালে পুরো বছর। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গেল বছর ছুটির দিনেও ক্লাস পরীক্ষা নিয়েছেন তারা। তারপরও সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে এ বছরের শুরু থেকে ক্লাস শুরু করেও তা পারেনি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে কঠোর অবস্থানের মধ্যে শুরু হয়ে চলছে টানা অবরোধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক, ইবতেদায়ী, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সংগঠনটির চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতারা দায়ী। জাতি গঠনের মুল শক্তি লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে দুটি জোট। তিনি বলেন, আমরা এ অপ-রাজনীতির অবসান চাই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের যাই হোক এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ীই পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। অবরোধের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার বেশিরভাগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। যথাসময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা জানানোর পাশাপাশি এ সময়ে সব ধরনের কর্মসূচি বন্ধ রাখার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন কর্মসূচি বন্ধ করা না হলে প্রশাসন সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ মানবজমিনকে বলেন, সারা দেশে প্রায় ৭০-৭৫ ভাগ পরীক্ষার সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৯শে জানুয়ারির মধ্যে বাকি বোর্ডগুলোর প্রশ্নপত্রও বাকি সরঞ্জামাদি পাঠিয়ে দেয়া হবে।
গত রোববার শিক্ষামন্ত্রণালয় আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নির্বিগ্নে করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের লক্ষ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থাও নিতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার সরঞ্জামী নির্বিগ্নে নিতে রেলপথ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে পৃথক পত্র নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এতে কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার দিনই উত্তরপত্র এবং ওএমআর ফরমসহ গোপনীয় কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডগুলোতে যাতে পাঠানো যায়, সে জন্য এগুলো ডাকঘরে বা রেলস্টেশনে না পৌছা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান নিজে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) আলাদা পত্র দিয়েছেন। এতে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৮ দফা নির্দেশনা রয়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এত কিছুর পরও অভিভাবকতের মনের শঙ্কা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় কাটছে না। অভিভাবকরা জানান রাস্তায় যেভাবে হাতবোমা, আগুন সহিংসতার হয় কারণে এই পরীক্ষা নির্বিগ্নে করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী কোন ক্ষতি হয়ে গেলে এর দায়ভার কে নেবে? এসব অনিশ্চিয়তার মধ্যে চলছে শেষ সময়ে প্রস্তুতি। পরীক্ষা দরজায় নক করলেও তাদের মনে বিরাজ করছে নানা অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হওয়া না হওয়া মধ্যেই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এছাড়া আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক বা এইএইচএসসি পরীক্ষা।
পুরো শিক্ষাসূচিতে অবরোধের প্রভাব: শুধু এসএসসি নয় অবরোধে ছাপ পড়েছে পুরো শিক্ষাসূচিতে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে বেশিভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও নিয়মিত ক্লাস শুরু করতে পারেনি। টানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারনে ক্লাস-পরীক্ষা দুটিই চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আর গত ৬ই জানুয়ারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেল পরীক্ষা শুরু হলেও হরতালে কারণে গত বুধবারের ঢাকা ও খুলনা বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ভর্তি প্রক্রিয়া। এছাড়া প্রায় সারা বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন না কোন পরীক্ষা লেগেই থাকে। থাকে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসও। টানা অবরোধে এসবই এখন চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। গত ৬ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা কর্মসূচি কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারছেন না। এ অবস্থায় চরম উৎকণ্ঠায় পড়েছে ৫ কোটি শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৩ই জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া সদস্যরা বলেন, এভাবে টানা কর্মসূচি চলতে থাকলে পাবলিক পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত করতে দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। অন্যদিকে শুরু হওয়া শিক্ষাবর্ষে হোঁচট সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। অভিভাবকরা বলছেন, যেভাবে যাত্রীবাহী বাসে আগুন পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, চোরাগোপ্তা হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, বোমা হামলা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারি না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী। দেশের কয়েকটি স্থানে ককটেল, পেট্রল বোমায় দু’জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এ পরিস্থিতি সন্তানদের নিরাপত্তায় কথা চিন্তা করে স্কুলে পাঠাচ্ছে না অভিভাবকরা। নতুন শিক্ষাবর্ষের ১৪ দিন কেটে গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়নি। স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে নিয়মিত ক্লাস পর্যন্ত নেয়া যাচ্ছে না।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল দু’বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার একটু আগে ক্লাসসহ শিক্ষাকার্যত্রুম শুরু করা হলেও ফের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে শেষ দিক শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরত চলেছে ২০১৪ সালে পুরো বছর। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গেল বছর ছুটির দিনেও ক্লাস পরীক্ষা নিয়েছেন তারা। তারপরও সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে এ বছরের শুরু থেকে ক্লাস শুরু করেও তা পারেনি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে কঠোর অবস্থানের মধ্যে শুরু হয়ে চলছে টানা অবরোধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক, ইবতেদায়ী, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সংগঠনটির চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, আজকের এই পরিস্থিতির জন্য রাজনৈতিক নেতারা দায়ী। জাতি গঠনের মুল শক্তি লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে দুটি জোট। তিনি বলেন, আমরা এ অপ-রাজনীতির অবসান চাই।
No comments